কদর বেড়েছে সিসি ক্যামেরার, মান নিয়েও শঙ্কা

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥

ঢাকা: দেশে একের পর এক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে আলোচনা সমালোচনা চলছে। চলমান পরিস্থিতিতে সরকারের পাশাপাশি অনেকে ব্যক্তিগতভাবেই নিজেদের নিরাপত্তা জোরদারের নানা উদ্যোগ নিতে শুরু করেছেন। এর ধারাবাহিকতায় নিরাপত্তা নজরদারি বাড়াতে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার কদর বাড়ছে। নিরাপত্তা ইস্যুতে এখন বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সিসি ক্যামেরা বসানোর উদ্যোগ নেয়ায় এ খাতের ব্যবসাও জমে উঠেছে বেশ। তবে সিসি ক্যামেরার ব্যবহার বাড়ার পাশাপাশি এর গুনগত মান নিয়ে জালিয়াতির আশঙ্কাও রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, সাধারণত চীনের তৈরি সিসি ক্যামেরায় বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। দেশের বাজারে ৯০ শতাংশ বাজার দখল করে রেখেছে চীনের তৈরি ক্যামেরা। এসব ক্যামেরার দাম তুলনামূলক কম। এছাড়া তাইওয়ান, জার্মান, কুরিয়া থেকেও আমদানি হচ্ছে উন্নতমানের সিসি ক্যামেরা। তবে তুলনামূলক দাম বেশি হওয়ায় বাজারে এসব দেশের ক্যামেরা কম পাওয়া যায়। এছাড়া কম দামে যেসব ক্যামেরা পাওয়া যাচ্ছে সেগুলোর গুণগত মান নিয়েও চিন্তিত অনেকে।

এ সম্পর্কে মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহীম (বীর প্রতীক) বাংলামেইলকে বলেন, ‘একদিকে দেশের জনসংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি অপরাধ প্রবণতা বেড়েছে। অপরদিকে দেশের গোয়েন্দাদের সংখ্যা সীমিত। সিসি ক্যামেরার ব্যবহার গোয়েন্দা সংস্থার সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। নিরাপত্তা ইস্যুতে সিসি ক্যামেরার ব্যবহার বাড়ছে তা ভালো দিক।’ তবে এটার সুফল পেতে হলে সিসি ক্যামেরার গুণগত মান ও জালিয়াতির হাত থেকে মুক্ত রাখতে হবে বলে মনে করেন তিনি।

সিসি ক্যামেরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জনিয়েছেন, আগে সিসি ক্যামেরা সম্পর্কে বোঝানোর জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হতো। এখন সিসি ক্যামেরা কী ধরনের নজরদারি করে এটা কাউকে বুঝাতে হয় না। এখন জনগণ অনেক সচেতন হয়েছে। অন্তত পক্ষে সিসি ক্যমেরায় যেকোনো অপরাধী সনাক্ত হয়। তাই যাদের সামর্থ আছে তারা বাসা বাড়ী ও প্রতিষ্ঠানে ব্যক্তিগতভাবে দুএকটি সিসি ক্যামেরা বসিয়ে নিচ্ছে। ফলে সিসি ক্যামেরা বাজারে লেনদেন প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

তারা জানান, বিশেষ করে দেশে বিদেশি নাগরিকসহ পরপর কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের পর জনগণ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। যারা আগে নিরাপত্তা নজরদারির বিষয়ে আগ্রহী ছিল না সেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এখন সিসি ক্যামেরার জন্য মার্কেটমুখি হচ্ছে। ফলে সিসি ক্যামেরার দোকানগুলোর সামনে নিয়মিত ক্রেতাদের পদচারণা বাড়ছেই।

সরেজমিনে রাজধানীর স্টেডিয়াম, বসুন্ধরা সিটি, এলিফ্যান্ট রোড, বায়তুল মোকারম মার্কেটে গিয়ে দেখা গেছে, সিসি ক্যামেরার দোকানগুলোতে ক্রেতারা ভীড় করছে। একই সঙ্গে তারা ভালো মন্দ যাচাই বাছাই করছে। কেউ কেউ ক্যামেরার টুকিটাকি সমস্যা সমাধানের জন্য আসছে।

বায়তুল মোকারম মার্কেটের সিসি ক্যামেরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ক্যামেরা ভিশননে ক্রেতা বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মরত শেখ আবুল হাশেমের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘দেশে হত্যাকাণ্ডসহ নানা ধরনের অপরাধ প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে তাতে আমরা উদ্বিগ্ন। তাই আমাদের কোম্পানির পর্ষদ পুরো প্রতিষ্ঠানে সিসি ক্যামেরার বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আর সিদ্ধান্ত মোতাবেকই সিসি ক্যামেরা কিনতে এসেছি।’

তিনি বলেন, ‘সিসি ক্যামেরা ২৪ ঘণ্টা অ্যাক্টিভ থাকলে কেউ অপরাধ করে পার পাবে না। এ ক্যামেরা থাকলে অপরাধী শনাক্ত হবে। সিসি ক্যামেরার কারণে অপরাধ আরও কমে যাবে।’

সিসি ক্যামেরা আমদানিকারক ক্যামেরা ভিশনের স্বত্ত্বাধিকারী আব্দুস সালাম জানান, ‘আগে ক্যমেরা বিক্রি করার জন্য কর্মচারীরা মার্কেটিং করতো। তবুও সিসি ক্যামেরা বসানোর আগ্রহ দেখা যেতো না। কিন্তু কিছুদিন আগে দু’জন বিদেশি নাগরিক, ব্লগার, প্রকাশক হ্ত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর প্রতিনিয়ত ক্রেতাদের ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। নিরাপত্তা নজরদারি বাড়াতে এখন ব্যক্তিগতভাবে অনেকে সিসি ক্যামেরা বসানোর উদ্যোগ নিচ্ছে।’ এছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নজরদারীর জন্যও এর কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করছেন তিনি।

ক্যামেরা ভিশনের ম্যানেজার নজরুল ইসলাম জানান, আগে দিনে সিসি ক্যামেরা বসাবে এমন একজন পার্টি পাওয়া যেতো না। এখন দিনে দুএকটি ক্যামেরা ছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অর্ডার রয়েছেই। তিনি বলেন, ‘গত সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার দুদিনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ১৫০টি ক্যামেরা স্থাপন করেছি।’

জানা গেছে, ক্যামেরার দাম নির্ভর করে কয়েকটি বিষয়ের উপর। এর মধ্যে ক্যামেরার গুণগত মান, লেন্স এবং প্রস্তুতকারী কোম্পানির টেকসই নিশ্চয়তার উপর ক্যামেরার দাম নির্ভর করে। বাজারে চায়নার ডব্লিউএনটি, ইয়াডো, কুরিয়ার কেমটেক্স, তাইওয়ানের কেমপ্রো বেশি চলছে। কোম্পানি ও মানভেদে প্রতিটি ক্যামেরা সর্বনিম্ন ২ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১২ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।

ক্যামেরা জোনের স্বত্ত্বাধিকারী মাসুদ জানান, একটি ক্যামেরা স্থাপন করে নিরাপত্তা নজরদারি করতে সর্বনিম্ন ৫ হাজার টাকা খরচ পড়বে (রেকর্ডিং ছাড়া) । আর যদি কেউ এক মাস পর্যন্ত ভিডিও রেকর্ড রাখতে চায় তাহলে খরচ পড়বে ১৫ হাজার টাকা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজধানীর অনেক স্থানেই নিরাপত্তা নজরদারী ইস্যুতে সরকারি উদ্যোগে ক্যামেরা বসানো হয়েছে। বিভিন্ন সময় অপরাধ সংগঠিত হলেও এসব ক্যামেরায় ভিডিও ফুটেজের রেজুলেশন ভালো না হওয়ায় অপরাধীদেরকে শনাক্ত করা যাচ্ছে না।

তারা বলছেন, এ ধরনের ক্যামেরা কেনার আগে এ প্রযুক্তি সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। সিসি ক্যামেরায় স্থাপনে ও রক্ষণাবেক্ষণ দক্ষ জনবল দ্বারা পরিচালিত হলেই সঠিক কাজে আসবে।

এফবিসিসিআই পরিচালক সাফকাত হায়দার বাংলামেইলকে বলেন, ‘দেশে পরপর কয়েকটি বড় ধরনের অপরাধ সংগঠিত হওয়ায় মানুষ নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। ফলে এখন মানুষের মধ্যে সিসি ক্যামেরা স্থাপনে হিড়িক পড়েছে। তবে দেশের মানুষ এ ক্যামেরা সম্পর্কে এখনও অনেকটাই অদক্ষ। তাই তারা এসব ক্যামেরার সঠিক ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারছে না। এছাড়া যারা এসব ক্যামেরা স্থাপন করে তারাও অদক্ষ। ফলে ক্যামেরার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।’

টিএসসিতে হাজার হাজার মানুষের ভিড়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সেখানে সিসি ক্যামেরা থাকলেও ফুটেজে অপরাধীদের অস্পষ্ট সনাক্ত করা হয়। এছাড়া এমন অনেক ঘটনাই দেশে ঘটেছে যেখানে সিসি ক্যামেরা নজরদারি ছিল কিন্তু ফুটেজে শনাক্ত হয়নি। আর এসবই অদক্ষ কারিগরের মাধ্যমে স্থাপনের ফলে হয়েছে। এছাড়া অদক্ষতার কারণে গুণগত মান নিয়েও দেখা দিয়েছে নানা সংশয়।’ তাই এসব ক্যামেরা স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণে দক্ষ জনবল তৈরির কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন তিনি। বাংলামেইল২৪ডটকম

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫