স্টাফ রিপোর্টার ॥
আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহার আগেই ন্যূনতম মজুরি ১৬ হাজার টাকা ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন গার্মেন্টস শ্রমিকরা। শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে একতা গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের বিশেষ সাধারণ সভা থেকে শ্রমিকরা এ দাবি জানান।
শ্রমিকরা বলেন, ন্যূনতম মজুরি ১৬ হাজার টাকা করা না হলে শিক্ষার্থীদের মতো গার্মেন্টস শ্রমিকরাও রাস্তায় নামতে বাধ্য হবেন। এটা সরকারও বুঝতে পারছে। কিন্তু মালিকরা কূটকৌশলের মাধ্যমে শ্রমিকদের দাবি যাতে বাস্তবায়ন না হয় সেই চেষ্টা করছেন।
স্মৃতী আক্তার নামের এক গার্মেন্টস শ্রমিক বলেন, আমাদের দাবি ন্যূনতম মজুরি ১৬ হাজার টাকা করা হোক। কিন্তু নানাভাবে আমাদের এ দাবি না মানার চক্রান্ত চলছে। আগামী ঈদের আগেই আমাদের ন্যূনতম মজুরি ১৬ হাজার টাকা করার ঘোষণা দিতে হবে।
একটি গার্মেন্টসের শ্রমিক এবং বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সমন্বয়ক মাহাতাব উদ্দিন বলেন, আজকে আমরা ছাত্রদের আন্দোলন দেখছি। ছাত্ররা পারলেও আমরা পারছি না। কারণ আমাদের মধ্যে ঐক্য নেই। যে কারণে আমাদের ১৬ হাজার টাকা মজুরির দাবি বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
তিনি বলেন, এখন পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে সরকার হয়তো আমাদেরকেও রাস্তায় নামতে বাধ্য করবে। সরকার নিজেও এটা বুঝতে পারছে। কিন্তু মালিকরা নানা কূটকৌশল করে, আমাদের ন্যূনতম মজুরি ১৬ হাজার টাকা আটকানোর চেষ্টা করছে।
তিনি আরও বলেন, ঈদ আসছে। অনেক গার্মেন্টস মালিক হজে চলে যাবেন। কিন্তু শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধ করবে। বলবে টাকা নেই। এটা হতে দেয়া যায় না। শ্রমিকদের মজুরি না দিয়ে কিসের হজ। এ হজ কি কবুল হবে?
একতা গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিলস’র নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আমিরুল হক আমিন এবং ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিলের মহাসচিব সালাউদ্দিন স্বপন।
সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের শ্রমিক সংগঠনগুলোর মধ্যে ভিন্নতা থাকলেও একতা আছে। আমাদের সামনে সুযোগ এসেছে ন্যূনতম মজুরি ১৬ হাজার টাকা করার। এ সুযোগ বার বার আসবে না। এর আগে গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২৫০০ টাকা হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু ষড়যন্ত্র করে তা করা হল ১৬০০ টাকা। এবার আর এটা হতে দেয়া যাবে না। আমরা মানি সব কারখানার পক্ষে ন্যূনতম মজুরি ১৬ হাজার টাকা করা সম্ভব না। কিন্তু ২০-২৫ শতাংশ গার্মেন্টেসের জন্য সব শ্রমিক বঞ্চিত হতে পারে না।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের প্রসঙ্গে টেনে তিনি বলেন, চালক-শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়া ঠিক হবে না। এখন অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে টকশোর কথা শুনলেই মনে হয় সব চালক অবৈধ। চালকরাও তো জিম্মি। যে মেয়েটা মারা গেছে তার বাবা ৩০ বছর ধরে গাড়ি চালায়। তাই শিক্ষার্থী-চালক মুখোমুখি দাঁড় করি না দিয়ে যাদের কাছে পরিবহন খাত জিম্মি তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
আমিরুল হক আমিন বিশেষ সাধারণ সভায় একতা গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের আগামী নির্বাচনের তারিখ ও নির্বাচন পরিচালনার সাব কমিটির তথ্য তুলে ধরেন। এ সময় উপস্থিত গার্মেন্টস শ্রমিকরা তা পাশ করেন। আগামী ২৮ অক্টোবর সংগঠনটির নির্বাচন অনুষ্ঠানের তারিখ নির্ধারণ করা হয়।
ন্যূনতম মজুরি ১৬ হাজার টাকার দাবি না মানলে শ্রমিকরা রাস্তায় নামবে উল্লেখ করে সালাউদ্দিন স্বপন বলেন, ছাত্ররা রাস্তায় নেমেছে। এক স্থানের ছাত্রদের সঙ্গে অন্য স্থানের ছাত্রদের কোন যোগাযোগ নেই। কিন্তু তারা সব জায়গায় সুশৃঙ্খলভাবে আন্দোলন করছে। কোথাও গাড়ি ভাঙচুর করছে না। কিন্তু আমরা রাস্তায় নামলেই গাড়ি ভাঙচুর করি। যে কারণে আমাদের আন্দোলন সফল হয় না।