নতুন অস্ত্র প্রতিযোগিতায় বিশ্ব

আন্তর্জাতিক ডেস্ক ॥
ঠাণ্ডা যুদ্ধকালীন রাশিয়ার সঙ্গে সই হওয়া পরমাণু চুক্তির অবসানের পর নিজের ক্রুজ ও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা উন্নত করার কথা ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

মাঝারি-পাল্লার পরমাণু শক্তি (আইএনএফ) চুক্তি বাতিলের জন্য জোরালোভাবে মস্কোকে দায়ী করছে ওয়াশিংটন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, নতুন কোনো নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি করতে হলে তাতে চীনকেও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

তবে যুক্তরাষ্ট্রকে পাল্টা দোষারোপ করে রাশিয়া বলছে, আইএনএফ চুক্তি থেকে সরে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র মারাত্মক ভুল করেছে।

গত তিনটি দশক ধরে বিশ্বে স্থিতিশীলতা ও শান্তি সুরক্ষায় এই চুক্তিটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে দাবি জাতিসংঘের।

১৯৮৭ সালে তখনকার মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান ও সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্ভাচেভের মধ্যে এই চুক্তিটি সই হয়েছিল। তখন এ চুক্তিটিকে গভীর অন্ধকারের মধ্যে আলোর বাতি হিসেবে দেখা হয়েছিল।

এর ফলে প্রচলিত ও মাঝারি পাল্লার পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন নিষিদ্ধ হয়েছিল।

কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের অবনতির মধ্যে ঝুঁকিতে পড়ে যায় এ চুক্তির ভবিষ্যৎ। পরবর্তী সময়ে শুক্রবার চুক্তিটির মৃত্যু ঘটেছে।

রাশিয়া চুক্তিটির মৃত্যু ঘোষণা দেয়ার পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এক বিবৃতিতে ঘোষণা দেন, এর জন্য এককভাবে রাশিয়াই দায়ী।

চুক্তি বাতিলে একটি মুলতবি রাখার সময়সীমা ঘোষণা করতে অনুরোধ জানিয়েছিল মস্কো। কিন্তু তা বিশ্বাসযোগ্য নয় বলে প্রত্যাখ্যান করেন ন্যাটো প্রধান জেনস স্টোলটেনবার্গ। তিনি বলেন, ২৯ দেশের আন্তঃআটলান্টিক জোট নতুন করে সামরিক শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই দেখতে চায় না।

ব্রাসেলসে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, রাশিয়া যা করবে, আমরা তার প্রতিচ্ছবি হতে চাই না। আমরা নতুন কোনো অস্ত্র প্রতিযোগিতা চাই না। ইউরোপে নতুন করে ভূমি থেকে উৎক্ষেপণে সক্ষম পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করতে চাই না।

কিন্তু ইউরোপীয় রাজধানীগুলোতে একটা পরিষ্কার অস্বস্তি রয়ে গেছে। চুক্তির পতন নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তার মতে, এতে ইউরোপে অস্থিতিশীলতার ঝুঁকি বাড়বে এবং আন্তর্জাতিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাও দুর্বল হয়ে পড়বে।

অস্ট্রিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলেক্সান্ডার স্কলেনবার্গের আহ্বান হচ্ছে, ইউরোপ যাতে নতুন অস্ত্র প্রতিযোগিতার অকুস্থল না হয়।

কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে গতিময়, প্রচলিত ও ভূমি থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য ক্রুজ ও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার উন্নয়ন শুরু করে দিয়েছে।

মার্ক এসপার বলেন, শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্র অত্যন্ত সচেতনার সঙ্গে আইএনএফ চুক্তির বাধ্যবাধকতাগুলো মেনে চলেছে। এখান আমরা সেই চুক্তি থেকে সরে আসছি।

‘কাজেই রাশিয়ার পদক্ষেপের সঠিক জবাবে আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভূমি থেকে উৎক্ষেপণে সক্ষম প্রচলিত ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়নে পূর্ণ্যোদ্যমে এগিয়ে যাবে।’

রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চুক্তি থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র মারাত্মক ভুল করেছে। চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে ওয়াশিংটন।

এই চুক্তির অধীন ৫০০ থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার কিলোমিটারের পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা নিষিদ্ধ ছিল। এতে ইউরোপে রাশিয়া এসএস-২০ ক্ষেপণাস্ত্র ও যুক্তরাষ্ট্রের পারশিং ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন স্থগিত হয়ে গিয়েছিল।

রাশিয়া ৯এম৭২৯ নামে নতুন ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়নে কাজ করছে বলে গত কয়েক বছর ধরে অভিযোগ করে আসছে ওয়াশিংটন। এতে আইএনএফ ক্ষেপণাস্ত্র চুক্তির লঙ্ঘন ঘটছে। সামরিক জোট ন্যাটোও তাতে সায় দেয়।

ন্যাটের তথ্যানুসারে, ওই ক্ষেপণাস্ত্রের আওতা দেড় হাজার কিলোমিটার। কিন্তু মস্কো বলছে, এটি কেবল চারশ ৮০ কিলোমিটার দূরত্বে আঘাত হানতে পারবে।

গত ফেব্রুয়ারিতে চুক্তি থেকে সরে আসতে ছয় মাসের প্রক্রিয়াগত সময় নেয় হোয়াইট হাউস। এরপর মস্কোও চুক্তিটি থেকে সরে আসার কার্যক্রম শুরু করে। গত মাসে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তি বাধ্যবাধকতা স্থগিত ঘোষণা করেন।

বৈশ্বিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধের মূলভিত্তি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় এ চুক্তিটিকে। কিন্তু রাশিয়া বারবার এই চুক্তি লঙ্ঘন করছে বলে অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের। দেশটির অভিযোগ, দ্বিপক্ষীয় এ চুক্তির কারণে চীন অবারিতভাবে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের উন্নয়ন ঘটাতে পারছে।

শুক্রবার সেই কথারই পুনরাবৃত্তি ঘটালেন ট্রাম্প। নতুন কোনো চুক্তি সই হলে তাতে চীনকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সাংবাদিকদের মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা চীনকেও এ চুক্তির আওতার ভেতর দেখতে চাচ্ছি। বিশ্বের জন্য যা বড় একটি কাজ হবে।

মূলত বাণিজ্য ও নৌপথ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের উত্তেজনা রয়েছে। চলতি সপ্তাহে ব্যাংককে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর সংগঠন আসিয়ানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে এটাই ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।

সম্মেলনে এশিয়ায় অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তিতে বেইজিংয়ের মোকাবেলায় ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশলের কথা বলেন মাইক পম্পেও।

শুক্রবার তিনি বলেন, অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের নতুন যুগ দেখতে চাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। যা অতীতের দ্বিপক্ষীয় চুক্তিকে ছাড়িয়ে যাবে। বেইজিংকেও আলোচনায় যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান পম্পেও।

রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রধান অস্ত্র চুক্তি হিসেবে দেখা হচ্ছিল আইএনএফকে। এছাড়া নিউ স্টার্ট চুক্তিতে দুই দেশের পরমাণু অস্ত্রের মজুত ঠাণ্ডা যুদ্ধের আমলের নিচে রাখার কথা বলা হয়েছে।

আগামী ২০২১ সালে ওই চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছে, কাজেই চুক্তি নবায়নে দুই দেশের রাজনৈতিক সদিচ্ছা একেবারে কম।

ইতিমধ্যে এই চুক্তিতে ভবিষ্যতে যুক্ত হওয়ার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে চীন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫