ভারত দেয়নি, চীন থেকেও পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন পাচ্ছে না পাকিস্তান

অনলাইন ডেস্ক ॥
পশ্চিমা বিশ্বের মতো অনেক দেশেই শীতকাল আসার সঙ্গে সঙ্গে করোনাভাইরাস সংক্রমণে ঊর্ধ্বগতি দেখা দিয়েছে। ভ্যাকসিন আসায় কিছুটা আশার আলো দেখা গেলেও পাকিস্তান এখনো সেই অন্ধকার গুহায় বন্দি। ভারত অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রতিবেশীদের ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু করলেও সেই তালিকায় নাম নেই ‘চিরশত্রু’ পাকিস্তানের। তারা চীনের কাছ থেকে যতটুকু পেয়েছে, তা চাহিদার তুলনায় একেবারেই কম। ফলে খুব শিগগিরই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসা যেন দূরাশায় পরিণত হয়েছে পাকিস্তানিদের জন্য।

পাকিস্তানের সাউথ সিটি হাসপাতালের কোভিড সেবা ও গবেষণা সমন্বয়ক ডা. নাশওয়া আহমাদ বলেন, একটি ভ্যাকসিন অবশ্যই এই রোগের (কোভিড-১৯) বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে অতিরিক্ত সহায়তা দিত। কিন্তু দৃশ্যমান ভবিষ্যতে এই দেশে কোনো ভ্যাকসিন নেই।

তিনি বলেন, হাসপাতালগুলো রোগীর সুনামিতে ভেসে গেছে। আমাদের তিনটি কোভিড-১৯ আইসিইউ ওয়ার্ডই পরিপূর্ণ এবং বাইরে অ্যাম্বুলেন্সে আরও রোগী অপেক্ষা করছে।

পাকিস্তানে সরকারি হিসাব অনুসারে এপর্যন্ত পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, মারা গেছেন অন্তত ১১ হাজার ৬০০ জন। যদিও সেখানে করোনা টেস্টের পরিমাণ একেবারেই অপর্যাপ্ত বলে অভিযোগ রয়েছে।

জানা গেছে, পাকিস্তান চীনের সিনোফার্মের কাছ থেকে ১২ লাখ ডোজ করোনা ভ্যাকসিনের নিশ্চয়তা পেয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ লাখ ডোজ পৌঁছানোর কথা চলতি সপ্তাহেই।

এবছরের মধ্যে অ্যাস্ট্রাজেনেকার কাছ থেকে পাকিস্তান আরও ১ কোটি ৭০ লাখ ডোজ পাবে বলে জানিয়েছেন দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এর মধ্যে ৬০ লাখ পৌঁছাবে মার্চের মধ্যে, বাকিটা বছরের দ্বিতীয়ার্ধে। এছাড়া, দরিদ্র দেশগুলোকে ২০০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন দেয়ার বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্সের কাছ থেকেও কিছু ভ্যাকসিন পাওয়ার আশা করছে পাকিস্তান সরকার।

তবে সেগুলোও দেশটির ২১ কোটি ৬০ লাখ মানুষের জন্য যথেষ্ট না-ও হতে পারে। আর এই সংকটের পেছনে ভ্যাকসিন জাতীয়তাবাদের বড় ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও ব্রিটিশ-সুইডিশ ওষুধ প্রস্তুতকারক অ্যাস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে এধরনের একটি বিরোধ চলছে। প্রতিষ্ঠানটি সম্প্রতি জানিয়েছে, তারা ইউরোপীয় জোটকে আগামী মার্চের মধ্যে আশানুরূপ ভ্যাকসিন না-ও দিতে পারে। ইইউ’র অভিযোগ, অ্যাস্ট্রাজেনেকা যুক্তরাজ্যের বাজারে ভ্যাকসিন সহজলভ্য করতে গিয়ে তাদের দেয়া কমিয়ে দিচ্ছে।

অনেকটা একই সমস্যা চলছে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যেও। সম্প্রতি ‘প্রতিবেশী প্রথম’ পরিকল্পনার ভিত্তিতে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, নেপাল, ভুটানকে ভ্যাকসিন দিয়েছে ভারত। তবে সেই তালিকায় নাম নেই পাকিস্তানের। দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের ভূরাজনৈতিক বিরোধের কারণেই ভারত পাকিস্তানিদের ভ্যাকসিন পাঠায়নি বলে মনে করা হচ্ছে।

পাকিস্তানের সমস্যা ভ্যাকসিনবিরোধীরাও
পাকিস্তান ভ্যাকসিন হাতে পাওয়ার পরে যে বড় সমস্যার মুখোমুখি হতে পারে, তা হলো জনগণের ভ্যাকসিনবিরোধী মনোভাব।

পাকিস্তানে এমনিতেই করোনাভাইরাস নিয়ে প্রচুর ভুল তথ্য ছড়িয়ে রয়েছে। অনেকেই মনে করেন, এই ভাইরাসের আসলে কোনো অস্তিত্বই নেই, অসুখের খবরটি ভুয়া। ফলে ভ্যাকসিন নেওয়ার প্রস্তাব দিলেও তা নিতে অনাগ্রহ দেখা যেতে পারে অনেকের মধ্যেই। এধরনের অবিশ্বাসের কারণেই পাকিস্তানে পোলিও নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে।

ডা. নাশওয়া আহমাদ বলেন, জনসাধারণের মধ্যে ধারণা রয়েছে যে, এই রোগের কোনো অস্তিত্ব নেই। এটা ভীতিকর। কারণ, আমরা এর কোনো শেষ দেখছি না, রোগের শেষ দেখছি না। অদূর ভবিষ্যতে ভ্যাকসিন না আসলে সংক্রমণ আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে।

সূত্র: সিএনএন

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫