স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে ঢাকা-বরিশাল নৌ-রুটে ভাড়া ২৫ টাকা কমানো হয়েছে। সরকারি ভাড়ার তালিকা অনুযায়ী জনপ্রতি ২৫৫ টাকা (ডেক শ্রেণী) ছিল সেখানে ২৫ টাকা কমিয়ে ২২৫ টাকা করা হয়েছে।
আগামী ২৫ জুলাই থেকে এ ভাড়া কার্যকর হবে। এছাড়া নতুন ১৮টি লঞ্চ নামানো হচ্ছে। ফলে ১০ হাজারেরও অধিক অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা যাবে।
বুধবার সকালে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ ( বিআইডব্লিউটিএ) সম্মেলন কক্ষে বিআইডব্লিউটিএ আয়োজিত ঈদ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সভায় এ সিদ্ধান্তের কথা জানান বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থার নেতারা।
সভায় জানানো হয়, আগামী ২৪ জুলাই থেকে স্পেশাল লঞ্চ সার্ভিস চালু হয়ে ৫ আগস্ট পর্যন্ত চলবে। এছাড়া সভায় নৌ চলাচল সুষ্ঠু ও নিরাপদের জন্য আগামী ২৩ জুলাই থেকে মুন্সিগঞ্জে চড় ইজারাদারদের বালু উত্তোলন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান ড. মো. শামছুদ্দোহা খন্দকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল সংস্থার চেয়ারম্যান মাহবুব উদ্দিন আহমদ, নৌ-যান শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আশিকুল আলমসহ বিআইডব্লিউটিএ, বিআইডব্লিউটিসি, পুলিশ, র্যাব, কোস্ট গার্ড, লঞ্চ মালিক সমিতির নেতারা।
শামছুদ্দোহা খন্দকার জানান, এবার সদরঘাট নৌ রুট দিয়ে প্রায় ৩ কোটি মানুষ যাতায়াত করবেন। মাওয়া-বরিশাল, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও কিশোরগঞ্জে একটি করে ৪টি উদ্ধারকারী জাহাজ রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে ঈদ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিআইডব্লিটিএ কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
এছাড়া স্পেশাল সার্ভিসে প্রতিদিন ঢাকা-বরিশাল রুটে চলাচল করবে ১২টি লঞ্চ। অন্যদিকে ঈদের ১০দিন আগে থেকে স্টিমারের স্পেশাল সার্ভিস শুরু করা হবে বলে জানিয়েছে বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষ।
লঞ্চ মালিকদের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, সারাবছর রাজধানী থেকে দক্ষিণাঞ্চলগামী লঞ্চ গুলোতে ডেকে ২০০, সিঙ্গেল কেবিন ৮৫০ এবং ডাবল কেবিন ১ হাজার ৬০০ টাকা হারে ভাড়া নেয়া হয়। ভিআইপি কেবিনের ভাড়া নেয়া হয় প্রকারভেদে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা।
কিন্তু সরকারের সর্বশেষ নির্ধারিত লঞ্চভাড়া অনুযায়ী ডেকের ভাড়া ২৫৫, সিঙ্গেল কেবিন ১০৩২ এবং ডাবল কেবিন ১৬৪০ টাকা। সরকার নির্ধারিত ভাড়ার ক্ষেত্রে ভিআইপি কেবিনের ভাড়া নির্ধারণ করা নেই। সারাবছর লঞ্চ মালিকরা কম হারে ভাড়া নিয়ে লাভ করলেও ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহা আসলেই তারা সরকার নির্ধারিত ভাড়ার অজুহাত দেখিয়ে বাড়িমুখী ও কর্মস্থলমুখী যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে থাকেন। ঈদ পূর্ব এবং পরবর্তী ২০ দিন চলে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়।
লঞ্চ মালিক সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি গোলাম কিবরিয়া টিপু জানান, সরকার নির্ধারিত রেটের মধ্যে থেকেই এবারের ঈদে ডেক ২২৫, সিঙ্গেল (সাধারণ) ১০০০, সিঙ্গেল (এসি) ১১০০ এবং ডাবল (সাধারণ) ২০০০, ডাবল (এসি) ২২০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে ঈদ উপলক্ষে ৪ হাজার টাকার ভিআইপি কেবিনের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা। ২৬ ও ২৭ জুলাই ঢাকা থেকে ৯টি করে লঞ্চ বরিশালে রওনা হবে। ২৮ জুলাই থেকে লঞ্চের রোটেশন সিডিউল স্থগিত করে মালিকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। তখন মালিকরা ইচ্ছে করলে নির্ধারিত ৯টির বেশি লঞ্চ যেকোন রুটে চালাতে পারবেন।
ভাড়া বৃদ্ধি প্রসঙ্গে গোলাম কিবরিয়া টিপুসহ একাধিক লঞ্চ মালিকদের দাবি, সারাবছর লঞ্চ মালিকরা সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে ৩০ থেকে ৪০ ভাগ কম ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করে থাকেন। এতে অনেক রুটে মালিকদের লোকসানও হয়। ঈদের সময় যাত্রী বেশি হওয়ার কারণে ওই লোকসান কাটিয়ে ওঠার সুযোগ আসে।
তাছাড়া ঈদের আগে ও পরে সবগুলো রুটের যাত্রীশূন্য লঞ্চ নিয়ে ঢাকায় যেতে হয় বা ফিরতে হয়। তবে যাত্রীদের অভিযোগ, লঞ্চ মালিকরা ঘরমুখো লাখ লাখ মানুষের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে দুটি ঈদ উৎসবে সরকারি রেটের নামে যাত্রীদের শুভঙ্করের ফাঁদে ফেলেন। আর কোটি কোটি টাকা অতিরিক্ত ভাড়া হাতিয়ে নেন।