আশুলিয়ায় ৩ মিনিটের পথে প্রস্তুতি থাক ৩ ঘণ্টার!

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ আর মাত্র ক’দিন পরেই ঈদ। ঈদের ছুটিতে নাড়ির টানে নিজ বাড়ি ফিরবেন লক্ষ-কোটি নগরবাসী। কোন পথে যাবেন তারা। গত বছরের কিংবা তারও আগের বছরগুলোর স্মৃতি নিশ্চয়ই অনেকের মনে আছে। বাংলানিউজেরও মনে আছে- দীর্ঘ যানজটের কথা, ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় চরম দুর্ভোগে পড়া ঘরমুখো মানুষের কথা। সেইসব ফেসবুক স্ট্যাটাসের কথা যাতে যাত্রীরা জানিয়েছিলেন তাদের দুর্ভোগের কষ্টচিত্র। এবার তাহলে কি হচ্ছে? আছে কি কোনো পরিবর্তন? পরিবর্তন থাকুক কি না থাকুক নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা থেমে থাকবে না। মানুষ ঈদে যাবেন প্রিয় জনের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করতে। তবে এবারও কি কষ্টভোগের প্রস্তুতি… নাকি থাকবে স্বস্তির যাত্রা। বাংলানিউজ আগে ভাগেই একটু খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেছে। প্রধান, অপ্রধান, ছোট-বড় ১০টি রুটে ছুটে গেছেন বাংলানিউজের কর্মীরা। জানাচ্ছেন রুটগুলোর হাল-হকিকত!

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক থেকে ফিরে: মাত্র ক’দিন পরেই ঈদ। ঈদকে সামনে রেখে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানজট এরই মধ্যে অসহনীয় হয়ে পড়েছে। কিন্তু রয়েছে আরও অসহ্য সময়ের হাতছানি। সরেজমিন ঘুরে জানা গেলো কেবল আশুলিয়াতেই তিন মিনিটের পথ চলতে তিন ঘণ্টার প্রস্তুতি রাখতে হবে।

কেনো? সে প্রশ্ন এলাকাবাসীর কাছে ছুড়ে দিলে রাস্তার দিকেই আঙ্গুল নির্দেশ করলেন সবাই। সেখানে বেহাল সড়ক, খানাখন্দতো রয়েছে। তার ওপর সড়কের দুই পাশ দখল হয়ে আছে অবৈধ স্ট্যান্ড, যত্রতত্র পার্কিং, ফুটপাত ভরে রাস্তায় দোকান-পাট। সব মিলিয়ে ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল যেতে ভোগান্তির শেষ থাকবে না।

ঢাকা থেকে আবদুল্লাহপুর হয়ে আশুলিয়ার জিরোবো বাজারে ঢুকতেই পড়তে হবে যানজটে। চোখে পড়লো এই পয়েন্টে অবৈধ বাস ও টেম্পু স্ট্যান্ড। সড়কের দুই পাশে বড় বড় গর্তে পানি জমে আছে। এসব গর্ত কত বড় তাও জানার পথ নেই।

এখনই এ সড়কে দূর্বিসহ যানজটে পড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হচ্ছে আশুলিয়া জামগড়া বাজারের (ফ্যান্টাসি কিংডমের সামনে) ইউনিক বাস স্ট্যান্ড থেকে বগাপাড় বাজার পর্যন্ত। ঈদের ছুটি যত ঘনিয়ে আসবে, এই যানজট তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে একসময় ভয়াবহতায় রূপ নেবে, এমনটাই মনে করেন এই বাজারের দোকানি, ক্রেতা কিংবা স্থানীয় বাসিন্দারা।

জামগড়া বাজারের গোড়া থেকেই রাস্তায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। গাড়ি পড়লেই ফেঁসে যাওয়ার ভয়। এর ওপর দুই পাশ দখল করে টঙ বানিয়ে তৈরি করা হয়েছে দোকান। আর সামান্য ছাড় না দিয়ে গড়ে উঠেছে স্থায়ী দালান। অবৈধ স্ট্যান্ডে আড়াআড়ি আর যত্রতত্র পার্কিং তো রয়েছই।

গত সোমবার ওই এলাকা ঘুরে দেখা যায় রাস্তা মেরামতের কাজ চলছে। ভাঙ্গা রাস্তায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাজার হাজার গাড়ি দাঁড় করিয়ে নিন্মমানের ইট ও বালু দিয়ে নামমাত্র মেরামত করা হচ্ছে সড়ক। এতেই মাত্র ২ কিলোমিটার পার হতে সময় লাগছে ৩ ঘণ্টা।

বাজারের মধ্যে উঠে এসেছে দুটি সংযোগ সড়ক। এই দুই পথে গাড়ি মূল সড়কে উঠছে আবার কিছু কিছু ওই সড়কে যাচ্ছেও। সেখানে নেই কোনো ট্রাফিক সিগন্যাল।

ট্রাফিক পুলিশের হাত আর বাঁশির ফুৎকারে এরই মধ্যে যখন তখন লেজেগোবরে অবস্থা হয়ে উঠছে। ঈদের ছুটিতে এই ব্যবস্থা যে অকার্যকর হয়ে উঠবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই জামগড়া বাজারের ফিলিং স্টেশন কর্মী আবদুর রাজ্জাকের।

শিমুলতলী প্যান প্যাসেফিক ফিলিং স্টেশন সেলসম্যান আবদুর রাজ্জাক বাংলানিউজকে বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৬ ঘণ্টাই যানজট থাকে। দু’দিন আগে যা মেরামত করা হয়েছে তা দুইদিন পরেই শেষ।

তিনি জানান, অবৈধ পার্কিং ও সড়ক বেহালের কারণে ৫-৬ কিলোমিটার যানজট। সড়ক ও জনপদ এবং প্রশাসনের কোন ব্যবস্থাই নেয় না। ঈদে এখানে ভয়াবহ অবস্থা হবে তা কেউ এড়াতে পারবে না, সোজাসাপ্টা মত রাজ্জাকের।

ফ্যান্টাসি কিংডম এলাকার স্থানীয় গ্রামীণ পরিবহনের চালক সাদ্দাম হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, একবছর আগে সড়ক মেরামত করা হলেও বৃষ্টির শুরুতে সব শেষ। মেরামত কাজ শুরু হয়েছে প্রায় দুই মাস আগে। দিনে নামমাত্র কাজ করার কারণে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট।

প্যান প্যাসেফিক ফিলিং স্টেশনের সামনে সড়ক মেরামতের কাজে নিয়োজিত শ্রমিক রেজাউলের সঙ্গেও কথা বলার সুযোগ মিললো। তিনি বাংলানিউজকে বলেন,‘ শ্রমিক কম বলে কাজ শেষ হতে সময় বেশি লাগছে। বাজেট কম বলে ইট আর বালু দিয়েই মেরামত চলছে।’

এখানেই শেষ নয়। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বলিভদ্র বাজার এলাকার চিত্র আরো করুন। রাস্তার দুই পাশে সকাল ও সন্ধ্যা বসে ভ্রাম্যমাণ বাজার। আধা কিলোমিটার বাজার পার হতে এক ঘণ্টার বেশি সময় ব্যয় হয়।

শিপন নামের একজন ট্রাকচালক বাংলানিউজকে বলেন,‘ সড়কের ওপর ভ্রাম্যমাণ ফলের দোকানের কারণে বাজার পার হতে ঘণ্টাখানেক সময় লাগে। বাজারে রাস্তার ওপর খানা-খন্দের কারণেও বেশি সময় লাগে।’

একই সাথে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বাইপাইল মোড়ে সড়কের দু’পাশ ভ্রাম্যমাণ টঙ দোকান দিয়ে দখল করেছে হকাররা। প্রায় কোয়াটার কিলোমিটার সড়ক পার হতে এক ঘণ্টা সময় লাগে।

অপরদিকে; মহাসড়কের নন্দন পার্কের জিরানী বাজার ওভারব্রিজের নিচের সড়কের দুই পাশে লেন দখল করে ভ্রাম্যমাণ দোকান তৈরি করা হয়েছে। এর ফলে সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। ঈদে এই দোকান আরও বাড়বে। তাতে যানজটের ক্ষেত্রে যা হবার তাই হবে, মত এখানকার চা বিক্রেতা ইসরাফিলের।

ইসরাফিল যেনো সব জানে, এমনই একটা ভাব। তার সঙ্গে আলাপ জমালে জানা গেলো,‘ কয়েক দফা উচ্ছেদ করা হলেও একটি সংগঠনের নেতারা মাসোহারা নিয়ে অবৈধ এসব দোকান বসাচ্ছেন।

মহাসড়কে রিকসা, ভ্যান, অটোরিক্সা চলাচল নিষিদ্ধ থাকলেও দেদারসে চলছে। এতে যানজটের পাশাপাশি ঘটছে দুর্ঘটনা।

অন্যদিকে; মহাসড়কের চন্দ্রা ত্রি-মোড় এলাকায় আশুলিয়া ও গাজীপুর আলাদা অংশে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। চন্দ্রা মোড়ে একটি ফিলিং স্টেশন ও মোড়ে দোকান থাকায় সরু সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়, এ কথা এলাকাবাসি ভালো করেই বোঝেন।

এ মোড়ে যানজট বিষয়ে কথা হয় সড়ক পাশের আরেক চা বিক্রেতা রুবেলের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন,‘ যাত্রী উঠা-নামা করাতে গাড়ি দাঁড় করানো, ট্রাফিক পুলিশের অদক্ষতার কারণে যানজট হচ্ছে।

‘বৃষ্টিতে রাস্তা নষ্ট হওয়াতে বেশ বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলেও যানজট হবেই, অভিজ্ঞতা থেকে বিশেষজ্ঞ মত রুবেলের।

ঈদের সময় শ্রমিক সংগঠন ও পুলিশের চাঁদাবাজিরও জনপদ হয়ে ওঠে এই মহাসড়ক।

একটি গাড়ি থামিয়ে দুই মিনিটের মধ্যে লেনদেন সাড়লেও তার প্রভাবে যানজট হবেই, মত রুবেলের। এ কারণে ঈদের আগে প্রচণ্ড যানজট লাগবে বলেও মত তার।

অন্যদিকে; ঢাকা থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা হয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যেতে গাজীপুর চন্দনা চৌরাস্তা, কোনাবাড়ি, সফিপুর কালিয়াকৈর বাজারসহ বেশ কিছু জায়গায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে এবং হবে।

সরেজমিনে দেখা যায়, গাজীপুর চন্দনা চৌরাস্তার মুখে দুই পাশ দখল করে গড়ে উঠেছে অবৈধ বাস, টেম্পু, সিএনজি ও অটোরিক্সা স্ট্যান্ড। বৃষ্টির কারণে সড়কে তৈরি হয়েছে বড় বড় খানাখন্দ।

এছাড়া সড়কের দু’ পাশে আবর্জনার স্তুপ করে রাখা হয়েছে। যাত্রীবাহী বাসগুলো পুলিশের সামনেই কৃত্রিম যানজটের সৃষ্টি করছে। এতে এ মোড় পার হতেই ঘণ্টা পার।

অবৈধ স্ট্যান্ডের বিষয়ে টেম্পুচালক শের আলী বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাদের কারণে যানজট সৃষ্টি হয় কিনা জানি না, আর হলেও আমরা কোথায় দাঁড়াবো?’

কোনাবাড়ি নতুন বাজার এলাকা এখনই তীব্র যানজটের স্থান। রাস্তার দুই পাশ দখল করে গড়ে উঠেছে ভ্রাম্যমাণ দোকান, অবৈধ স্ট্যান্ড। বৃষ্টিতে তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। ফলে বাজার পার হতেই লাগছে ২-৩ ঘণ্টা।

নতুন বাজারের একজন ব্যবসায়ি জানান, সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তা নষ্ট হয়ে যায়। ভারি ভারি যানবাহনের কারণে রাস্তা বেশি দিন টিকে না। রাস্তার বেশিরভাগই তো দখল হয়ে আছে। এক মাসে বেশ কয়েকবার লোক দেখানো মেরামত করা হলেও তার কোনো সুফল নেই।

সড়কে অযথা যানজটের বিষয় স্বীকার করেন সাভার জোনের সহকারি কমিশনার (এএসপি) আশরাফুল আলম। তিনি বাংলানিউজকে বলেন,‘ আশুলিয়া থেকে বাইপাইল হয়ে চন্দ্রা পর্যন্ত পরিস্থিতি একেবারে বাজে।

আশরাফুল আলম বলেন, এই রাস্তার সঙ্গে কয়েক ডজন সংযোগ সড়ক রয়েছে। এগুলোর কারণেই যানজট হয়। এছাড়া অপ্রসস্ত সড়ক, ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা ও ভারি যানবাহন চলাচলের জন্য অল্প দিনেই সড়ক নষ্ট হয়ে যায়।’

সড়কের পাশে ভ্রাম্যমাণ দোকান ও স্থাপনা উচ্ছেদ বিষয়ে তিনি বলেন,‘জায়গাগুলো সড়ক ও জনপদের। তাই আমরা কোন পদক্ষেপ নিতে পারি না। এছাড়া লোকবলের অভাব রয়েছে বলে জানান তিনি। বাংলানিউজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫