স্টাফ রিপোর্টার ॥
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় রোববার রাজধানীসহ সারাদেশে গণজাগরণ মঞ্চের উদ্যোগে আনন্দ মিছিল বের হবে।
শনিবার মধ্যরাতে ফাঁসির খবরে আনন্দ উল্লাসে ফেটে পড়ে গণজাগরণ মঞ্চের হাজারও মানুষ। তারা নেচে-গেয়ে, ফুল ছিটিয়ে, মিষ্টি বিতরণ করে আবেগ-অনুভূতি প্রকাশ করে। এ সময় সংবাদমাধ্যমকে সারা দেশে গণজাগরণ মঞ্চের উদ্যোগে আনন্দ মিছিল বের হওয়ার তথ্য জানান মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার।
রোববার বেলা ৩টায় সারাদেশের গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীদের বিজয় মিছিলে অংশ নেওয়ার জন্য আহ্বান জানান ডা. ইমরান।
এর আগে শনিবার মধ্যরাতে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা জয় বাংলা স্লোগানে গোটা শাহবাগ মুখরিত করে তোলে। তারা স্লোগান ও নৃত্যের তালে তালে বিরাটাকৃতির লাল-সবুজ পতাকা নিয়ে আশপাশের এলাকা প্রদক্ষিণ করে। বয়সের ভারে ন্যুব্জ, প্রবীণ ও মাঝবয়সী মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, তরুণ প্রজন্মের টগবগে যুবক, ছাত্র-শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, নারী কর্মী, বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীসহ নানা বয়সী ও নানা শ্রেণী-পেশার হাজার হাজার উৎফুল্ল মানুষ এই আনন্দ উৎসবে অংশ নেয়।
ফাঁসি কার্যকরের পরই তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার বর্তমান সরকার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, বাংলার মাটিতে এই দুজন কুখ্যাত রাজাকারের ফাঁসি কার্যকরের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি আবারও প্রমাণ করল তারা সবই পারে। শত ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত ও বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে স্বাধীনতা যুদ্ধ তথা মুক্তিযুদ্ধের এই দুই বিরোধী স্বনামধন্য ও ঘৃণিত রাজাকারের ফাঁসি কার্যকর করা একটি ঐতিহাসিক ঘটনা।
তিনি বলেন, গণজাগরণ মঞ্চের শত শত কর্মীসহ আমরা রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে, অসংখ্য দিন শুধু এই ফাঁসির জন্যই রাস্তায় কাটিয়েছি, মিছিল-মিটিং করেছি। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে শত কোটি শোকরিয়া যে, আমরা শেষ পর্যন্ত বিশ্ববাসীকে একটি স্বচ্ছ বিচারের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি উপহার দিতে পেরেছি।
ফাঁসির খবর প্রচার হওয়ার পর থেকেই শত শত মানুষ সে রাাতের মতো স্বতঃস্ফূর্তভাবে এসে গণজাগরণ মঞ্চের আনন্দ উৎসবে যোগ দেয়। রাত দুটার দিকে শাহবাগ, টিএসসি, ঢাকা মেডিকেল, চানখাঁরপুল, নাজিমউদ্দিন রোডসহ বিশাল এলাকাজুড়ে মানুষের ঢল নামে। সৃষ্টি হয় এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের। স্বাধীনতাবিরোধী এই দুই হাই প্রোফাইলের কুখ্যাত ও ঘৃণ্য রাজাকারকে ফাঁসির দড়িতে হত্যার পর মধ্যরাতে ঢাকায় সব শ্রেণী-পেশার মানুষের মধ্যে এত বিপুল উল্লাস আর কখনও কেউ দেখেছে কিনা তা কেউ বলতে পারেনি। এ এক অবিশ্বাস্য অনুভূতি, স্মরণীয় মুহূর্ত। কুখ্যাত ও ঘৃণিত রাজাকারদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৪৪ বছরের চাপা ক্ষোভের এভাবে আনন্দফুর্তির মধ্য দিয়ে বহিঃপ্রকাশই প্রমাণ করে, এদেশের মানুষ কতটা স্বাধীনতাপ্রেমী, মুক্তিযুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
সাকা ও মুজাহিদের ফাঁসির রায় কার্যকরের দাবিতে শুক্রবার বিকাল থেকেই শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের শত শত কর্মী অবস্থান গ্রহণ করে। শনিবার বিকালের মধ্যে পুরো শাহবাগ লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। তারা দেশাত্মবোধক গান ও কবিতা পরিবেশনের মধ্য দিয়ে ফাঁসি কার্যকরের প্রহর গুনছিলেন। এর ফাঁকে ফাঁকে চলতে থাকে বক্তৃতা ও স্লোগান। বিকাল থেকেই শাহবাগের চারদিকে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলে। দীর্ঘ অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক-উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সহ-সাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম, সংগঠক সনাতন, তাহমিনা সুলতানা, সাজেদা সাজু, আকরামুল হক, মাফুজা হক, সুমন, শিবলী হাসান প্রমুখ।