বিনোদন ডেস্ক ॥
‘সেই নকশাল আমলে পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়েছিল। সেটা ছিল সাংস্কৃতিক কারণে পুলিশের গ্রেপ্তারি। আর এতগুলো বছর পর এই ৬৫ বছর বয়সে এসে আমার বিরুদ্ধে কন্যাসমা একটি মেয়ে মামলা করল।’
বলতে বলতে কেঁদে ফেললেন কলকাতার কৃষ্ণনগর সংস্কৃতি মঞ্চের সম্পাদক অনন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বিরুদ্ধেই অভিযোগ দায়ের করেছেন ইমন চক্রবর্তী।
৩ ফেব্রুয়ারি কৃষ্ণনগরের পাবলিক লাইব্রেরির মাঠে সাংস্কৃতিক মঞ্চের একটি অনুষ্ঠানে যোগদান করেছিলেন গায়িকা ইমন চক্রবর্তী। সেখানেই তাঁকে অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। এমনটা অভিযোগ করেছেন ইমন নিজে। ঘটনাস্থল থেকে বেরিয়ে ফেসবুক লাইভ করে ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানান গায়িকা। সেই খবর ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে। ধিক্কার পড়ে যায় সব জায়গায়।
ঘটনার সম্পূর্ণটাই অস্বীকার করে অনন্ত জানান, ইমনের আনা প্রত্যেকটি অভিযোগই মিথ্যে। যা যা অভিযোগ ইমন এনেছে তার সিকিভাগও সত্যি নয়। ঘটনা কী হয়েছে আপনাকে খুলে বলি। ইমনকে স্টেজ দেওয়া হয় চারটা-পাঁচটা নাগাদ। ওরা কিছু সেটআপ করে তখন। স্থানীয় শিল্পীদের অনুষ্ঠান শেষে রাত ৮টার সময় স্টেজ পায় ইমন।
প্রথমে ১৫ মিনিট সহযোগীরা স্টেজ গোছান। তারপর ১৫ মিনিট ধরে সকলের সঙ্গে আলাপ পরিচয় করিয়ে দেন ইমন। তারপর পাঁচ মিনিট আমরা সম্মানজ্ঞাপন করি। ব্যাস ওইটুকুই। কিছুক্ষণ গান গাওয়ার পর দর্শক থেকে গান গাওয়ার অনুরোধ আসতে শুরু করে। ইমন তাঁদের অনুরোধ করা দুটি গান গাইবেন বলে তৈরি হলেও সেই দুটি গান না গেয়ে হঠাৎই স্টেজ থেকে নেমে যান কাউকে কিছু না বলে।
তিনি আরও বলেন, দেখুন, আমাদের এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আগেও হয়েছে। অনেক নামীদামি শিল্পীরা এসে গান গেয়ে গেছেন। কাউকে কোনদিন না বলে স্টেজ থেকে নেমে যেতে দেখিনি। ইমন অভিযোগ এনেছে, আমরা নাকি তাঁকে এবং তাঁর দলের সবাইকে একটা ঘরে আটকে রেখে দিয়েছিলাম। এটা একেবারে মিথ্যে অভিযোগ। আমরা এমনটা করিনি। আমরা সোমলতার সঙ্গে কাজ করেছি। তিনি তো কখনও এরকম অভিযোগ করেননি। খুব সুন্দরভাবে আমাদের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছিল। ইমন অভিযোগ এনেছে, তাঁকে নাকি ‘তুই তোকারি’ করা হয়েছে। এটাও মিথ্যে বলছেন ইমন। উল্টে উনি আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন। অকথ্য ভাষায় কথা বলেছে। এটা কিন্তু একজন শিল্পীর থেকে আশা করা যায় না।
অনন্তর অভিযোগ, ইমনকে আমরা ১ লক্ষ ৬০ হাজার রুপি দিয়ে নিয়ে এসেছি। দেখুন আমরা সাধারণ মানুষ। অনেক কষ্ট করে এই অর্থ জোগাড় করে একজন শিল্পীকে নিয়ে এসে হয় কেন এরকম অত্যাচার করব?আর ওরা শিল্পী বলে কি ওদের কথা সত্যি বলে মেনে নিতে হবে? শিল্পীরা যদি কোথাও অসম্মানিত হয়েছেন বলে, তখন সবাই তাঁদের পাশে থাকে। কিন্তু আমাদের মতো সাধারণ মানুষের পাশে তো কেউ থাকে না।
ইমন বলেছে, কৃষ্ণনগরের সাধারণ মানুষ নাকি তাঁকে নিরাপদে গাড়িতে উঠে যেতে সাহায্য করেছে। এত মিথ্যে নিতে পারছি না, সত্যি! আমরাই ইমনকে যথাসময়ে গাড়িতে উঠে যেতে সাহায্য করেছি। শ্রোতা-দর্শক ইমনের গান শুনতে না পেয়ে অত্যন্ত উত্তেজিত হয়ে উঠেছিল। তাঁদের হাত থেকে বাঁচিয়ে ইমনকে আমরা গাড়িতে তুলি। আর আমাদেরই অপবাদ দিয়েছে ইমন। আমি ইমনের বাবার বয়সী। এতটা মিথ্যা কথা বলা ঠিক হয়নি ইমনের।
অনন্ত ব্যানার্জির আক্ষেপ, “আমারও একটা মেয়ে আছে। ৬৫ বছর বয়সে কোনও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করে কারো যদি মামলা জোটে কপালে, তাহলে সেটা তো নিঃসন্দেহে দুঃখের ঘটনা। তবে ইমন যদি নিজের ভুল বুঝতে পারে এবং কৃষ্ণনগরে এসে আমাদের সঙ্গে অনুষ্ঠান করতে চায়, আমরা কিন্তু তাঁকে সাদরে গ্রহণ করব। কারণ উনি একজন প্রতিভাবান শিল্পী। আর কৃষ্ণনগরের সকল মানুষই শিল্প এবং সংস্কৃতিকে যথাযোগ্য সম্মান দিতে পারে।