বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
আসন্ন পৌরসভা নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সোমবার বিকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় তিনি এ দাবি জানান। বক্তব্যের শুরুতে খালেদা জিয়া বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহীদ হয়েছেন বলা হয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কতজন শহীদ হয়েছেন, তা নিয়ে বিতর্ক আছে।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ‘নির্বাসিত গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সাহসী মানুষের ঐক্য ও আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই’ শীর্ষক এ আলোচনা সভার আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল।
নির্বাচন সুষ্ঠু হলে ৮০ শতাংশ পৌরসভায় বিএনপি প্রার্থী বিজয়ী হবেন দাবি করে তিনি বলেন, নির্বাচন সত্যিকারে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে হলে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে, যাতে মানুষ ভোট দিতে পারে। সেনাবাহিনী মোতায়েন করলে কিছুটা সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করতে পারি। তারা চাইলেও শেখ হাসিনা সেনবাহিনী দেবে না। কারণ সেনাবাহিনীর প্রতি তাদের (আওয়ামী লীগ) আস্থা নেই।
তিনি আরও বলেন, পুলিশকে দলীয় বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ সরকার। পুলিশেও কিছু ভালো লোক আছে। তারাও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। তারা আমাদের বলেন, ওপরের নির্দেশের কারণে আমাদের কিছু করার থাকে না।
একাত্তর সালের মতো আবার সবাইকে জেগে ওঠার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা আল্লাহ’র ওপর ভরসা রাখি। আল্লাহ মানুষের ধৈর্য পরীক্ষা করছেন। আল্লাহই বিচার করবেন। কিন্তু আল্লাহ মানুষকেও কিছু দায়িত্ব দিয়েছেন। তাই অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। সবাই মিলে আবার জেগে উঠতে হবে। তরুণ সমাজ সঠিক পথে আছে। আসুন সবাই ঐক্যবদ্ধ হই। তাহলে জালেম ও খুনি সরকার বিদায় হবে।
আওয়ামী লীগই যুদ্ধাপরাধী এবং রাজাকারদের মন্ত্রী বানিয়েছে দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধ করেনি, তারা আজ বড় মুক্তিযোদ্ধা। আওয়ামী লীগ মুক্তিযোদ্ধাদের নাম দিয়ে নিজের ঘরে যুদ্ধাপরাধীদেও পালছে। তাদের আওয়ামী লীগ খুঁজে পাচ্ছে না। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাও নেয়া হয়নি। সরিষাবাড়ীর রাজাকার মাওলানা নূরুল ইসলামকে জাতীয় পতাকা দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। নিজেদের কথা তারা অতি সহজেই ভুলে যায়। কিন্তু জনগণ তা সহজে ভুলে না। ক্ষমতায় গেলে এসব ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বিএনপিও চায়। কিন্তু তা হতে হবে আন্তর্জাতিক মানের ও স্বচ্ছ। এখানে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম উল্লেখ না করে খালেদা জিয়া দাবি করেন, তিনি স্বাধীনতা চাননি, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশ চাননি। জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা না দিলে দেশ স্বাধীন হতো না। আজকেও এই দল আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র চায় না, ক্ষমতা চায় শুধু। এজন্য জোর করে ক্ষমতা ধরে বসে আছে।
দলীয় প্রতীকে পৌর নির্বাচন অনুষ্ঠানকে সরকারের ষড়যন্ত্র মন্তব্য করে খালেদা জিয়া বলেন, পৌরসভা নির্বাচনে সরকার নতুন ফন্দি এঁটেছে। দলীয় প্রতীকে এর আগে কখনও নির্বাচন হয়নি। এর পেছনে তাদের লক্ষ্য রয়েছে। তারা (সরকার) নির্বাচন ছিনতাই করে দেখাবে জনগণ ধানের শীষের পক্ষে নেই। সব নৌকার পক্ষে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা নিজেও জানেন না তাদের নৌকা ডুবতে বসেছে।
পৌরসভা নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, স্থানীয় নির্বাচন স্থানীয় জনগণের মাঝে নির্বাচনী উৎসব আমেজ থাকে। তারা সেই নির্বাচনে যেতে চান। তাই অতীতে আমরা স্থানীয় নির্বাচনে গিয়েছি এবং ২০০৯ সাল থেকে যেসব নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে, তার প্রত্যেকটিতে বিএনপি প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছে। চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, কুমিল্লা ও গাজীপুর নির্বাচনে তার প্রমাণ মিলেছে। উপজেলা নির্বাচনের প্রথম দুই দফাতেও তার দলের প্রার্থীরা বিজয় হয়।
বিএনপি নেতাদের গণসংযোগের কথা উল্লেখ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, যেখানেই তার দলের নেতারা গেছেন, সেখানে জনগণ বলেছে, তারা অনেকদিন পর ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দেয়ার সুযোগ পেয়েছে। তারা ধানের শীষে ভোট দিতে চান।
নির্বাচন কমিশনকে আবারও অথর্ব ও মেরুদণ্ডহীন উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, সেখানে যে লোক বসে আছে, তার কাছে সঠিক কিছু আশা করা যায় না। প্রধানমন্ত্রী নিজেই এবং তার দলের লোকরা প্রতিদিনই আইন ভঙ্গ করছেন। তারপরও এই বোবা-অযোগ্য নির্বাচন কমিশন (ইসি) কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির যুব সম্পাদক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদিকা শিরিন সুলতানা, মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মের সভানেত্রী শামা ওবায়েদ, ফজলুর রহমান প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক সাদেক খান।
মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, আপনারা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র দেখার জন্য, যেখানে থাকবে ন্যায়বিচার এবং সুশাসন। কিন্তু আজ দেশে সুশাসন এবং ন্যায়বিচার অনুপস্থিত। আওয়ামী লীগ সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে দেশে নৈরাজ্য চালাচ্ছে। প্রতিদিনই গ্রেফতার, নির্যাতন ও হামলা-মামলার শিকার হচ্ছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপি ধ্বংস করাই তাদের আক্রোশ। বিএনপি নেতাকর্মীদের জেলে রেখে তারা এ কাজ করছে চায়। বিভিন্ন নির্বাচনে নির্বাচিতদের বরখাস্ত করা হচ্ছে আর অনির্বাচিতরা দেশ চালাচ্ছেন। এ সময় উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধা ও দলীয় নেতাকর্মীদের নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করে আনতে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
খালেদা জিয়া বলেন, বর্তমান সরকার দেশটাকে লুটপাট করে খাচ্ছে। নিজেরাই কামড়াকামড়ি করছে। সুইস ব্যাংকে ২০০৮ সালের পর থেকে কারা টাকা পাঠিয়েছে? স্বপ্নের পদ্মা সেতু স্বপ্নই থেকে যাবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে পদ্মা তো হবেই। মাওয়ার পাশাপাশি আরিচায়ও সেতু হবে।
খালেদা জিয়া বলেন, যত অন্যায় করেছেন সব শেখ হাসিনা। প্রশাসন-পুলিশ-সেনাবাহিনী কারোই কোনো অন্যায় নেই। তাদের কিছু হবে না। কারও চাকরি যাবে না বিএনপি ক্ষমতায় গেলে। জেলে গেলে শেখ হাসিনাকেই যেতে হবে। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সব খানে যোগ্য-মেধাবী অফিসারদের মূল্যায়ন করা হবে।
বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সব পরিকল্পনা শেখ হাসিনা ও জেনারেল মইন উদ্দিন জানত- এ দাবি করে তিনি বলেন, হাসিনার হাতে রক্ত রক্ত আর রক্তের দাগ। ফেব্রুয়ারি দিয়ে শুরু হয়ে এখন পর্যন্ত অনেক মানুষ হত্যা করেছে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একে খন্দকার ও তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ের লেখা বইয়ের কথা উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, তারা যা লিখেছেন সত্য লিখেছেন। এজন্য একে খন্দকারকে হয়রানি করা হয়েছে।