খালেদার আত্মসমর্পণ না গ্রেফতার ॥ ডেটলাইন ৪ মার্চ

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: সবার দৃষ্টি এখন ৪ মার্চের দিকে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির দুই মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের কথা রয়েছে সেদিন। পুরান ঢাকার বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে বিশেষ জজ আদালতে তিনি যাবেন কি যাবেন না, তা নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। কিন্তু নেতা-কর্মীদের থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী ৫৭ দিন ধরে গুলশান কার্যালয়েই অবস্থান করছেন। তিনি আত্মসমর্পণ করবেন, নাকি গ্রেফতার করা হবে- বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের ভিতরে-বাইরেও এ নিয়ে তুমুল টেনশনের সৃষ্টি হয়েছে। ৪ মার্চের এই ডেটলাইন নিয়ে আলোচনা আছে সরকারি মহলেও।

খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বলছেন, নির্ধারিত তারিখে তিনি আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করবেন কিনা, সে ব্যাপারে দলীয় আইনজীবী ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে পুলিশ এর আগে আদালতের আদেশ অনুযায়ী যদি তাকে গ্রেফতার করে, সে বিষয়টি নিয়েও ভাবছে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম।জানা যায়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। সরকার পক্ষ মনে করছে, বিএনপি চেয়ারপারসন স্বেচ্ছায় ওইদিন আদালতে যাবেন। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে তিনি আদালতে জামিন চাইবেন। যদি তা না করে গুলশান কার্যালয়েই অবস্থান করেন, তখন পরিস্থিতি অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সিদ্ধান্ত নেবে। এক্ষেত্রে কার্যালয় থেকে বেগম জিয়াকে বাসায় পাঠিয়ে দেওয়ার চিন্তাভাবনাও চলছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটি সূত্রে জানা গেছে, আদালতে যাওয়ার প্রশ্নে দলের ভিতরে নানা আলোচনা আছে। তবে খালেদা জিয়ার মনোভাব অত্যন্ত শক্ত। তিনি বলেছেন, মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে মামলা করা হয়েছে। হয়রানি করার জন্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এ মামলার আইনজীবী বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘চেয়ারপারসন জামিন নিতে আদালতে যাবেন কিনা, তার কৌশল নির্ধারণে আমরা আইনজীবীরা খুব শিগগিরই বৈঠক করব। এর আগে তার আদালতে যাওয়া না যাওয়ার বিষয়ে কিছু বলা যাবে না। তবে পরিবেশ পরিস্থিতির আলোকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ সূত্র জানায়, ২৫ ফেব্র“য়ারি আদালত থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর ওইদিন রাতেই বিচারপতি টি এইচ খানের বাসায় বৈঠকে এ নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করেন বিএনপি সমর্থিত সিনিয়র আইনজীবীরা। গ্রেফতারি পরোয়ানা কিংবা খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের সিদ্ধান্তের পেছনে সরকারের কী কী উদ্দেশ্য থাকতে পারে তা নিয়েও আলোচনা হয়। বৈঠকে সিনিয়র এক আইনজীবী অভিমত ব্যক্ত করেন, সরকার যদি বেগম জিয়াকে গ্রেফতারই করে, তাহলে গুলশান কার্যালয়কেই যেন সাব-জেল হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বিএনপি প্রধানের শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় তার এ অভিমতের সঙ্গে সবাই একমত পোষণ করেন। বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেন, গুলশান কার্যালয়ে তালা ঝোলানো ছাড়াও সারা দেশে ২০ দলের নেতা-কর্মীদের মনোবল ভেঙে দেওয়ার জন্যই খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। একইভাবে ঢাকা সফরকালে ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিবের সাক্ষাৎ বিঘ্নিত করারও উদ্দেশ্য থাকতে পারে।সূত্রমতে, আন্দোলন প্রশ্নে অনড় অবস্থানে থাকা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যে কোনো পরিস্থিতিতেই গুলশান কার্যালয়ে থাকতে চান। এ সিদ্ধান্ত থেকে একচুলও নড়তে নারাজ তিনি। তাই দুর্নীতির দুই মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ার বিরুদ্ধে জামিন চাইতে আদালতে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। আদালতে জামিন চাইতে গেলে কার্যালয়ে ফিরতে না পারার আশঙ্কা বিএনপির নীতিনির্ধারকদের।দলের আরেকটি সূত্রের মতে, চলমান রাজনৈতিক সংকট মোকাবিলা বা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনতে খালেদা জিয়াকে নানাভাবে চাপে রাখার কৌশল এটি। তাকে গুলশান কার্যালয়ের বাইরে নিতে পারলে সেখানে ফিরতে দেওয়ার সম্ভাবনা নেই। ওই কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে বাসায় যেতে বাধ্য করা হতে পারে।তবে একাধিক আইনজীবী এও বলছেন, দুটি মামলাই জামিনযোগ্য। সেক্ষেত্রে জামিন চাইতে আদালতে যেতেও পারেন বিএনপিপ্রধান। যদিও এ ব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তাদের মতে, আদালতে জামিন না নিলে একতরফাভাবে সাক্ষী নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনকে সাজা দেওয়া হতে পারে। আর সরকার চাইলে কার্যালয় থেকেও বেগম জিয়াকে জোরপূর্বক বাসায় পাঠিয়ে দিতে পারে। তাই সার্বিক বিষয় নিয়ে দুই মামলার আইনজীবীরা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেবেন। এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘সরকার শুরু থেকেই চাচ্ছে, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গুলশান কার্যালয় ছেড়ে যান। কয়েকজন মন্ত্রীও একাধিকবার এ বিষয়ে হুমকি ধমকিও দিয়েছেন। তবে খালেদা জিয়া এখানে স্বস্তি ও নিরাপদ বোধ করছেন। গুলশান কার্যালয়ে থেকেই তিনি প্রায় দুই মাস ধরে সারা দেশে আন্দোলন পরিচালনা করছেন। তাছাড়া পত্র-পত্রিকাসহ মিডিয়াতে তাকে গ্রেফতারের কথা শোনা যাচ্ছিল, তারই প্রক্রিয়া হতে পারে এই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি। কিন্তু খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার কিংবা আদালতের মাধ্যমে সাজা দিলেও আন্দোলন বন্ধ হবে না। বরং আন্দোলনের মাত্রা আরও বাড়বে।’গ্রেফতারি পরোয়ানা এখন কোথায় : খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানা এখনো থানায় পৌঁছায়নি বলে দাবি করেছে পুলিশ। তবে রাষ্ট্রপক্ষে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী কবির হোসেন জানান, শুনেছি, গ্রেফতারি পরোয়ানা সংশ্লিষ্ট থানাগুলোতে পাঠানো হয়েছে। এখন প্রক্রিয়াগত কারণে পৌঁছাতে হয়তো বিলম্ব হতে পারে। এর আগে বুধবার গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর আদালতের এক কর্মচারী মোটরসাইকেলযোগে পরোয়ানাটি সংশ্লিষ্ট থানাগুলোতে নিয়ে যাওয়ার ছবি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়। গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৪ মার্চ যেহেতু জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের দিন, এর আগে গ্রেফতারি পরোয়ানা আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী কার্যকর করা হতে পারে। এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার (ডিবি) মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসনের গ্রেফতারি পরোয়ানা এখনো থানায় পৌঁছায়নি। থানায় পৌঁছানোর পর আদালত কী নির্দেশনা দিয়েছেন, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ সূত্র-বাংলাদেশ প্রতিদিন

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫