বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ অপরিকল্পিত ও যত্রতত্র শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ এবং নতুন শিল্প এলাকা স্থাপনের উপযুক্ত স্থান নির্বাচনে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে নগর উন্নয়ন অধিদফতর।
‘ন্যাশনাল কমপ্রিহেন্সিভ ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান ফর দি হোল কান্ট্রি’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় দেশব্যাপী এ মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পটির উদ্যোগ নেয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। নগর উন্নয়ন অধিদফতর দ্রুত এ সংক্রান্ত ছক প্রণয়ন করে পরিকল্পনা কমিশনে প্রেরণ করেছে।
পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ও সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুনের সভাপতিত্বে সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
নগর উন্নয়ন অধিদফতরের পরিচালক ফওজী বিন ফরিদ বাংলানিউজকে জানান, প্রকল্পের বিষয়ে পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে যত্রতত্র শিল্প কারখানা বন্ধসহ দেশে নানা ধরনের গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা হবে। প্রস্তাবিত প্রকল্পে পরিকল্পনা কমিশন কিছু অবজারভেশন দিয়েছে সেগুলো পূর্ণ হলেই আশা করা যাচ্ছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদন পাবে।
প্রকল্পের ব্যয় প্রসঙ্গে ফরিদ জানান, প্রাথমিকভাবে ৮৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। সম্পূর্ণ সরকারি খাত থেকে প্রকল্প ব্যয় মেটানো হবে।
তিনি জানান, প্রকল্পের মেয়াদকাল ধরা হয়েছে মার্চ’২০১৪ থেকে ফেব্রুয়ারি’২০১৬ সাল পর্যন্ত।
পরিকল্পনা কমিশন জানায়, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) ১০০ বছর মেয়াদী ডেল্টা প্ল্যান কার্যক্রমের সঙ্গে প্রস্তাবিত প্রকল্পের অনেক কাজের মিল রয়েছে। সুতরাং, প্রকল্পটি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে পরিকল্পনা কমিশন। প্রকল্পটি দেশের ৭টি বিভাগের জন্য ৭টি প্যাকেজে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। যেহেতু প্রকল্পটি সমগ্র বাংলাদেশে বাস্তবায়ন করা হবে।
এছাড়া প্রকল্পের আওতায় দেশের বিদ্যমান শিল্প এলাকাগুলোর স্থানিক বিস্তার নির্ধারণের লক্ষ্যে দেশের শিল্পাঞ্চলগুলোকে চিহ্নিত করা হবে। বিভিন্ন বাণিজ্য কেন্দ্র এবং বিভিন্ন স্থল, নৌ ও সামুদ্রিক বন্দরের সঙ্গে সুষ্ঠু যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হবে।
প্রকল্পে পাঁচটি কম্পোনেন্টে রয়েছে। যেমন, ন্যাশনাল লেভেল প্ল্যান, রিজিওন্যাল লেভেল প্ল্যান, করিডোর ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান, কনজারভেশন প্ল্যান এবং ইনডাস্ট্রিয়াল প্ল্যান।
৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় দেশের পরিকল্পিত উন্নয়নের লক্ষ্যে মহাপরিকল্পনটি ছয়টি স্থরে ভাগ করা হয়েছে। এবং নগর উন্নয়ন অধিদফতর স্তর অনুযায়ী প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।
প্রথম স্তর(কৌশলগত পরিকল্পনা)
এ স্তরের কাজের মধ্যে রয়েছে, জাতীয় পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকশন প্ল্যানসমূহ একীভূতকরণপূর্বক সমন্বিত পরিকল্পনা প্রণয়ন, সমগ্র দেশের নগর ও গ্রামীণ এলাকার জন্য জাতীয় পর্যায়ে সমন্বিত পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং দেশের সুষ্ঠু নগরায়ণের জন্য নগরায়ণ নীতিমালা প্রণয়ন এবং নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা আইন প্রয়োগের জন্য বিধিমালা প্রণয়ন।
এছাড়া রয়েছে, সকল নগর কেন্দ্রের মানদণ্ড এবং গুণাগুণের ভিত্তিতে নগর শ্রেণীভুক্তকরণ এবং দেশের কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো যেমন- বিমানবন্দর, ন্যাশনাল হাইওয়ে, নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট ইত্যাদির জন্য কৌশলগত মহাপরিকল্পনা গ্রহণ।
দ্বিতীয় স্তর (অ্যাকশন এরিয়া প্ল্যান)
কাজের এ স্তরে রয়েছে- নগর, অঞ্চল এবং গ্রামীণ পরিকল্পনা পদ্ধতি নির্ধারণ, জাতীয় ও অঞ্চল পর্যায়ে সকল সেক্টরকে পরিকল্পনায় আনা এবং বিশেষ এলাকাসমূহ সুন্দরবন, ওয়েবল্যান্ড, হাওড়, বিল, ডিপ সি-পোর্ট, নতুন জাতীয় বিমানবন্দর, ল্যান্ড পোর্ট, কোল সিটি, মেগা পাওয়ার প্ল্যান্ট, হার্ড রক সিটি ইত্যাদি এলাকার জন্য অ্যাকশন প্ল্যান প্রণয়ন করা।
তৃতীয় স্তর (অঞ্চল উন্নয়ন পরিকল্পনা)
এ স্তরে যেসব কাজ করা হবে সেগুলো হচ্ছে- অঞ্চল উন্নয়নের জন্য ভূমির প্রকৃতি, মৃত্তিকা, কৃষি, জনসংখ্যা, দূর্যোগ প্রবণতা, পানি বিজ্ঞান এবং পরিবেশশগত বিশ্লেষণ করা।
চতুর্থ স্তর(করিডোর ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান)
হাইওয়ে করিডোর এবং ফিডার রোড অনুযায়ী জাতীয় নীতিমালা এবং নীতিমালা বাস্তবায়নের সেক্টরাল কৌশলগুলোকে স্থানিক রুপান্তরকরণ করা হবে প্রকল্পের এ স্তরে।
পঞ্চম স্তর (শিল্পায়ন সংক্রান্ত সমীক্ষা এবং সংরক্ষণ পরিকল্পনা)
অপরিকল্পিতভাবে শিল্পাঞ্চল না গড়ে ওঠে সে বিষয়ে নতুন নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে এ স্তরে।
ষষ্ঠ স্তর (পরিকল্পনার বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ এবং মূল্যায়ন)
সামগ্রিক পরিকল্পনাটি প্রতিষ্ঠানিক কাঠামোর মধ্যে বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ এবং মূল্যায়ন করা হবে এ স্তরে।
নগর অধিদফতর সকল পরিকল্পনার তত্ত্বাবধায়ক হবে। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম