৩ কোটি টাকা দৈনিক রাজস্ব ক্ষতি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সারাদেশে সড়ক মহাসড়কে চলছে ৬ লাখ ২০ হাজারটি ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক। এতে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) ও সিটি করপোরেশনের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। ফলে প্রতিদিন গড়ে ৩ কোটি ১ লাখ টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। কর্তৃপক্ষের কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় দিন দিন বাড়ছেই এ অবৈধ যানবাহন। সম্প্রতি এসব যান প্রত্যাহার করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

বৈদ্যুতিক ব্যাটারিচালিত রিকশা বা ইজিবাইক চালাতে প্রতিদিন প্রতি গাড়িতে ব্যাটারি চার্জ দিতে ৫ ইউনিট করে বিদ্যুৎ খরচ হলে ৬ লাখ ২০ হাজার রিকশা ও ইজিবাইকের জন্য ৩১ হাজার ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হয়। আর ব্যাটারি চার্জ করা হয় সাধারণত গ্রিড থেকে চোরাই লাইনে। ফলে প্রতি ইউনিটের দাম গড়ে ৫ টাকা হিসাবে প্রতিদিন ৩ কোটি ১ লাখ টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

২০০৮ সাল থেকে কতিপয় প্রতিষ্ঠানের নামে মধ্যস্বত্বভোগী এক শ্রেণীর মানুষ রিকশায় বৈদ্যুতিক মোটর ব্যবহারের মাধ্যমে ইঞ্জিনবিহীন হালকা যানবাহন হিসেবে রাস্তায় নামিয়েছে। পরোক্ষভাবে এগুলোতে প্রচুর বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হচ্ছে। অথচ যানগুলো অবৈধ। এমনিতেই প্রয়োজনের তুলনায় বিদ্যুতে উৎপাদন ও বণ্টনে ঘাটতি রয়েছে। এভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহারের ফলে ঘাটতি বাড়ছে, দুর্ভোগ পোহাচ্ছে সাধারণ মানুষ।

২০০৮ সালে ঢাকা নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইকের সংখ্যা ৩ হাজার ১০১টি। বর্তমানে ঢাকা শহরে ২০ হাজার আর সারাদেশে এর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ লাখে। বিআরটিএ ও সিটি করপোরেশন থেকে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় এসব যানবাহন পুলিশের ছত্রছায়ায় চলাচল করার সুযোগ পায়।

২০১২ সালের ১০ জানুয়ারি প্রথম রিকশা-ভ্যান মালিক শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যাটারিচালিত অটোবাইক ও রিকশা চলাচল বন্ধের দাবি ওঠে এবং পুলিশ কমিশনারের কাছে চিঠিও দেয়া তারা। এতে কাজ না হওয়ায় পরিষদের মালিকানাধীন রিকশাগুলোকে ব্যাটারিচালিত রিকশায় পরিণত করার অনুমতি চেয়ে ২০১২ সালে ২৫ জানুয়ারি যোগাযোগ মন্ত্রী বরাবরে আবেদন করে।

সে সময় পুলিশ প্রশাসন থেকে বলা হয়, ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলে সরকারের সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আছে। প্রশাসন থেকে আরও বলা হয়, এসব গাড়ি কোথায় কোথায় তৈরি করা হয় এবং কোন কোন প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে তাদের নাম ও ঠিকানা প্রশাসনের কাছে দিলে প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। সে মোতাবেক নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন শো রুমের ঠিকানাসহ একটি তালিকা ২০১২ সালের ২৯ জানুয়ারি প্রশাসনের কাছে সরবরাহ করা হলেও এখনো পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

অভিযোগ রয়েছে, পুলিশ প্রশাসনের ছত্রছায়ায় টোকেন বাণিজ্যের মধ্যেমে প্রকাশ্যে তেজগাঁও, উত্তরা, উত্তরখান, দক্ষিণখান, বিমানবন্দর, খিলক্ষেত, বাড্ডা, গুলশান, মিরপুর, পল্লবী, খিলগাঁও, শ্যামপুর, তুরাগ, মোহাম্মদপুর, আদাবর, যাত্রবাড়ী, কদমতলী, ডেমরা, কেরানীগঞ্জ, মুগদা, কামরাঙ্গীরচরসহ সারাদেশের বিভিন্ন এলাকায় অবাধে এসব অবৈধ যান চলাচল করছে।

এ ব্যাপারে রিকশা-ভ্যান মালিক সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব মো. ইনসুর আলী বলেন, ‘আমরা অবৈধ এসব যানবাহন চলাচল বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করেছি। গত ২৪ জুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রী বরাবর স্বারকলিপি দিয়েছি। কিন্তু কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।’

তিনি আরো বলেন, ‘সর্বশেষ গত বছর ৮ জুলাই প্রধানমন্ত্রীকেও স্মারকলিপি দিয়েছি। এসব যানবাহন ইঞ্জিনবিহীন হওয়ায় বিআরটিএ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। সিটি করপোরেশনও নির্বিকার।’

এ সুযোগে ঢাকা শহরে পুলিশের বাণিজ্য বেড়ে গেছে। প্রতি গাড়ি থেকে এক হাজার টাকা হারে টোকেন বাবদ মাসে দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

এসব অভিযোগে ঢাকা সিটি করপোরেশনের উপ-প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা (বাজার সার্কেল দক্ষিণ) ইউসুফ আলী সরদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ সম্পর্কে কথা বলতে রাজি হননি।

এরপর শফি আহম্মেদ নামে এক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, নতুন এসেছেন তাই এ সম্পর্কে কিছুই জানেন না। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দক্ষিণের এক উচ্চমান সহকারী স্বীকার করেন, সিটি করপোরেশন থেকে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ার ফলে এসব অবৈধ যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কিন্তু বিআরটিএর এক কর্মকর্তা পুরো দায়টা সিটি করপোরেশনের ওপর চাপালেন। তিনি বলেন, ‘এ যানবাহনগুলো আমাদের এখতিয়ারভুক্ত নয়। ইঞ্জিনচালিত হলে বিআরটিএ ব্যবস্থা নিতে পারতো। এটা সম্পূর্ণ সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব। তারাই একটা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।’

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের ন্যাশনাল অ্যাডভোকেসি অফিসার মারুফ রহমান এ ব্যাপারে বলেন, ‘এখন থেকেই করপোরেশনকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে: আসলে ব্যাটারিচালিত রিকমা চলবে কি না। যেভাবে এর সংখ্যা বাড়ছে, তাতে এক সময় কথা উঠবেই। অনেক টাকা বিনিয়োগ হচ্ছে। যাত্রীদের পক্ষ থেকে নানা অভিযোগ উঠবে। এখন থেকেই সুষ্ঠু ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।’

তবে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী এ ধরনের যান বন্ধ করে দেয়ার পক্ষপাতি নন। তিনি জানান, সৌরবিদ্যুৎ দিয়েই এগুলো চলবে। এর আধুনিকায়নের সরকার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।

তিনি আরো জানান, বিদ্যুতের ব্যবহার বন্ধে ব্যাটারিতে কারিগরি পরিবর্তন আনা হবে। এছাড়া পাইলট প্রকল্পের আওতায় পাঁচ বিভাগে পাঁচটি সৌরবিদ্যুৎচালিত ব্যাটারি চার্জিং স্টেশন বসানো হবে। এসব স্টেশন থেকে ইজিবাইকে চার্জ দিতে হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫