৯ বছরে বাঘের সংখ্যা বাড়ল পাঁচগুণ

অনলাইন ডেস্ক ॥
ভারতের আসামের বড়োভূমিতে অবস্থিত মানস জাতীয় উদ্যানে নয় বছরে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে পাঁচগুণ। ২০১০ সালের বাঘশুমারিতে যেখানে ১০-১৫টি বাঘ ছিল ২০১৯ সালে এসে সেটি হয়েছে ৫২টি। ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা যায়।

আনন্দবাজার বলছে, সংরক্ষণের কাজে গ্রামবাসীদের যুক্ত করা, অরণ্য-নির্ভর মানুষদের বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা করা, সামাজিক সচেতনতা বাড়ানো, প্রাণীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সাহায্য নেওয়া- এই পাঁচ পদক্ষেপের কারণে মাত্র নয় বছরে বাঘের সংখ্যা পাঁচগুণ বেড়েছে। ভারতের বন দফতর, বড়োল্যান্ড টেরিটরিয়াল কাউন্সিল (বিটিসি) প্রশাসন ও পশুপ্রেমী সংগঠনের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলে এটা সম্ভব হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে ‘ক্যামেরা ট্র্যাপিং’ নিয়ে কাজ করা বাঘ বিশেষজ্ঞ ফিরোজ আহমেদ জানান, বড়ো আন্দোলনের কারণে যেমন মানস গণ্ডারহীন হয়ে পড়েছিল, তেমনি শেষ হয়ে গিয়েছিল অন্যান্য মূল্যবান বন্যপ্রাণী। পরে ধীরে ধীরে মানস জাতীয় উদ্যান সংরক্ষণের আওতায় নিয়ে আসলে ২০১০ সালের বাঘশুমারি অনুযায়ী মানস ও আশপাশের জঙ্গলে সবমিলিয়ে ১০-১৫টি বাঘের সন্ধান মিলেছিল। কিন্তু ২০১৯ সালের বাঘ শুমারির বলছে, বর্তমানে সেখানে বাঘের সংখ্যা ৫২।

বড়োভূমির অতিরিক্ত প্রধান মুখ্য বনপাল অনিন্দ্য স্বরগয়ারি জানান, সকলের মিলিত প্রয়াসেই এত অল্প সময়ে এই অসাধ্য সাধন সম্ভব হয়েছে। শুধু তাই নয়, সম্প্রতি মানস ব্যাঘ্র প্রকল্প ও জাতীয় উদ্যানের সঙ্গে ৩৬০ বর্গ কিলোমিটারের যে এলাকা সংযোজিত হয়েছে, সেখানেও দুটি রয়েল বেঙ্গল টাইগারের দেখা মিলেছে।

রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল এ এম সিংহের বলেন, ‘সরকার, গ্রামের মানুষ ও পশুপ্রেমীদের যৌথ উদ্যোগে মানস উদ্যান তার পূর্বের ঐতিহ্য ফিরে পেয়েছে। একেবারে ধ্বংস হয়ে যাওয়া অরণ্য এত অল্প সময়ের মধ্যে এমন সমৃদ্ধ হয়ে ওঠার ঘটনা দেশে বিরল।’

ভারতের বড়োভূমিতে অবস্থিত মানস জাতীয় উদ্যান ১৯৭২ সালের ব্যাঘ্র প্রকল্প হিসেবে বেশি পরিচিত। ১৯৮০ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত সন্ত্রাসের কবলে পড়ে এই অরণ্য। বড়োভূমির জাতীয় উদ্যান ছিল অরক্ষিত। জঙ্গলে গণ্ডার, বাঘ, হরিণ সবই প্রায় শেষের দিকে ছিল। ইউনেস্কোর ঐতিহ্য স্বীকৃতির তালিকা থেকে বাদ পড়ে এই ঐতিহাসিক উদ্যান।

বড়োভূমি চুক্তির পরে স্থিতাবস্থা ফিরে আসে সেখানে। ২০১০ থেকে আরণ্যক, ডাব্লিউডাব্লিউএফ, ডাব্লিউটিআইসহ নানা সংগঠন উদ্যানে প্রাণী সংরক্ষণের কাজে যোগ দেয়। জঙ্গলের আশপাশের গ্রামের মানুষের জন্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো বিভিন্ন বিকল্প রোজগারের ব্যবস্থা করে দেয়, যাতে তারা শিকার বা অরণ্য ধ্বংস থেকে বিরত থাকেন। বনকর্মীদের পাশাপাশি এসএসবিও নজরদারি চালায় অরণ্যের আশপাশের এলাকায়। ২০১১ সালে মানস আবার ইউনেস্কোর স্বীকৃতি ফিরে পায় মানস।

অতিরিক্ত প্রধান মুখ্য বনপাল অনিন্দ্য জানান, জঙ্গলে নিরাপত্তা বাড়ানো, দৌরাত্ম্য কমা ও সর্বোপরি খাদ্য প্রাণীর সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে ভুঁইয়াপাড়া, বাঁশবাড়ি, পানবাড়ি রেঞ্জ মিলিয়ে এক দশক আগের তুলনায় এখন মানস জাতীয় উদ্যানে রয়্যাল বেঙ্গলের সংখ্যা পাঁচ গুণ হয়েছে। ফিরোজের নেতৃত্বে সেখানে নিয়ম করে ক্যামেরা লাগানোর কাজ করা হয়। ফলে বিজ্ঞানসম্মতভাবে বাঘ চিহ্নিত করা ও গণনা করার কাজ সম্ভব হয়েছে।

বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে পাহাড় ও নদী, মানসের জঙ্গলের অর্ধেক অংশ ভুটানে। প্রয়োজনের তুলনায় রক্ষী ও পরিকাঠামো এখনও অনেক কম। প্রচার, পর্যটন ও সংরক্ষণের সিংহভাগ আলো ও রসদই কাজিরাঙা কেড়ে নেয়। কিন্তু তার মধ্যেও মানসে ফিরেছে গণ্ডার। সংরক্ষণ হয়েছে পিগমি হগ, হিসপিড হেয়ার, বেঙ্গল ফ্লোরিক্যানের মতো বিপন্ন পশু-পাখি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫