বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ পাবনাঃ প্রায় তিন যুগ পর বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী নায়িকা সুচিত্রা সেনের পৈত্রিক বাড়িটি দখলমুক্ত করা হয়।
বুধবার পাবনা সদর উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বাড়িটি দখলে নিয়ে তাতে তালা ঝুলিয়ে দেয়।
বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে বাড়িটি বুঝে নেবে জেলা প্রশাসন। বাড়িটি দীর্ঘদিন ধরে জামায়াত-নিয়ন্ত্রিত ইমাম গাজ্জালী ট্রাস্টের দখলে ছিল।
উচ্চ আদালতের রায়ের প্রেক্ষিতে ট্রাস্ট কর্তৃপক্ষ তাদের মালামাল সরিয়ে নেয়। গত ৪ মে সুপ্রিমকোর্টের রায়ে বাড়িটি দখলমুক্ত করার নির্দেশ দেয়া হয়।
পাবনা জেলা জামায়াতের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আদালতের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে তারা বড়িটি ছেড়ে দিয়েছে।
পাবনার সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মৌলবাদী জামায়াত চক্র দীর্ঘদিন ধরে বাড়িটি দখল করে ছিল।
পাবনা জেলা প্রশাসক কাজী আশরাফ উদ্দিন জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে বাড়িটির নিয়ন্ত্রণভার জেলা প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করবে।
পাবনার সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. রাম দুলাল ভৌমিক বলেন, ৫ বছরের আন্দোলনে বাড়িটি উদ্ধার করে সরকারের দখলে আনা সম্ভব হলো। এখন ওই বাড়িতে সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংগ্রহশালা তৈরি করা।
এরই মধ্যে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান তিনি।
রাম দুলাল ভৌমিক জানান, পাবনা শহরের গোপালপুর মহল্লার হেমসাগর লেনের এই বাড়িতেই কেটেছে মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের শৈশব ও কৈশোর।
পাবনার একুশে বইমেলা উদযাপন পরিষদের কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, আমাদের দীর্ঘ আন্দোলনের ফসল। সুচিত্রার বাড়িটি উদ্ধার হওয়ায় পাবনার মানুষ খুশি।
পাবনা শহরের গোপালপুর মহল্লার হেমসাগর লেনে পৈতৃক বাড়িটিতে তার বাবা-মা ও ভাইবোনের সঙ্গে শৈশব-কৈশোর কাটিয়েছেন সুচিত্রা।
নবম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় ১৯৪৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে মেরিন ইঞ্জিনিয়ার দিবানাথ সেনের সঙ্গে সুচিত্রার বিয়ে হয়। এরপর স্বামীর সঙ্গে কলকাতায় চলে যান তিনি।
সুচিত্রা সেনের বাবা করুণাময় দাশগুপ্ত পাবনা পৌরসভার স্বাস্থ্য পরিদর্শক পদে কর্মরত ছিলেন। ১৯৫১ সালে তিনি অবসরে যান।
১৯৬০ সালে বাড়িটি জেলা প্রশাসনের কাছে ভাড়া দিয়ে পরিবার নিয়ে কলকাতায় চলে যান করুণাময় দাশগুপ্ত। তখন জেলা প্রশাসন বাড়িটিকে সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কোয়ার্টার বানায়। এরপর আর সুচিত্রা সেনের পরিবারের কেউ পাবনায় ফিরে আসেননি।
১৯৭৮ সালে আকস্মিকভাবেই অভিনয় জীবনের ইতি টেনে লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান সুচিত্রা। গত ১৭ জানুয়ারি কোলকাতায় ৮৩ বছর বয়সে মারা যান সুচিত্রা সেন।
১৯৮৭ সালে পাবনার সেসময়ের জেলা প্রশাসক সৈয়দুর রহমান সুচিত্রা সেনের পৈত্রিক বাড়িটিকে অর্পিত সম্পত্তি দেখিয়ে ইমাম গাজ্জালী ট্রাস্টকে ইজারা দেন। ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুস সুবহান এবং সেক্রেটারি জেলা জামায়াতের আইন বিষয়ক সম্পাদক আবিদ হাসান।
পরে ইজারার টাকা পরিশোধ না করায় ১৯৯৫ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রণালয় ইজারা বাতিল করে। এরপর ট্রাস্টের নেতারা বকেয়া পরিশোধ করে ১৯৯৫ সালের ১৫ আগস্ট ইজারা নবায়ন করান্
পাবনাবাসী বাড়িটি দখলমুক্ত করে সুচিত্রা সংগ্রহশালা করার দাবিতে আন্দোলন শুরু করলে ২০০৯ সালে পাবনা জেলা প্রশাসন বাড়িটির ইজারা বাতিল করে ইমাম গাজ্জালী ট্রাস্টকে দখল ছাড়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু জামায়াত নেতারা দখল না ছেড়ে উচ্চ আদালতে যান। আদালত তাদের পক্ষে ‘স্থিতাবস্থা’র আদেশ দেন।
২০১১ সালে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে আইনজীবী মঞ্জিল মোরসেদ বাড়িটি দখলমুক্ত করতে রিট করলে হাইকোর্ট বাড়িটি দখলমুক্ত করার নির্দেশ দেন।
গত ৪ মে উচ্চ আদালত লিভ টু আপিল বাতিল করে বাড়িটি দখলমুক্ত করার নির্দেশ বহাল রাখেন।
গত ১০ জুলাই পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে আজ বুধবার সকালে প্রশাসনের কর্মকর্তারা বাড়িটিতে উপস্থিত হয়ে তাতে তালা ঝুলিয়ে দেয়। বেঙ্গলিনিউজটোয়েন্টিফোর.কম