বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ মাদক মামলায় গ্রেপ্তার এড়াতে এবং বিচারাধীন মামলার সাজাভোগ থেকে রক্ষা পেতে মৃত্যু সনদ (ডেথ সার্টিফিকেট) নিয়েছিলেন আবদুস সালাম ওরফে ছালামত। এ জন্য তাকে ৩৫ হাজার টাকা খরচ করতে হয়েছে। এর মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান পান ২৫ হাজার টাকা আর ১০ হাজার টাকা দিতে হয় মামলায় নিযুক্ত আইনজীবীকে। আব্দুস সালাম মৃত্যুবরণ করেছে জেনে আদালত তাকে বেকসুর খালাসও দিয়েছেন।
মৃত্যু তালিকায় নাম লেখানোর ১৩ বছর পর গ্রেপ্তার হওয়া আবদুস সালাম এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য জানিয়েছেন গোয়েন্দা পুলিশকে। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে তার ছল-চাতুরি ও ছদ্ধাবেশ ধারণের আরো অজানা কাহিনী বের হয়ে এসেছে।
বিচারাধীন দুটি মাদক মামলার আসামি ও পুলিশের খাতায় ‘মৃত’ আবদুস সালাম ওরফে ছালামতকে রবিবার বিকেলে সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার দুবাগ ইউনিয়ন অফিসের সামনে থেকে গ্রেপ্তার করে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। গ্রেপ্তার হওয়া আবদুস সালাম বিয়ানীবাজার উপজেলার দুবাগ ইউনিয়নের গজুকাটা গ্রামের মৃত খুরশেদ আলীর ছেলে।
গ্রেপ্তারের পর রাতে সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ জানায়, সালামের তার বিরুদ্ধে মাদক আইনে দু’টি মামলা দায়ের করেছিল পুলিশ। ২০০১ সালে মামলা দু’টি সিনিয়র স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল সিলেটের বিচারক ইসমাইল মিয়ার আদালতে বিচারাধীন ছিল।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) ইউনুস মিয়া বলেন, ওই সময় মামলা থেকে রেহাই পেতে আবদুস সালামকে মৃত বানিয়ে আদালতে মৃত্যু সনদ দাখিল করেন তার আইনজীবী ভানু বাবু। এজন্য আবদুস সালামের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নেন ওই আইনজীবী। আর স্থানীয় দুবাগ ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান ওমর ফারুক পঁচিশ হাজার টাকা নেন।
ওসি আরো বলেন, ২০১১ সালের ২৮মে আবদুস সালাম মারা গেছেন বলে মৃত্যু সনদ দেন ওমর ফারুক। এই মৃত্যু সনদ আদালতে দাখিলের পর বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বিয়ানীবাজার থানাকে নির্দেশ দেন বিচারক। থানার তৎকালীন উপ সহকারী পরিদর্শক (এএসআই) আবু তাহের তদন্ত না করেই মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত জানিয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। থানা পুলিশের এই প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত চলমান মামলাটির বিচার কার্যক্রম স্থগিত করে আসামিকে বেকসুর খালাস দেন।
মামলা থেকে খালাস পাওয়ার প্রক্রিয়া চলাকালেই নিজের স্ত্রীকে তালাক দেন সালাম। এরপর থেকে ছদ্ধবেশে একই গ্রামে তারই ভগ্নিপতি রফই মিয়ার বাড়িতেই বসবাস করে আসছিলেন।
পরিদর্শক ইউনুস মিয়া আরো জানান, সম্প্রতি সালাম বেঁচে থাকার তথ্য তারা জানতে পারেন। বিষয়টি সিলেট জেলা পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনাকেও অবহিত করা হয়। এরপরই পুলিশ সুপারের নির্দেশে তিনিসহ ডিবির একটি টিম অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে।