‘নারীর কর্মপরিবেশ শতভাগ নারীবান্ধব হয়নি’

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: মেহের আফরোজ চুমকি মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন গত বছরের জানুয়ারি মাস থেকে। তাঁর জন্ম ১৯৫৯ সালে। বাবা মুক্তিযোদ্ধা ময়েজউদ্দিন ১৯৮৪ সালে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শহীদ হন। মেহের আফরোজের মা বিলকীস বেগম সমাজসেবক ছিলেন। মেহের আফরোজ ১৯৮৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ভিদ বিজ্ঞানে অনার্সসহ মাস্টার্স পাস করেন। তিনি জাতীয় সংসদে ১৯৯৬-২০০১ সালে প্রথম সংরক্ষিত মহিলা আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। পরে ২০০৯-২০১৩ ও ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে পর পর দুবার গাজীপুর–৫ (কালীগঞ্জ) আসন থেকে সরাসরি ভোটে সাংসদ নির্বাচিত হন। তিনি কমনওয়েলথ উইমেন অ্যাফেয়ার্স মিনিস্টারদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি জাতীয় একটি দৈনিকে সাক্ষাৎকারদেন।

দেশের নারীদের ক্ষমতায়নের বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
প্রতিমন্ত্রী: নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়টি বাটিতে তরকারি আছে এবং তা দেখা যাচ্ছে, সেভাবে দেখলে হবে না। ক্ষমতায়নকে সামগ্রিকভাবে না দেখে একটি কর্নার থেকে দেখতে চাইলেও মূল অর্থ বোঝা যাবে না। নারীরা শিক্ষায় এগিয়ে আছে। কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের গড় মাথাপিছু আয় বেড়েছে। এতে নারীর আয়ও যুক্ত আছে। তৃণমূলের যে নারী একসময় ঘরের বাইরে বের হওয়ার কথা চিন্তা করতে পারতেন না, সেই নারী এখন বাজারে পণ্য বিক্রি করছেন। মন্ত্রণালয়ের ভালনারেবল গ্রুপ ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (ভিজিডি) কার্যক্রমের আওতায় সারা দেশের সাড়ে সাত লাখ হতদরিদ্র নারীকে প্রতি মাসে ৩০ কেজি চাল বা ২৫ কেজি পুষ্টি আটা খাদ্য সহায়তা হিসেবে দেওয়া হচ্ছে। দুই বছর ধরে পাচ্ছেন এ সহায়তা। চাল বিতরণের সময় জানতে চাই, কার কার কাছে মুঠোফোন আছে হাত তোলেন। দেখা যায়, সহায়তা নিতে আসা প্রতিটি নারী হাত তুলছেন। তার মানে, তাঁদের জীবনযাত্রার ধরনে পরিবর্তন এসেছে। রাজনৈতিকভাবেও নারীরা ক্ষমতায়িত। ১৯৯৬ সালে যখন সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হলাম তখন মনের মধ্যে ভয় কাজ করত। মাদ্রাসার ইমাম বা অন্যরা নারী নেতৃত্ব মেনে নেবেন, তা চিন্তা করাটা কঠিনই ছিল। তখন আমার কাছে অনেকেই জানতে চাইতেন, আপনি তো নির্বাচিত হলেন, তো আপনার ভাই কবে আসছে? তার মানে তারা ধরেই নিয়েছিলেন, আমি মহিলা মানুষ, ঠিক আছে নির্বাচিত হয়েছি, তবে বেশি দিন তো আর থাকব না। আমার ভাই এ পদে আসবেন। তবে বর্তমানের চিত্র পালটে গেছে। আমার সামনে পুরুষরা বসে আছেন। তাঁরা আমার কথা মেনেও নিচ্ছেন। তাই রাতারাতি সবকিছু পালটে যাবে, তা চিন্তা করলে হবে না।
কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদসহ তৃণমূলের যে নারীরা নির্বাচিত হচ্ছেন, তাঁরা সত্যিকার অর্থে কি কাজ করতে পারছেন?
প্রতিমন্ত্রী: আগে এসব জায়গায় নারীদের আসার কোনোই সম্ভাবনা ছিল না। এখন তাঁরা সরাসরি নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়ী হচ্ছেন। ধাপে ধাপেই সামনের দিকে এগোতে হবে।
নারীর ক্ষমতায়নের যে চিত্রের কথা বললেন, তা কি সন্তোষজনক?
প্রতিমন্ত্রী: সন্তোষজনক তো বলাই যাবে না। দেশের সাতটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে কম্পিউটারসহ বিভিন্ন বিষয়ে নারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। ধর্মীয়ভাবে নারীদের যেটুকু সম্পত্তি পাওয়ার কথা, তা যাতে পায়, তার জন্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সচেতনতামূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ড চালানো হচ্ছে। কেননা সবকিছুর আগে নারীর নিজের সচেতনতা জরুরি।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় জাতীয় নারী উন্নয়ননীতি–২০১১ প্রণয়ন করেছে। সরকার এ নীতি বাস্তবায়নে কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে?
প্রতিমন্ত্রী: মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জাতীয় নারী উন্নয়ননীতি বাস্তবায়নে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। কর্মপরিকল্পনায় স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে নয় বছরে এ নীতি বাস্তবায়িত হবে। কার্যক্রমগুলো বাস্তবায়নে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগে নারী উন্নয়নে ফোকাল পয়েন্ট (যুগ্ম সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তা) নিয়োগ করা হয়েছে। এই ফোকাল পয়েন্ট জেন্ডার বাজেট কীভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে, তা নজরদারির আওতায় রেখেছে। কোন কোন ক্ষেত্রে নারীর সংখ্যা বাড়াতে হবে, আসলেই বাড়ছে কি না ইত্যাদি বিষয়গুলোও তদারকি করা হচ্ছে। নারীর অধিকার জানানোর বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
একদিকে নারীর ক্ষমতায়ন হচ্ছে, অন্যদিকে নির্যাতনের মাত্রা বাড়ছে…
প্রতিমন্ত্রী: এটা স্বীকার করতেই হবে যে সহিংসতার মাত্রা কমেনি। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ দেখে মাঝে মাঝে মনে হয় সহিংসতা বা নির্যাতন বাড়ল কি না। এ ক্ষেত্রে পুরুষের মনমানসিকতা পাল্টাতে হবে। পুরুষ নিজেদের মাসলম্যান মনে করে। যখনই সুযোগ পায়, পৌরুষকে কাজে লাগায়। নারী নির্যাতন প্রতিরোধে দেশে অনেক আইন আছে। সরকার পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন ২০১০ করেছে। সরকার কখনোই চায় না পরিবারটি ভেঙে যাক। এই আইনে পরিবারের মধ্যে থেকেই সুরক্ষা পাওয়ার বিধান করা হয়েছে। তবে শুধু আইন থাকলেই চলবে না। আইনের বাস্তবায়ন জরুরি। পুলিশ বিভাগে নারী পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। দেশের ছয়টি বিভাগে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে ভৌত অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। নির্যাতনের শিকার নারীদের আইনি সহায়তার জন্য টোল ফ্রি হেল্পলাইন ১০৯২১ চালু করা হয়েছে। তবে এ ধরনের অবকাঠামোসহ অন্যান্য সেবা বাড়াতে হবে।
কর্মক্ষেত্রে নারীর সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু নারীর কর্মপরিবেশ কতটুকু নারীবান্ধব হয়েছে?
প্রতিমন্ত্রী: নারীর কর্মপরিবেশ শতভাগ নারীবান্ধব হয়নি। কর্মপরিবেশে কেউ ইভ টিজিং করলে প্রতিকার পাওয়ার জন্য প্রতি অফিসে একটি অভিযোগ বাক্স রাখতে বলা হয়েছে। কিন্তু অফিসের বস বা ওপরের দিকের কোনো কর্মকর্তা নিজেই ইভ টিজিং করে থাকলে তখন প্রতিকার পাওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দেয়। কেননা তখন সেই বসের বিচার কে করবে? অনেক নারী প্রতিবাদও করতে চান না। এ ক্ষেত্রে নারীর নিজের প্রতি সম্মানবোধ বাড়লে প্রতিবাদ না করে থাকতে পারবেন না।
এবারের আন্তর্জাতিক নারী দিবসের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘নারীর ক্ষমতায়ন, মানবতার উন্নয়ন।’ বিষয়টি কতটা সময়োপযোগী?
প্রতিমন্ত্রী: শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী। যুদ্ধ, রাজনৈতিক সহিংসতা, অর্থনৈতিক মন্দা সব ক্ষেত্রেই প্রথম শিকার নারী। ঘরে–বাইরে এই নারীর প্রতি যদি মানবিক ব্যবহার করা হয়, মানবতার লঙ্ঘন কমে যেতে বাধ্য। তাই শুধু ক্ষমতায়ন নয়, মানবতার উন্নয়নের বিষয়টিতেও গুরুত্ব দিতে হবে। তাই এবারের প্রতিপাদ্যটি সময়োপযোগী হয়েছে বলেই আমার মনে হয়।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। সৌজন্যে- প্রথম আলো

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫