কে বেশি দূষিত; তুরাগ না লবনদহ?

সাদিকুর রহমান
স্টাফ রিপোর্টার
বাংলাদেশের দূষিত নদীর কথা উঠলেই‘বুড়িগঙ্গা’র নাম প্রথমে আসলেও, দেশের বেশিরভাগ পরিবেশবাদী সংগঠনের মতে এই তালিকায় প্রথমে আসবে গাজীপুরের ‘তুরাগ’। অপরদিকে লবনদহ ভালুকা, শ্রীপুর ও গাজীপুর সদর দিয়ে তুরাগে মিশেছে। যদিও শ্রীপুর ও গাজীপুর সদরের শিল্প ও নাগরিক বর্জ্য সরু নালার মত লবনদহ দিয়ে অপেক্ষাকৃত বড় নদী তুরাগে মিশেছে। কিন্তু খোলা চোখে তুরাগের চেয়ে লবনদহের পানি বেশি ভয়াবহ নোংরা দেখায়। নামলেই চর্মরোগ ও অন্যান্য ক্ষতি হওয়ার আশংকা রয়েছে।
দূষণের মাত্রা পর্যবেক্ষণের জন্য ২০১৮ সালে “ওয়াটার কিপার্স বাংলাদেশ” গাজীপুরের বিভিন্ন স্থানের নদীর পানির উপর একটি সমীক্ষা চালায়। সমীক্ষাটিতে পানির ভারি ধাতুর উপস্থিতি ও বিদ্যুৎ পরিবাহিতা পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, তুরাগে বিদ্যুৎ পরিবাহিতা প্রতি সেন্টিমিটারে ১ হাজার ১৫৭ মাইক্রো সিমেন্স, ধলেশ্বরীতে ১ হাজার ৯৫, বুড়িগঙ্গায় ১ হাজার ৬৮। বিদ্যুৎ পরিবাহিতা বংশী নদীতে সবচেয়ে কম প্রতি সেন্টিমিটারে ১৬২ মাইক্রো সিমেন্স। এ ছাড়া শীতলক্ষ্যায় প্রতি সেন্টিমিটারে ১ হাজার ৬৮ সিমেন্স।
এমন সার্ভে কখনো লবনদহ কিংবা চিলাই নদীতে করা হয়েছে এমন তথ্য পাওয়া যায়নি। যে কেউ খালি চোখে দেখলেই বুঝবে তুরাগ, ধলেশ্বরীর চেয়ে লবনদহের পানি বেশি নোংরা ও দূষিত। কি নেই এই পানিতে ওয়াশিং, ডাইয়িং, ক্যামিকেল কারখানার বর্জ্য, হাসপাতালের ও ঔষধ কারখানার বর্জ্য, মৃত পশুর দেহ থেকে শুরু করে আবাসিক এলাকার পচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্য সহ অজানা আরো অসংখ্য বিষাক্ত বর্জ্যের ধারক এই নদী। অবশ্য এটাকে নদী বললে নদী’র সংজ্ঞাটাই বদলাতে হবে। নদীর দূষণের পাশাপাশি ফোরশোর দখল তো সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। যে কেউ ইচ্ছে হলেই নদীর গাঁ ঘেষে ভবন, সীমানা প্রাচীর, মৎস্য খামার, ভরাট করে চলেছেন। গুগল ম্যাপ আনুযায়ী নদীটির কোন কোন স্থানে বিলুপ্তও হয়েছে।
অথচ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ এর ৬ তে ¯পষ্ট এটিকে অপরাধ হিসেবে উল্লেখ রয়েছে। আইন লঙ্ঘনে শাস্তি হিসেবে রয়েছে- ” ২ থেকে ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা বা ২ বছর থেকে ১০ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড বা উভয় দন্ড”। তাছাড়া ওই বিধিমালার ১৫ এর- “ক” ও “খ” তে ক্ষতিপূরণ দাবি ও অপরাধের সহিত সংশ্লিষ্ট বস্তু, যন্ত্রপাতি বাজেয়াপ্ত বা বিনষ্ট করার ব্যাপারেও বর্ণনা রয়েছে।
লবনদহ’ই যে বেশি দূষিত তার নমুনা মেলে গাজীপুর সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জান্নাতুন শাহিন এর বক্তব্যে। তিনি বলেন ২০১৯ সালে ভাওয়াল মির্জাপুরে তুরাগ নদীর সংযোগস্থলের পানি পরীক্ষা করেছিলাম, তখনই দেখেছি ওই নদী মাছ সহ জলজ জীবের বেঁচে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছে।
একই মন্তব্য করছেন এক যুগেরও বেশি সময় নদী ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করা ‘সাঈদ চৌধুরী’। বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দলের জনপ্রিয় এই সদস্য বলেন, “আমার চোখে তুরাগের চেয়ে লবনদহ বেশি দূষিত। আর সেটা দিন দিন বেড়েই চলেছে। সাথে দখল আর গতি পরিবর্তন তো আছেই”।
গাজীপুরে কমবেশি আড়াই হাজার শিল্প কারখানা রয়েছে। এর মাঝে কতগুলা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ সনদ আছে জানতে চাইলে গাজীপুরের পরিবেশ বিষয়ক কর্মকর্তা নয়ন মিয়া আমাকে তথ্য ফর্মে আবেদন করতে বলেই কথা শেষ করেন। লবনদহের কথা জিজ্ঞাসার সময়ই দেননি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেনও মনে করেন লবনদহ নদীই বেশী দূষিত। তিনি বলেন, অবশ্যই লবনদহ নদীই বেশি দূষিত, এই নদীকে ঘিরেই রয়েছে অনেক শিল্প, যার বর্জ্য সরাসরি এই নদীতেই ফেলা হয়। আমি কয়েকবার ওই নদীর বিভিন্ন এলাকা ভ্রমণ করেছি, সত্যি নদীটির অবস্থা করুন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫