বাংলাদেশি অ্যাপ কিনতে চায় গুগল ও অ্যাপল

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥

ঢাকা: ক্যান্সার আক্রান্তদের জীবনের শেষ দিনগুলো কাটে খুব কষ্টে। এক প্রকার না খেয়ে, না ঘুমিয়ে, প্রচণ্ড ব্যথা-বেদনা নিয়ে বেঁচে থাকতে হয় তাদের। এভাবেই একদিন সময় ফুরিয়ে যায়। আর তাই এমন রোগীদের মৃত্যু যেন একটু শান্তিতে হয়, সে চেষ্টাই করে থাকেন চিকিৎসকরা।

মৃত্যুর জন্য অপেক্ষায় থাকা ক্যান্সার রোগীদের বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ও মানসিক প্রশমন সেবা দেওয়া হয়ে থাকে। সম্প্রতি এ ধরনের নতুন একটি চিকিৎসা সেবা চালু হয়েছে ‘পেলিয়েটিভ কেয়ার’ বা প্রশমন স্বাস্থ্য সেবা নামে। তবে এই সেবা পেতে রোগীদের এখন আর হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে না। মোবাইলে একটি অ্যাপ ডাউনলোড করে নিলেই হবে। রোগী ওই অ্যাপ ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়ে কিছুটা মানসিক প্রশমন পেতে পারেন। সেইসঙ্গে অ্যাপের সঙ্গে যুক্ত অপর প্রান্তের চিকিৎসক রোগীর দেওয়া উত্তরগুলো ‘স্কোরিং’ করে রোগীকে জানিয়ে দিতে পারেন কী ওষুধ খেতে হবে। চিকিৎসকের দেওয়া ব্যবস্থাপত্র পেয়ে রোগী ওই ওষুধ সেবন করে শারীরিক প্রশান্তি অনুভব করতে পারেন।
আমাদের দেশেই তৈরি হয়েছে সেই অ্যাপ, যা তৈরি করেছে উন্নয়নের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘আমাদের গ্রাম’। অ্যাপের নাম ‘এজি পেলিয়েটিভ কেয়ার’।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অ্যাপটি নেওয়ার জন্য এরই মধ্যে বিশ্বখ্যাত সার্চ জায়ান্ট গুগল এবং আইফোনের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অ্যাপল আগ্রহ প্রকাশ করেছে। প্রতিষ্ঠান দুটি তাদের সেবা পণ্যের তালিকায় এই অ্যাপটি সংযুক্ত করতে চায়। একাধিক প্রতিষ্ঠান আগ্রহ দেখানোয় এখন অনলাইনে উন্মুক্ত নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। নিলামে জিতেই তবে পাওয়া যাবে অ্যাপটি। নিলামে এর ভিত্তিমূল্য ধরা হয়েছে ৩ লাখ ডলার (২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা)।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘আমাদের গ্রাম’ দীর্ঘ ১৫ বছরের বেশি সময় দেশের দক্ষিণাঞ্চলে (বৃহত্তর খুলনা অঞ্চলে) তৃণমূল পর্যায়ে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছে। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বল্প খরচে সব স্তরের জনগোষ্ঠীর চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে ‘আমাদের গ্রাম ই-হেলথ’ প্রকল্প গত ৮ বছর ধরে খুলনা ও বাগেরহাটে স্তন ক্যান্সার নির্ণয়, চিকিৎসা ও পরামর্শ সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এই কার্যক্রমের অধীনে বর্তমানে খুলনা শহরে একটি ‘বিশেষায়িত ব্রেস্ট কেয়ার সেন্টার’ ও রামপালে ‘প্রাথমিক ব্রেস্ট কেয়ার সেন্টার’ পরিচালিত হচ্ছে।

জানা যায়, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সেবায় নতুন একটি দিগন্তের উন্মোচন করতে যাচ্ছে আমাদের গ্রাম। সংস্থাটি ক্যান্সার রোগীর সেবায় নানা ধরনের মোবাইল অ্যাপ তৈরি করেছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রশমন চিকিৎসা সেবা।

আমাদের গ্রামের প্রকল্প পরিচালক রেজা সেলিম জানান, ক্যান্সার রোগীর জন্য জরুরি হলো তার ব্যথা ও লক্ষণ ব্যবস্থাপনা। মৃত্যুর আগে এই প্রশমন তার সেবা-অধিকারের মধ্যে পড়ে। একাকী এই কষ্টের সময়ে প্রিয়জনের উপস্থিতিও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। স্তন ক্যান্সারের অ্যাগ্রেসিভ স্টেজের রোগীরা শারীরিক দুর্বলতার কারণে সাধারণত চিকিৎসকের কাছে যেতে পারেন না। এই সেবা বাড়িতে বসে যাতে পাওয়া যায়, সে লক্ষ্যে ‘আমাদের গ্রাম ক্যান্সার কেয়ার প্রোগ্রাম’ এ রোগীদের জন্য মোবাইল অ্যাপ তৈরি করেছে। এই অ্যাপের মাধ্যমে একজন রোগী তার ব্যথার মাত্রা ঘরে বসে মোবাইলের মাধ্যমে চিকিৎসককে জানাতে পারবেন এবং ৮ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যেই মোবাইল অ্যাপে ব্যথার স্কোর দেখে চিকিৎসক প্রেসক্রিপশন দিতে পারবেন।

আমাদের গ্রাম পরীক্ষামূলকভাবে কুমিল্লা, খুলনা, বাগেরহাট, নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকায় ১৩ জন স্তন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীকে এই সেবা প্রদান করেছে। রোগীরা তাদের উপসর্গগুলো ঘরে বসে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করে সার্ভারে পাঠিয়ে দিলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক উপসর্গগুলোর অবস্থা তার কম্পিউটারে দেখতে পান এবং সেইভাবে রোগীর সঙ্গে যোগাযোগ করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।

এই অ্যাপের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো- ব্যথার মাত্রা, অবসাদের মাত্রা, ঘুমের পরিমাণ, বমি বমি ভাব ও হতাশা ভাব ইত্যাদি পরিমাপ করা। অ্যাপটি বাংলা ইংরেজি দুই ভাষাতেই তৈরি করা হয়েছে। রোগী যেকোনও একটি প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে এই সেবা নিতে পারেন। এতে কেবল রোগী নয়, রোগীর পরিবারও অনেক উপকৃত হয়েছে।

বাংলাদেশি অ্যাপ কিনতে চায় গুগল ও অ্যাপলতিনি আরও জানান, গবেষণার ওপর ভিত্তি করে ‘আমাদের গ্রাম’ এই সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা নিয়েছে। ঢাকা ও খুলনায় মোবাইল ফোনের মাধ্যমে এই চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা আছে।

রেজা সেলিম বলেন, বিদেশে ক্যান্সার রোগীদের সাধারণত পেলিয়াটিভ হসপিস বা বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। শেষ সময়টা রোগী সেখানে থাকেন এবং এক সময় মারা যান। আমাদের দেশে এ ধরনের কোনও সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। আমরা এমনটা চাইও না। আমরা চাই রোগী যেন তার বাড়িতে বসে পেলিয়াটিভ সেবাটি পান। অ্যাপটির একটি স্কেল আছে, ১- থেকে ১০ পর্যন্ত। রোগীর উত্তরের স্কেল দেখে স্কোর সাজিয়ে চিকিৎসক রোগীকে ব্যবস্থাপত্র দেন। নির্দিষ্ট ওষুধটি খেতে বলেন। যাতে করে রোগী মৃত্যুর আগে মনে করে তিনি একটা সেবা পেয়েছেন।

তিনি জানান, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এ ধরনের হসপিস রয়েছে। কানাডায় এ ধরনের অ্যাপের বিপুল চাহিদা।

যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিনের মার্কেট ইউনিভার্সিটি অ্যাপটির পার্টনার উল্লেখ করে রেজা সেলিম বলেন, আমরা এখন এটির পেটেন্ট করব নাকি কপিরাইট করব তা নিয়ে ভাবছি।

তিনি জানান, অ্যাপটির একটি রেভিনিউ মডেলও রয়েছে। যেসব রোগী অ্যাপটি ব্যবহার করবেন তার বিনিময়ে মাসিক ভিত্তিকে একটি সেবা চার্জ নেওয়া হবে। তবে তা খুবই অল্প। ‘আমাদের গ্রামের’ পরিকল্পনা রয়েছে রোগীকে অ্যাপসহ একটি মোবাইল ফোন দেওয়ার। তবে যাদের স্মার্টফোন আছে তারা অ্যাপটি ডাউনলোড করে ব্যবহার করতে পারবেন।

অ্যাপটির অ্যান্ড্রয়েড ভার্সন তৈরি করা হয়েছে। আগামীতে আইওএস ভার্সন তৈরি করা হবে বলে জানা গেছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫