বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সমুদ্রসীমার রায় নিয়ে বাংলাদেশে চলছে রাজনৈতিক বিতর্ক৷ সরকার এই রায়কে উভয় দেশের জয় বললেও বিএনপি বলছে ভিন্ন কথা৷ তাদের দাবি, সরকারের ব্যর্থতায় বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরে ছয় হাজার কিলোমিটার এলাকা হারিয়েছে৷
বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ২৫ হাজার ৬০২ বর্গ কিলোমিটারের বিরোধপূর্ণ এলাকা নিয়ে আন্তর্জাতিক সালিসী আদালত রায় দেয় গত মঙ্গলবার৷ আদালতের রায়ে ১৯ হাজার ৪৬৭ বর্গকিলোমিটার এলাকা বাংলাদেশ পেয়েছে৷ আর ভারত পেয়েছে ছয় হাজার ১৩৫ বর্গ কিলোমিটারের অধিকার৷ রায় প্রকাশের দিনই বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘‘রায় পর্যালোচনায় উভয়ের জন্য বিজয় নিশ্চিত হয়েছে৷ এ বিষয় বন্ধুত্বের বিজয়, বাংলাদেশ ও ভারতের সাধারণ মানুষের বিজয়।”
কিন্তু বিএনপি একে মানতে পারছে না৷ বিএনপি-র ভাইস চেয়ারম্যান এবং সাবেক পানিসম্পদমন্ত্রী মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বিএনপি-র পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, “বঙ্গোপসাগরের বিরোধপূর্ণ ২৫ হাজার ৬০২ বর্গকিলোমিটার এলাকার পুরোটাই বাংলাদেশের ছিল। রায়ের মাধ্যমে এখান থেকে ছয় হাজার বর্গকিলোমিটার ভারতকে দিয়ে দেয়ায় বাংলাদেশের ক্ষতি হয়েছে৷”
তিনি বলেন, ২০০৯ সালে মামলা করা সময়োপযোগী হয়নি৷ এটি আরো পরে করার দরকার ছিল৷
তার কথা, দক্ষিণ তালপট্টি বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ৷ এটি হাতছাড়া হতে দেয়া উচিত হয়নি৷ তিনি বলেন, ‘‘বিএনপি মনে করে, বাংলাদেশের দুর্বল পররাষ্ট্রনীতি এবং বাংলাদেশের ওপর ভারতের নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাব রয়ে গেছে৷ এ জন্য এ ধরনের একটি রায় পেয়েছে বাংলাদেশ৷” বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মামলাটি ভালোভাবে পরিচালনা করা হয়নি বলে অভিযোগ তার৷
হাফিজ উদ্দিন আহমেদ আরো বলেন, আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে কখনো উভয় পক্ষের বিজয় হয় না৷ অথচ সরকার প্রথমে বলেছে বাংলাদেশের বিজয় হয়েছে আর এখন শুনতে পাচ্ছি ভারতেরও বিজয় হয়েছে৷ তাই তিনি সরকারের কাছে রায়ের ব্যাখ্যা প্রকাশের দাবি করেছেন৷
আর বিএনপি-র স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘‘যে দলটি গত ২৫ বছর কখন বলেনি যে তালপট্টি দ্বীপ ছিল না, এখন কেন বলছে তালপট্টি দ্বীপ নেই৷ আসলে শেখ হাসিনাকে দিয়ে সব কিছু সম্ভব, কিছু দিন পর হয়ত তিনি বলবেন বাংলাদেশ নামে কোনো রাষ্ট্রই ছিল না৷”
আর এর জবাবে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন, ‘‘সমুদ্র জয়ের পর তারা তালপট্টি নিয়ে তাল-বেতাল হয়ে গেছেন৷ তালপট্টির তাল যদি বেতাল হয়ে যায় তবে পট্টি আর কতটুকু ভালো থাকবে৷ সমুদ্রসীমার নিষ্পত্তি হওয়ায় এখন তালও নেই বেতালও নেই। ফলে তাদের ভারত বিদ্বেষী রাজনীতিতেও একটি উইকেট পড়ে গেছে৷”
সুরঞ্জিত বলেন, ‘‘এখন বিশ্বায়নের যুগ৷ সবাই সব জানে ও দেখে৷ এখন অন্ধকার ও মিথ্যাচারের রাজনীতির কোনো স্থান নেই৷ এই মামলা নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালাতে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ন্যায্যতার ভিত্তিতে বিচার হোক৷ আমাদের দাবি যদি ন্যায্য হয় তবে পাবো, না হলে পাবো না৷ এখানে দৃঢ়তার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন৷”
প্রসঙ্গত, আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে বলা হয়েছে এখন আর তালপট্টি দ্বীপের অবস্থান নেই৷ যদিও ওই এলাকাটি ভারত পেয়েছে৷ সূত্র: ডিডব্লিউ