কালীগঞ্জ-পূবাইল মুক্ত দিবস আজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥
(গাজীপুর)।
আজ ১৫ ডিসেম্ভর। ১৯৭১’র এই দিনে হানাদার মুক্ত হয় পূবাইল ও কালীগঞ্জ। একটানা ৩ দিন যুদ্ধ শেষে পাক হানাদাররা মুক্তি ও মিত্র বাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয় এবং নিহত হয় প্রায় শতাধিক পাকসেনা। বিজয়ের এক দিন আগে এই এলাকা শত্রু মুক্ত হলেও হানাদাররা ধ্বংস করে দেয় গ্রামের পর গ্রাম আর আগুন জ্বালিয়ে নিশ্চিহ্ন করে হাজার হাজার ঘরবাড়ি এবং নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে শত শত মানুষকে, লাঞ্ছিত করে অনেক মা বোনের। অনেকে হয় মা, বাবা, ভাই, বোন, স্ত্রী ও পুত্র হারা। অতপর এভাবেই অন্যান্য স্থানের মত দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর এই দিনে হানাদার মুক্ত হয় পূবাইল ও কালীগঞ্জ। জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে অংশরত স্থানীয় অনেক মুক্তি সেনারা তাদের স্মৃতিচারন করেণ এভাবেই।

টঙ্গী থেকে ওই পথে তখন একমাত্র রেল ছাড়া যোগাযোগের অন্য কোন মাধ্যম ছিলনা। তাই পাকবাহিনী সর্বশেষ তাদের ঘাটি স্থাপন করেন পূবাইল রেল স্টেশন ও তার আশপাশসহ পূর্বদিকে বালু নদীর সেতু পর্যন্ত এলাকা জুড়ে। ফলে ওই এলাকার চারিপাশের বহু গ্রাম জ্বালিয়ে দেয় পাক-হানাদার বাহিনী। এভাবে বিজয়ের কয়েক মাস আগে থেকে শুরু হয় ওই এলাকায় হানাদারদের বর্বর অত্যাচার ও জ্বালাও পোড়াও এর নৃশংসতা। এর মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ্য গ্রামগুলো হলো, নয়ানীপাড়া, বাড়িয়া, ছোটকয়ের সোরল, সাপমারা, ভাদুন ও পূবাইল বাজার। এদেশীয় দোসরদের সহযোগিতায় হানাদারবাহিনী ওই এলাকায় ঢুকে শতশত নারী পুরুষকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে এবং আগুন জ্বালিয়ে নিশ্চিহ্ন করে দেয় উল্লিখিত গ্রামগুলো। এর প্রধান অন্তরায় হলো, গ্রামগুলোতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বসবাস ছিল উল্লেখযোগ্য হারে। এভাবে বিজয়ের কয়েক মাস আগে থেকে শুরু হয় উক্ত এলাকায় পাক-হানাদারদের বর্বর অত্যাচার হত্যা ও জ্বালাও পোড়াও এর তান্ডব। এসকল নির্যাতনের উপসংহার হিসেবে ১১ ডিসেম্বর থেকে ভারতীয় মিত্র বাহিনী মুক্তি যোদ্ধাদের সহায়তায় নরসিংদী থেকে কালীগঞ্জে ঢুকতে শুরু করে রেল যোগে। ১৩ ডিসেম্বর কালীগঞ্জের বান্দাখোলা গ্রাম থেকে গ্রুপ কমান্ডার বদরুজ্জামান খসরুর দল ও রূপগঞ্জের ২ দলসহ ভারতীয় বাহিনীর সহযোগিতায় পাক বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেয় তারা। পরে মুক্তি ও মিত্র বাহিনী পাক-হানাদারদের মোকাবেলা করার জন্য তাদের অবস্থান সংহত করে কালীগঞ্জের নলছাটায়। অপর গ্রুপ কমান্ডার আঃ বাতেনের দল থাকে নলছাটা থেকে বাড়িয়া হয়ে তিতারকুল পর্যন্ত এলাকা জুড়ে। তারা এনকাউন্টারে থাকে জয়দেবপুর অর্ডন্যান্সে অবস্থানরত পাক সেনাদের প্রতিরোধে।

পরে একটানা ৩ দিন মিত্র ও মুক্তি বাহিনীর তোপ কামান ও মর্টার শেলের আক্রমনে ক্ষত বিক্ষত করে দেয় পূবাইলের পাক ঘাটি। এতে নিহত হয় প্রায় শতাধিক পাক সেনা। এই অবস্থায় ১৫ ডিসেম্বর বেলা ১২ টার দিকে পাক-সেনারা আত্মসমর্পন করতে বাধ্য হয়। এতে ১৫ জনের মত পাক-সেনা আত্মসমর্পন করে বলে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানান। তারা আরো জানায় ওই যোদ্ধে ৩ জন ভারতীয় সেনা নিহত হয়। এদের ২ জনকে নলছাটায় এবং ১ জনকে পূবাইল স্টেশনে রেলের সস্নিপার দিয়ে দাহ করা হয়। আর এভাবেই ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যোদ্ধের পর অন্যান্য স্থানের মত ১৫ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হয় পূবাইল-কালীগঞ্জ।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫