বিনোদন ডেস্ক ॥
বাঙালি দর্শকের হৃদয়ে ঘোর লাগা এক আবেগের নদী হয়ে বয়ে চলেছেন তিনি। সিনেমার কল্যাণে তার অনেক নাম। তবে সত্যজিৎ রায়ের ‘অপুর সংসার’ সিনেমা তাকে অপু নামেই কালজয়ী করেছে। বলছি সদ্য প্রয়াত অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের কথা।
কীংবদন্তি এই অভিনয়শিল্পীর জন্মদিন আজ। বেঁচে থাকলে ৮৬ বছরে পা রাখতেন এবার।
১৯৩৫ সালের ১৯ জানুয়ারি নদীয়ার কৃষ্ণনগরে জন্মগ্রহণ করেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। তবে তার পিতৃপুরুষের আদিনিবাস বাংলাদেশে।
শিক্ষা জীবন শেষ করে রেডিওতে যোগ দিয়ে কর্ম জীবন শুরু করেছিলেন। তবে ভাগ্য তার নির্ধারিত ছিলো অভিনয়ের আঙিনায়। এখানে তিনি আসবেন রাজকুমারের মতো, রাজকীয় সাফল্য পাবেন সবই আগে থেকে ঠিক করা ছিলো। হলোও তাই।
১৯৫৯ সালে ডাক পেলেন ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে নামী চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের কাছ থেকে। তার সিনেমায় অভিনয়ের জন্য। সেই সুযোগ কাজে লাগাতে ভুল করলেন না। সত্যজিতের পরিচালনায় ‘অপুর সংসার’ ছবি দিয়ে সিনেমায় পা রাখলেন তিনি।
বাকিটুকু ইতিহাস। দিনে দিনে নিজেকে তিনি প্রতিষ্ঠিত করেছেন অনন্যতায়। একে একে কাজ করেছেন সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনাতেই ১৪টি সিনেমায়। সেগুলোর প্রায় সবই তাকে কালজয়ী করে রেখেছে।
শুধু সত্যজিৎই নন, সৌমিত্র অভিনয়ের আলো ছড়িয়ে দিয়েছেন তার সমসাময়িক তপন সিনহা, মৃণাল সেন থেকে শুরু করে প্রজন্মের পর প্রজন্মের তূখোড় সব নির্মাতাদের সঙ্গে।
ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘অসুখ’, সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘হেমলক সোসাইটি’, গৌতম ঘোষের ‘দেখা’ নন্দিতা রায় ও শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ‘বেলা শেষে’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় মঞ্চেও ছিলেন দুর্দান্ত একজন। অভিনয়ে, চিত্রনাট্যে ও নির্দেশনায় তিনি অনবদ্য। উদাহরণ হয়ে আছেন নতুন যারা আসবেন তাদের জন্য। মঞ্চে তার অভিনীত নাটকগুলোর মধ্যে অন্যতম- নাম জীবন, রাজকুমার, ফেরা, নীলকণ্ঠ, ঘটক বিদায়, ন্যায় মূর্তি, টিকটিকি, রাজা লিয়ার। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দেনাপাওনা ও স্ত্রীর পত্র পরিচালনা করেছিলেন তিনি।
একজন কবি ও আবৃত্তিকার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কেও চিরকাল সমীহ করবে বাঙালি।
তিনি প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান ১৯৯১ সালে। ‘অন্তর্ধান’ ছবির জন্য পেয়েছিলেন বিশেষ জুরি সম্মান। নয় বছর পরে একই সম্মান পান ‘দেখা’ ছবির জন্য। শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে পুরস্কার পান ২০০৬ সালে ‘পদক্ষেপ’ ছবির জন্য।
২০১২ সালে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারে ভূষিত হন। ২০০৪ সালে পান ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্মান পদ্মভূষণ। সংগীত নাটক অ্যাকাডেমি পুরস্কারের পালক তার মুকুটে যোগ হয় ২০১২ সালে।
এতসব অর্জন-সাফল্য, নাম-পরিজন আর প্রিয় চরিত্র ও কবিতাদের একা করে দিয়ে ২০২০ সালের ১৫ নভেম্বর ৮৫ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
চোখের দেখায় তিনি আর ধরা দেবেন না হয়তো কিন্তু এই উপমহাদেশে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় নামটি উচ্চারিত হলেই ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার ফুল ফুটবে; তা সেই বসন্ত থাকুক আর নাই বা থাকুক।