মৃত্যুফাঁদ পুলিশ বক্স!

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ চলতি মাসের প্রথম শুক্রবার মাঝ রাতে বৃদ্ধা মাকে নিয়ে ব্যক্তিগত গাড়িতে ঘরে ফিরছিলেন একজন সাংবাদিক। যাচ্ছিলেন মিরপুর থেকে কলাবাগান। মানিক মিয়া এভিনিউ-এর পূর্ব প্রান্তে খেজুরবাগান মোড়ে লাল বাতির সঙ্কেত পেয়ে গাড়িটি থামান। ডান পাশের ঠিক সড়ক বিভাজকের ওপর একটি ট্রাফিক পুলিশ বক্স। ওটার কারণে চালক দেখতে পান না ডান পাশের রাস্তা। অর্থাৎ মানিক মিয়া এভিনিউ দিয়ে কোনও গাড়ি আসছে কিনা তা জানতে পারেন না তিনি। সবুজ বাতি জ্বলতেই গাড়িটি সামনে এগুতে শুরু করে। আর ঠিক তখুনি মানিক মিয়া এভিনিউ দিয়ে ফার্মগেট অভিমুখ ছুটে আসা আরেকটি গাড়ির সঙ্গে সংঘর্ষ হয় ব্যক্তিগত গাড়িটির।
আরোহীরা প্রাণে রক্ষা পেলেও দুমড়ে মুচড়ে যায় গাড়িটি। ঘটনার মাত্রা আরও ভয়াবহ হতে পারতো। অথচ রাস্তার ঠিক মাঝে ট্রাফিক পুলিশ বক্সটি না থাকলে এ ঘটনা ঘটতই না। কেননা, তখন ডান পাশের রাস্তা পরিষ্কার দেখতে পেতেন চালক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছে রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বর গোল চক্কর এবং রাসেল স্কয়ার হয়ে পান্থপথে ঢোকার মুখেও। পুলিশ বক্সের আড়াল থাকায় ওপাশে কী আছে, চালক তা দেখতে না পারায় এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটছে রাজধানীতে।
অথচ পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ বলছে, তাদের কাছে এ ধরনের দুর্ঘটনার কোনও তথ্য নেই! এমনকি ঢাকার রাস্তার ওপরে বা মোড়ে এ ধরনের কতগুলো ট্রাফিক পুলিশ বক্স আছে তার সংখ্যাও জানা নেই ট্রাফিক বিভাগের।
ডিসি ট্রাফিক (পশ্চিম) জয়দেব ভট্টের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুলিশ বক্সের কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে এমন কোনও তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব। দুর্ঘটনার প্রমাণ মিললে এসব পুলিশ বক্স অপসারণ করা হবে বলেও তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে আশ্বস্ত করেন। তিনি আরও বলেন, ট্রাফিক পুলিশরা দিনরাত রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে দায়িত্ব পালন করেন। তাদের বিশ্রামের জন্যই এগুলো তৈরি করা হয়েছে।
প্রায় একই কথা বললেন ডিসি ট্রাফিক (দক্ষিণ) রেজওয়ান খান। বললেন, পুলিশ বক্সগুলো আসলে মৃত্যুফাঁদ কিনা তা পরীক্ষা না করে বলা যাবে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাস্তার মাঝে (সড়ক বিভাজক), সড়ক দ্বীপে এবং ফুটপাতে গড়ে তোলা পুলিশ বক্সগুলোর কোনও অনুমোদন নেই। সিটি করপোরেশন (উত্তর ও দক্ষিণ) থেকে অনুমোদন নেওয়ার নিয়ম থাকলেও পুলিশ বক্সগুলো ‘যেমন খুশি তেমন‘ স্টাইলে নির্মাণের ফলে কারিগরি বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হয়নি। ফলে ট্রাফিক পুলিশের বিশ্রামের জায়গাটি হয়ে গেছে গাড়ি চালকদের দৃষ্টি প্রতিবন্ধক।
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, করপোরেশনের জায়গায় ঢাকা শহরে দেড় থেকে দুই শতাধিক পুলিশ বক্স তৈরি করা হয়েছে এবং এখনও বিভিন্ন জায়গায় নতুন করে আরও তৈরি হচ্ছে। শাহবাগের ফুলের দোকানের সামনে, বাংলামোটর মোড়ের ইস্কাটন রোড এবং কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ সংযোগ পয়েন্টে, রাসেল স্কয়ার থেকে পান্থপথে যেতে ফুটপাতের ওপর তৈরি করা হয়েছে পুলিশ বুথ। এ ছাড়া সার্ক ফোয়ারা মোড়, টেকনিক্যাল মোড়, শাহবাগ, পান্থপথ, রাসেল স্কয়ার, আসাদ গেট আড়ং, গণভবন ক্রসিং, কাকরাইল মসজিদ মোড়, নীলক্ষেত, গুলশান-১, গুলশান-২ এবং বনানী-কাকলী ক্রসিং ও মিরপুরসহ পুরো ঢাকা শহরজুড়ে আছে অগণিত পুলিশ বুথ।
অভিযোগ রয়েছে, এভাবে গড়ে তোলা বক্সগুলো পুলিশের বা সরকারি টাকায় তৈরি হয়নি। বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এগুলো তৈরি করেছে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো এই বক্সগুলোকে তাদের প্রচারমাধ্যম হিসেবেই দেখে! ফলে এগুলোর গায়ে দেখা যায় রংচঙা সব বিজ্ঞাপন। আর এর কারণেও অনেক সময় মনযোগ হারান গাড়ি চালকরা। ঘটে দুর্ঘটনা। পুলিশ বক্সগুলো যে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর টাকায় তৈরি তা স্বীকার করলেন ডিসি ট্রাফিক (পশ্চিম) জয়দেব ভট্ট। তিনি জানালেন, পুলিশ বক্সগুলো বেসরকারি স্পন্সরশিপে তৈরি। সরকারি টাকায় এসব করার কোনও বিধান বা সুযোগ নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বছর তিনেক আগে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সদর দফতর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে দেড় শতাধিক পুলিশ বক্স স্থাপনের অনুমোদন দেওয়া হয়। প্যানাফ্লেক্সে তৈরি বিজ্ঞাপন দিয়ে বুথগুলোর কাচ ঢেকে দেওয়ায় বক্সের ভেতর কিছুই দেখা যায় না। এ ছাড়া এসব বুথের কারণে অনেক জায়গায় ফুটপাত এবং জেব্রাক্রসিং বন্ধ হয়ে গেছে। যার ফলে ঝুঁকি নিয়ে পথ চলতে হয় অনেককে।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা বীপন কুমার সাহা জানান, পুলিশ কমিশনারকে চিঠি দিয়েও কোনও কাজ হচ্ছে না। একটা পুলিশ বক্স ভাঙলে সেখানে আবার তৈরি করা হচ্ছে। ক্ষেত্রবিশেষে একটির বদলে দুটি বক্স তৈরি করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
কমিশনার আরও বলেন, “এ পর্যন্ত ৭০-৮০টা পুলিশ বক্স উচ্ছেদ করেছি। সিটি করপোরেশনের জায়গায় বক্সগুলো নির্মাণ করা হলেও সিটি কর্পোরেশনের কাছ থেকে কোনও অনুমতি নেওয়া হয় না। আমরা এরই মধ্যে পুলিশ বক্সগুলোকে অবৈধ স্থাপনা হিসেবে চিহ্নিত করেছি।” সৌজন্যেঃবাংলা ট্রিবিউন

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫