বাংলাদেশি তাড়ানোর খবর জানেন না পররাষ্ট্র সচিব

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ ভারতের তথাকথিত অবৈধ বাংলাদেশিদের চিহ্নিত করে বিতাড়িত করার কাজ শুরু করতে যাচ্ছে বিজেপির নরেন্দ্র মোদি সরকার। এ ক্ষেত্রে তারা পশ্চিমবঙ্গের বদলে আসামসহ উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে। শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গের আনন্দবাজার পত্রিকা এ খবর জানিয়েছে।

তবে এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক। শুক্রবার সন্ধ্যায় বাংলামেইলের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপকালে বিষয়টি জানা গেল।

ভারতীয় জাতীয় লোকসভা নির্বাচনের আগে নরেন্দ্র মোদির ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ তাড়ানোর ঘোষণায় পররাষ্ট্র সচিব বাংলামেইলকে বলেছিলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন নই। কোনো বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে ভারত সরকার কী ভূমিকা নেয় তা আগে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। যদি এমনটা ঘটার কোনো সম্ভবনা দেখা দেয় তখন দু’দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে আলোচনা করে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান হতে পারে।’ আনন্দবাজার পত্রিকার খবরের বিষয়টি পররাষ্ট্র সচিব জানেন না, তাই কোনো মন্তব্য করতেও রাজি হননি।

এদিকে, ভারতের পত্রিকাটি বলছে, ‘অনুপ্রবেশকারীদের’ ফেরত পাঠানোর কাজে তাড়াহুড়ো করতে চাইছে না নরেন্দ্র মোদির সরকার। ধীরে সুস্থে এবং সবদিক বিবেচনা করেই এগুতে চাইছে তারা। সামান্য ভুলের কারণে কেউ যেন হেনস্থা না হন সে বিষয়টি নিশ্চিত করতেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তথাকথিত অবৈধ বাংলাদেশিদের চিহ্নিত করে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি নরেন্দ্র মোদির নির্বাচনী ‘প্রতিশ্রুতির’ মধ্যে ছিল। তাই ক্ষমতায় আসার পর পরই এ নিয়ে পরিকল্পনা শুরু করেছেন তিনি। তবে পশ্চিমবঙ্গ নয়, অবৈধ বাংলাদেশিদের খুঁজে বের করার কাজটি তারা আসাম থেকেই শুরু করতে যাচ্ছেন। আসামে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের চিহ্নিত করতে ১৯৭১ সালের ভোটার তালিকার ভিত্তিতে নতুন করে ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেনস বা জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন তৈরির কাজ শুরু করছে দিল্লি সরকার। সেই তালিকা দেখেই ১৯৭১ সালের পর থেকে কারা বাংলাদেশ থেকে আসামে এসে বসবাস শুরু করেছেন তা চিহ্নিত করা হবে।

এরপর তাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া নিয়ে চিন্তাভাবনা করবে ভারত। নির্বাচনী প্রচারণায় পশ্চিমবঙ্গে গিয়েও ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের’ ফেরত পাঠানোর কথা বলেছিলেন নরেন্দ্র মোদি। জবাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘মোদিকে কোমরে দড়ি বেঁধে জেলে পাঠানো উচিৎ’ বলে মন্তব্য
করেছিলেন। সেই রাজনৈতিক বিতর্ক ভোটের পরেও থামেনি। সংসদেও সম্প্রতি তৃণমূলের তরফ থেকে আইন মেনে কাজ করার দাবি তোলা হয়েছে। এ নিয়ে কোনোরকম রাজনীতি না করার ব্যাপারেও তারা সরকারকে সতর্ক করে দিয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গে ‘অনুপ্রবেশকারীদের’ চিহ্নিত করতে কী পরিকল্পনা নেয়া হবে, তা নিয়ে অবশ্য এখনই মুখ খুলছেন না বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে বিজেপির নেতাদের দাবি হচ্ছে, আগে অনুপ্রবেশ বন্ধ করা হোক। পরে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বসবাসকারী অবৈধ বাংলাদেশিদের চিহ্নিত করা যাবে। এ প্রসঙ্গে বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ আনন্দবাজারকে বলেছেন, ‘যারা বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে শরণার্থী হিসেবে এসেছেন, তাদের সঙ্গে বেআইনি অনুপ্রবেশকারীদের ফারাক রয়েছে। শুধুমাত্র আর্থিক কারণে যারা বাংলাদেশ থেকে এসেছেন, তাদের নামের তালিকা তৈরি হোক।’

আসামের ক্ষেত্রেও এই কাজে যথেষ্ট সময় লাগবে বলেই মনে করছে কেন্দ্র। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, নাগরিক নিবন্ধন করতেই অন্তত দুই বছর সময় লাগবে। রাজ্যের সব বাসিন্দাকে নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করতে হবে। সেই ফরমে দেয়া তথ্য ১৯৭১ সালের ভোটার তালিকার সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে। এখন নাগরিকদের যে তালিকা রয়েছে তা ১৯৫১ সালের। এখন ১৯৭১ সালের ভিত্তিতে নাগরিক নিবন্ধন তৈরি হবে। এই প্রকল্পের জন্য ইতিমধ্যেই আসাম সরকারকে ২৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ জন্য রাজ্যের মুখ্যসচিব ও সংশ্লিষ্ট আমলাদের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ।

মনমোহন সরকারের আমলেই রাজ্যটিতে নাগরিক নিবন্ধন তৈরির কাজ হাতে নেয়া হয়েছিল। ২০১০ সালে ‘পাইলট প্রজেক্ট’ হিসেবে এই কাজ শুরু হয় বরপেটা ও কামরূপ জেলায়। কিন্তু সংখ্যালঘু ছাত্র আন্দোলনের মুখে প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এবার নতুন করে আঁটঘাট বেঁধে সেই কাজ শুরু করতে যাচ্ছে মোদি সরকার।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫