তিস্তা চুক্তিতে মমতার ওপর পূর্ণ আস্থা বাংলাদেশের

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: ঢাকা সফর শেষে তিস্তা চুক্তি নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর আস্থা রাখেছে বাংলাদেশ। তিস্তা চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশের আশাবাদ ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভুমিকা নিয়ে রোববার ভারতের দৈনিক আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, মমতার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের অন্য নেতাদের আলোচনার পরে ঢাকার বিশ্বাস পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এই চুক্তির পথে অন্তরায় নন।

তিস্তা চুক্তি নিয়ে শনিবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব শহিদুল হক আশার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ঢাকায় এসে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তিস্তা চুক্তি নিয়ে তার ওপর আস্থা রাখতে বলেছেন। আমরা তাঁর ওপর পূর্ণ আস্থা রেখেছি। তিস্তা চুক্তির বিষয়ে তারা এখন অনেক বেশি আশাবাদী’।
কিন্তু তার জন্য কত দিন সময় লাগবে? এ প্রশ্নের জবাবে শহিদুল হক বলেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কিছুদিনের মধ্যেই বাংলাদেশ সফর করতে পারেন। আমরা সেই সফরের জন্য অপেক্ষা করছি’। তা হলে কি মোদীর বাংলাদেশ সফরে এ বিষয়ে কোনও ঘোষণার আশা করছে ঢাকা? পররাষ্ট্রসচিবের জবাব, ‘দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী একসঙ্গে বৈঠকে বসলে কিছু না কিছু ফল তো মেলেই।” তার পরেই অবশ্য তিনি যোগ করেছেন, তিস্তার আগে তো স্থলসীমান্ত চুক্তিটি রয়েছে। ভারতের সঙ্গে আরও কয়েকটি ক্ষেত্রে নতুন বোঝাপড়া গড়ে উঠছে। তা নিয়েও কোনও উল্লেখযোগ্য ঘোষণা হতে পারে।
ভারত ও ভারত মহাসাগর শীর্ষক এক আর্ন্তজাতিক সম্মেলনে যোগ দিতে বড়সড় প্রতিনিধি দল নিয়ে ভারতে গিয়েছেন পররাষ্ট্রসচিব শহিদুল হক। এই সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব এস জয়শঙ্করেরও আসার কথা ছিল। সম্মেলনের পাশাপাশি দু’দেশের সচিবের আরও একবার বৈঠকে বসার কথা ছিল। কিন্তু দিল্লিতে ব্যস্ততার কারণে জয়শঙ্কর ভুবনেশ্বরে আসতে পারেননি। ফলে সেই বৈঠকটি হচ্ছে না।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র মতে, ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক কোনও দিনই একটি বিষয় নিয়ে আটকে থাকেনি। আগামী সপ্তাহেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী দিল্লি গিয়ে বিদ্যুৎ রফতানি সংক্রান্ত আলোচনা করবেন। এছাড়া সুন্দরবনের পরিবেশ রক্ষায় দু’দেশ একসঙ্গে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে রাজি হয়েছে। শিলং-গুয়াহাটি-ঢাকা এবং কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা রুটে নতুন বাস নিয়েও কথা শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।এত দিন ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য চুক্তি প্রতি তিন বছর অন্তর করা হত। একটি দীর্ঘমেয়াদি বাণিজ্যিক চুক্তির জন্য নয়াদিল্লি বেশ কয়েক বছর ধরেই বলে আসছে। ঢাকা এখন তাতে সম্মত হয়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব বলেন, “ভারতের দীর্ঘদিনের দাবি আমরা মেনে নিয়েছি। তিন বছরের বদলে ১০ বছরের বাণিজ্যিক চুক্তি হচ্ছে। এর ফলে উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক যোগাযোগ আরও বাড়বে।”
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাংশ বলছেন, স্থলসীমান্ত চুক্তির অগ্রগতির কথা মাথায় রেখেই বাংলাদেশ দীর্ঘমেয়াদি বাণিজ্যিক চুক্তিতে সম্মত হয়েছে। ২০১৩ থেকেই বাংলাদেশ ৫০০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ পাচ্ছে ভারত থেকে। সম্প্রতি আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দেওয়ার ঘোষণা করেছে নয়াদিল্লি। ভবিষ্যতে ত্রিপুরার পালটানা থেকেও বিদ্যুৎ যাবে বাংলাদেশে। কিন্তু এর মধ্যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কথা মাথায় রেখে তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষর করাটা জরুরি বলে মনে করছেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
ঢাকায় মমতার সফরসঙ্গী একজনের কথায়, ‘মুখ্যমন্ত্রী এখনও মনে করেন, তিস্তার আরও বেশি পানি বাংলাদেশকে দিলে উত্তরবঙ্গে তার রাজনৈতিক প্রভাব পড়বে। তা মোকাবিলার জন্য তিনি কেন্দ্রের কাছে মোটা টাকার ক্ষতিপূরণ প্যাকেজ চেয়েছেন।’ তিনি মনে করেন, কেন্দ্র স্পষ্ট আশ্বাস না দিলে মমতাও হয়তো তিস্তা নিয়ে চূড়ান্ত ছাড়পত্র দিবেন না।
ভারতের কূটনীতিকরা মমতার এই মনোভাবের কথা জানেন। এখানে এক কূটনীতিক বলেন, ‘বরফ গলতে শুরু করেছে এটাই আশার কথা। স্থলসীমা চুক্তিটি নিয়ে সব পক্ষই এখন রাজি। সেটা করা হলে তার পর তিস্তার দিকে তাকানো হবে। বাংলাদেশকেও সেই বার্তা দেওয়া হয়েছে।’প্রায়ই একই সুর শোনা গেছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিবের কথাতেও। তিনি বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ঢাকায় গিয়ে বুঝেছেন, তিস্তা চুক্তি বাংলাদেশের পক্ষে কতটা প্রয়োজনীয়। ১৭ বছর পর তার ঢাকা সফর অত্যন্ত ইতিবাচক।’ মমতা এ বিষয়ে যে আলোচনা শুরুর প্রস্তাব দিয়েছেন, তা নিয়ে দু’দেশ কাজ শুরু করেছে বলেও তিনি জানান।ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ সফরে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা রুটে বাস চালুর প্রস্তাব দিয়েছিলেন। মমতা ঢাকা থেকে ফেরার পরই এ বিষয়ে আলোচনা শুরু করেছে ঢাকা। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব শহিদুল হক জানান, নয়াদিল্লিরও এ বিষয়ে আপত্তি নেই।
মমতার সফরের পর তিস্তা ও স্থলসীমান্ত চুক্তি নিয়ে যখন আশার সঞ্চার হয়েছে, তখন খাগড়াগড় কিংবা সারদার টাকা বাংলাদেশে খাটানোর মতো বিতর্কিত বিষয় নিয়ে চর্চায় আগ্রহ দেখাচ্ছেন না শহিদুল হক। খাগড়াগড় প্রসঙ্গে তার বক্তব্য সন্ত্রাস মোকাবিলায় দু’দেশের মধ্যে নিরাপত্তা এজেন্সিগুলির সমন্বয় খুব ভালো। তার কথায়, জঙ্গিদের কোনও দেশ হয় না। ফলে তারা কোথা থেকে এসে কোথায় হামলা চালাচ্ছে, তার চেয়েও বড় কথা সন্ত্রাস মোকাবিলায় সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। যা ঢাকা এবং নয়াদিল্লি করছে বলে মনে করেন পররাষ্ট্রসচিব শহিদুল হক। বেঙ্গলিনিউজটোয়েন্টিফোর.কম ডেস্ক

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫