বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ জেলা পরিষদ বিলুপ্ত করার চিন্তা করছে সরকার। ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার পর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। অথচ এরই মধ্যে উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গতকাল বুধবার জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে স্থানীয় সরকার বিভাগ-সংক্রান্ত অধিবেশন শেষে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘জেলা পরিষদের প্রয়োজন আছে কি না, তা বিবেচনা করা দরকার। আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে, এত স্থানীয় সরকার রাখা ঠিক না। অপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা তৈরি না করাই ভালো।’
জেলা পরিষদ বিলুপ্তির কোনো পরিকল্পনা সরকারের আছে কি না- এ প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ আশরাফ বলেন, এটা এই পর্যায়ে আলোচনার বিষয় নয়। জাতীয় পর্যায়ে আলোচনার দাবি রাখে। এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়।
বেশি বেশি স্থানীয় সরকার উন্নয়নের কাজে আসে না উল্লেখ করে সৈয়দ আশরাফ বলেন, ‘আমাদের মূল স্থানীয় সরকার হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ। এর ওপরে পৌরসভা, উপজেলা, সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ রয়েছে। এত প্রতিষ্ঠান থাকলে ইউনিয়ন
পরিষদ কী পাবে? যত বেশি প্রতিষ্ঠান হবে, তত খরচ বাড়বে। আমার মতে, প্রতিষ্ঠান গড়ার আগে খরচের বিষয়টি মাথায় রাখা দরকার।’
জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনা জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ আশরাফ বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা চিন্তা করছি। কারণ জেলা পরিষদের ক্ষমতা নির্ধারণ না করে এত বড় নির্বাচন করা ঠিক হবে না। অনেক জেলায় এক কোটির ওপর ভোটার আছে। এত মানুষের ভোটে নির্বাচিত একজন প্রতিনিধির জন্য কী ধরনের বাজেট দেওয়া যাবে, সেটা আগে ঠিক করতে হবে। কারণ বর্তমানে জেলা পরিষদের জন্য যে বাজেট বরাদ্দ হয়, তা একটি নির্বাচিত তৃতীয় শ্রেণির পৌরসভার বাজেটের চেয়েও কম। আমরা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানদের ঠুঁটো জগন্নাথ বানিয়ে রাখতে চাই না। তাই আগে বাজেট বরাদ্দের বিষয়টি আলোচনা করে ঠিক করতে হবে।’
বিদ্যমান জেলা পরিষদ আইন অনুযায়ী, একজন চেয়ারম্যান, ১৫ জন সদস্য ও সংরক্ষিত আসনের পাঁচজন নারী সদস্য নিয়ে জেলা পরিষদ গঠিত হবে। চেয়ারম্যান ও এই ২০ জন সদস্যকে নির্বাচিত করবেন সংশ্লিষ্ট এলাকার সিটি করপোরেশন (থাকলে), উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা।
কিন্তু কোনো নির্বাচন না করে আড়াই বছর আগে ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর পার্বত্য তিন জেলা ছাড়া বাকি ৬১ জেলা পরিষদে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাদেরই প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয় মহাজোট সরকার। তখন স্থানীয় সরকার বিভাগসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে বলা হয়েছিল, ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন দিয়ে জেলা পরিষদ গঠন করা হবে। কিন্তু গত আড়াই বছরেও তা করা হয়নি। গত আড়াই বছরে চোখে পড়ার মতো কোনো কাজই করতে পারেননি জেলা পরিষদ প্রশাসকরা। পদমর্যাদা নির্ধারণ না করাসহ নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে। স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে ৬১ প্রশাসকের পেছনে গত ৩০ মাসে সরকারের ব্যয় হয়েছে প্রায় ৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে রয়েছে একজন প্রশাসকের মাসিক সম্মানী ২৭ হাজার ৫০০ টাকা, আপ্যায়ন ভাতা তিন হাজার এবং জ্বালানি খরচ ১৯ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে একজন প্রশাসকের পেছনে মাসে খরচ দাঁড়ায় ৪৯ হাজার ৫০০ টাকা। বছরে যা পাঁচ লাখ ৯৪ হাজার টাকা।
সারা বছর বাজার তদারকির নির্দেশ : শুধু রমজানেই নয়, নিত্যপণ্যের দাম সারা বছর সাধারণ মানুষের জন্য সহনীয় রাখতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। গতকাল বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধিবেশনে ডিসিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, নিত্যপণ্যের দাম সারা বছর সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে ডিসিদের সারা বছরই বাজারের তদারকি করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়নের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, মুন্সীগঞ্জের বাউশিয়ায় ১.২ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে গার্মেন্ট পল্লী গড়ে তোলা হবে। তিন বছরের মধ্যে এর কাজ শেষ হবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রাজনৈতিক প্রভাবে উচ্ছেদ করা যায় না : রাজনৈতিক চাপের কারণে রাস্তা থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা সম্ভব হয় না বলে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কাছে নালিশ করেছেন জেলা প্রশাসকরা (ডিসি)। জবাবে যোগাযোগমন্ত্রী বলেন, মানুষের নির্বিঘ্ন চলাচল নিশ্চিত করতে তাঁদের রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থাকতে হবে। যেকোনো মূল্যে জনগণের চলাচলের রাস্তা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন রাখতে হবে। যোগাযোগ ও রেলপথ মন্ত্রণালয়-বিষয়ক অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান যোগাযোগমন্ত্রী। মন্ত্রী জানান, আর বেশি রাস্তাঘাটের প্রয়োজন নেই। যেগুলো আছে সেগুলোর সঠিক ব্যবস্থাপনা এখন জরুরি। তিনি আরো বলেন, ‘ফ্লাইওভার সাময়িক ব্যবস্থা। আর চার লেন করলেও সমস্যা মিটবে না। আমাদের মানসিকতা বদলাতে হবে।’ মন্ত্রী স্বীকার করেন, রমজানে ভারি বর্ষণের কারণে রাস্তায় মানুষের চলাচলে কষ্ট হচ্ছে। জামায়াত-শিবিরের নাশকতা ঠেকাতে জেলা প্রশাসকদের সহযোগিতা চেয়েছেন রেলমন্ত্রী মে. মুজিবুল হক। রেলপথ মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ তথ্য জানান।
এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন ছাড়া অনুমোদন নয় : সরকার এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন ছাড়া ভবিষ্যতে আর কোনো নতুন কলকারখানা তৈরির অনুমোদন দেবে না বলে জানিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। শিল্প মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।
দুর্যোগ মোকাবিলায় আরো বরাদ্দ চান ডিসিরা : দুর্যোগ মোকাবিলায় বেগ পেতে হয় বরাদ্দের অভাবে। তাই আরো আর্থিক বরাদ্দ দাবি করেছেন জেলা প্রশাসকরা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া।
ভূমি নিয়ে হয়রানি রোধের নির্দেশ : নাগরিকদের ভূমি নিয়ে হয়রানি রোধে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দিয়েছেন ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ। ভূমি মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের অধিবেশনে তিনি এ নির্দেশ দেন। অধিবেশন শেষে মন্ত্রী বলেন, জেলা প্রশাসকদের ভূমি জরিপ, ভূমি উন্নয়ন কর আদায় এবং নামজারি ও জমাভাগের ক্ষেত্রে হয়রানি দূর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জনদুর্ভোগ কমাতে ভূমি ব্যবস্থাপনা ডিজিটালাইজেশনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও জানান মন্ত্রী।
আজ শেষ হচ্ছে সম্মেলন : আজ বৃহস্পতিবার শেষ হচ্ছে তিন দিনের ডিসি সম্মেলন। শেষ দিনে স্বরাষ্ট্র, তথ্য, সংস্কৃতি, যুব ও ক্রীড়া, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন, বস্ত্র ও পাট এবং পানিসম্পদ, নৌপরিবহন, আইন ও বিচার, সমাজকল্যাণ, ধর্ম, বিদ্যুৎ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। বেঙ্গলিনিউজটোয়েন্টিফোর.কম