ডুবতে বসেছে পাটশিল্প

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জীবন-রহস্য আবিষ্কারে একদিকে বাংলাদেশ পাটের আন্তর্জাতিক নায়ক। অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যের সংকটে রফতানি বাজার ধসে পড়ায় দেশে আবারো পাট নৈরাশ্যের নিশানা। সরকার এ সংকটকে ক্ষণস্থায়ী মনে করলেও ব্যবসায়ী ও উদ্যেক্তারা বলছেন, রফতানি বাজারের সংকটে পাট নিয়ে স্বপ্নভঙ্গের ধ্বংসস্তূপে কৃষক, রফতানিকারক ও শিল্পমালিকরা।

সরকারি ও বেসরকারি সূত্র বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে কাঁচা পাট রফতানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫০ শতাংশ হ্রাস পাবে। পাট ও চটের বস্তায় কমপক্ষে ২৫ ও সুতায় ৫ শতাংশ রফতানি কমবে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) জুলাই-আগস্টের তথ্য রফতানি বাজারের এ প্রবণতাকেই সমর্থন করছে।

সংস্থাটি সূত্রে জানা গেছে, গত অর্থবছরের (২০১২-১৩) জুলাই ও আগস্টের তুলনায় চলতি বছরের (২০১৩-১৪) একই সময়ে কাঁচা পাট রফতানি কমেছে ৪৭ দশমিক ২১ শতাংশ। এছাড়া পণ্য রফতানির লক্ষ্য থেকে পিছিয়ে রয়েছে ৬৬ দশমকি ৪৯ শতাংশ। আবার বস্তা ও চটের রফতানি কমেছে ২৪ দশমিক ২ শতাংশ। পণ্যটির রফতানি লক্ষ্যের মাত্র অর্ধেক অর্জন সম্ভব হয়েছে। আর পাটের সুতা ও দড়ি রফতানি পিছিয়ে আছে লক্ষ্যমাত্রা থেকে ১৪ দশমিক ৩১ শতাংশ।

দেশের পাটজাত পণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার মধ্যপ্রাচ্যের সিরিয়া, তুরস্ক, ইরান ও লিবিয়া। আবার লিবিয়া থেকে বাংলাদেশী পাটপণ্য রফতানি হতো আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে। এসব দেশের রাজনৈতিক সংকট পাটশিল্পের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। রফতানি কমায় বিপাকে শিল্পের সঙ্গে জড়িত উদ্যোক্তারা। পাশাপাশি হুমকিতে রয়েছে এ শিল্পে জড়িত প্রায় ৩০ লাখ মানুষ ও কয়েক লাখ কৃষক।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি সাব্বির ইউসূফ বলেন, ত্রিমুখী সংকটে দেশের পাটশিল্প। মধ্যপ্রাচ্য সংকট ও বিশ্বমন্দার প্রভাবের পাশাপাশি ডলারের বিপরীতে রুপির দরপতনের কারণে কাঁচা পাট ও পাটজাত পণ্যের রফতানি কমেছে। রুপির দরপতনে ভারতীয় পাট ও পাটজাত পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পেরে উঠছেন না বাংলাদেশের রফতানিকারকরা।

পাটের সুতা ও দড়ি: গত অর্থবছরে পাটের সুতা ও দড়ি রফতানি হয় ৫০ কোটি ৬৭ লাখ ডলারের। ওই অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে রফতানি ছিল ৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার। কিন্তু চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে তা ২ দশমিক ৩৩ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ২০ লাখ ডলারে।

মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও ভারতীয় রুপির দরপতনই এজন্য দায়ী বলে মনে করেন জুট ডাইভার্সিফাইড প্রডাক্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শহিদুল হক হেলাল।

কাঁচা পাট: গত অর্থবছরে ২২ কোটি ৯৯ লাখ ডলারের কাঁচা পাট রফতানি হয়। ওই বছরের প্রথম দুই মাসে রফতানি ছিল ২ কোটি ৬৩ লাখ ডলার। কিন্তু চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে তা কমে দাঁড়ায় ১ কোটি ৩৯ লাখ ডলার। বাংলাদেশ জুট অ্যাসোসিয়েশন (বিজেএ) ও আন্তর্জাতিক বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ডব্লিউজিসি সূত্রে জানা গেছে, দেশের কাঁচা পাটের সিংহভাগই রফতানি হয় ভারত, পাকিস্তান ও চীনে। এছাড়া ব্রাজিল, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও আইভোরিকোস্টেও কাঁচা পাট রফতানি হয়।

মধ্যপ্রচ্য সংকট ও রুপির দরপতনের পাশাপাশি রফতানি কমার অন্যতম আরেকটি কারণ বাজেটে উেস করারোপ— এমন মন্তব্য করে বিজেএর সচিব আবদুল কাইয়ুম বলেন, মন্দার সময় বাজেটে উেস করারোপ উদ্যোক্তাদের নিরুত্সাহিত করছে।

পাটের বস্তা ও চট: গত অর্থবছরে ২৩ কোটি ৭৪ লাখ ডলারের পাটের বস্তা ও চট রফতানি হয়। এর মধ্যে প্রথম দুই মাসে রফতানি ছিল ৩ কোটি ৩১ লাখ ডলার। কিন্তু চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে তা কমে হয়েছে ২ কোটি ৫১ লাখ ডলার।

পাটশিল্পের বর্তমান সংকট নিরসনে মন্ত্রণালয় গুরুত্বসহকারে কাজ করছে উল্লেখ করে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আবদুল লতীফ সিদ্দিকী বলেন, এজন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ ও পরিকল্পনাও নেয়া হচ্ছে। রফতানিতে নগদ প্রণোদনা, পাটজাত পণ্য রফতানিতে বাজার বহুমুখীকরণ ও দেশের অভ্যন্তরে পাটজাত পণ্যের ব্যবহার বাড়ানোরও চেষ্টা করা হচ্ছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫