বিশেষ প্রতিবেদক
মানবপাচারের ঘটনায় উচ্চপদস্থ সরকারি কয়েকজন কর্মকর্তার জড়িত থাকার গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থাসহ ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের ব্যাপারে অভিযোগ তুলে বলা হয়েছে, তারাই মানবপাচারের ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করে চলছে। এর বিনিময়ে কামিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। ইতোমধ্যেই দুদকসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থায় ভুক্তভোগীরা লিখিত অভিযোগও দাখিল করেছেন। কিন্তু এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। ভুক্তভোগী মানুষজন বিভিন্ন দেশে বন্দী থাকাবস্থায় লিখিত অভিযোগ পাঠিয়ে জানিয়েছেন, ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা জয়নাল মিয়া, তানভীর হোসেন এবং জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার রাফায়েত উল্যাহ নামের একজন পরিচালক, র্যাব, সিআইডির একাধিক কর্মকর্তা সমন্বয়ে একটি সিন্ডিকেট এ মানবপাচার কর্মকাণ্ডে সরাসরি সম্পৃক্ত রয়েছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই সিন্ডিকেটের মানবপাচার কর্মকাণ্ড চলছে বাধাহীনভাবে। সংশ্লিষ্ট ভুক্তভোগীরা আরো জানিয়েছন, যে কোনো ব্যক্তিকে পাচারকারীরা কোনো কৌশলে বিমানবন্দরে নিয়ে গেলেই তাদেরকে নির্দিষ্ট দেশে পাঠিয়ে দেওয়ার যাবতীয় দায়িত্ব পালন করে থাকে সিন্ডিকে। সেখানে পাসপোর্ট, ভিসায় ত্রুটি বিচ্যুতিও তখন আর বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। বরাবরই মানবপাচারে জড়িত ছিলেন সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তারা সিন্ডিকেট গড়ে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। তাদের হয়রানি থেকে পাচারে বাধাদানকারীরাও রেহাই পায়নি। এখন মন্ত্রী, এমপির সিন্ডিকেট সক্রিয় না থাকলেও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সিন্ডিকেট সরব হয়ে উঠেছে।
এদিকে মানবপাচারকারী সিন্ডিকেটের মূল হোতাদের রক্ষা করতে প্রতিটি মামলা ভিন্নখাতে প্রবাহের অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে যারা মানব পাচারের ক্ষেত্রে বাধা প্রদান করে তাদেরকেই নানা কায়দা কৌশলে মামলায় আসামি বানিয়ে দেওয়ায় সবকিছু ভন্ডুল হয়ে যায়। এর আগে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের সাবেক সিনিয়র ওয়ারডেন কর্মকর্তা মো: মাহাবুব মোর্শেদ মোবাইলে জানান, ২০২০ সালের ৬ আগস্ট আনুমানিক বিকেল ৫টার দিকে চার ব্যক্তি এসে ইতালির জালি রেসিডেন্স কার্ড দেখিয়ে ২০ জন অবৈধ যাত্রীকে এমিরটেস এয়ারলাইন্স দিয়ে বিদেশ যেতে সহায়তার প্রস্তাব দেয়। তিনি অনীহা প্রকাশ করলে তাকে ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার হুমকি দেয় ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরা। এ নিয়ে ২০২০ সালে একাধিক থানায় জিডি করা হয়। ৬ আগস্ট বনানী থানায় জিডি করা হয়।
এর আগে মার্চ মাসে ফোন করে তাকে হত্যার হুমকি দেয় মানবপাচারে জড়িত ওই সিন্ডিকেট। এ বিষয়ে বিমানবন্দর থানায় জিডি করা হয়েছে। রামপুরা থানায়ও একটি জিডি করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে মাহাবুব মোর্শেদের উপর শারীরিক হামলা, গুমের ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। এতে জীবন বাঁচাতে তিনি বাধ্য হয়ে পরিবার নিয়ে দেশত্যাগ করেন। এখন প্রশাসন নিজেদের বাঁচাতে তার নামে মামলা দিয়ে তাকে ও পরিবারকে হয়রানি করছে।