দেশে যেন এলাহি সব কাণ্ড কারখানা চলছে, যার যেমন খুশী তেমন ভাবেই চালিয়ে যাচ্ছেন সবকিছু। পর্যটন রাজধানী খ্যাত কক্সবাজারের ইনানীতে গড়ে তোলা একটি হোটেল রিসোর্ট যা ইচ্ছে ঘটিয়ে চলছে, এখন তারা নিজস্ব আইন প্রণয়ন করে তা পর্যটকদের উপরে চাপিয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটাচ্ছে। তাদের আইন শুধু জরিমানা আদায়ের। হোটেলের চলাচল প্যাসেজে দাঁড়িয়ে কথা বললে জরিমানা, দরজা জানালা খোলা কিংবা বন্ধ করার শব্দ হলে জরিমানা, উচ্চ মূল্যে ভাড়া করা রুমে সিগারেট পান করলেও মোটা অঙ্কের জরিমানা আদায় করে নিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। তাও যেনতেন জরিমানা নয়- রুমে ঢুকে বোর্ডার একটা সিগারেট ধরানোর অপরাধে ১০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে বাধ্য করার ঘটনা ঘটেছে। রীতিমত রিসিট দিয়েই সে জরিমানার দণ্ড আদায় করে নিয়েছে ওই হোটেল কর্তৃপক্ষ। রীতিমত অভাবনীয় ঘটনা। বিশ্বের কোথাও এমনতর উঁচুদরের দণ্ড প্রদানের কোনো নজির নেই।
একটা সিগারেট ধরিয়ে ১০ হাজার টাকা জরিমানার দণ্ড দেওয়ার পর আরো বড় ক্ষতির শঙ্কা করছেন ওই পর্যটক দম্পতি। ওই রাতেই তারা ঢাকায় ফিরলেও তাদের আতঙ্ক হচ্ছে, রুমের কোথাও তো এন্ট্রি স্মোক কোনো যন্ত্র বসানো ছিল না। তাহলে দোতলার কক্ষ থেকেই কর্মকর্তারা সেই অপরাধের ব্যাপারে নিশ্চিত হলেন কীভাবে? তবে কি রুমের ভেতরে অতিগোপনীয় ভিডিও রেকর্ডিংয়ের ব্যবস্থা করা আছে তাদের? কী সর্বনাশ, ভাবতে পারেন!
ময়মনসিংহের সাবেক মেয়র, আওয়ামীলীগ নেতা টিটুর দাপুটে বড় ভাই শামীম সাহেবের মালিকানাধীন সী পার্ল নামক বিচ রিসোর্ট এন্ড স্পা লিমিটেড এ অপকর্ম চালিয়ে আসছে। আওয়ামী লীগ শাসনামলে বোর্ডারদের রুমে আটকে রেখে জরিমানা আদায় করে তবেই হোটেল থেকে বাইরে বেরুতে দেওয়া হতো। এখন তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় নেই, অস্ত্রবাজ ক্যাডার নেই- প্রশাসনও নাকি বৈরী! কিন্তু আওয়ামী শামীমের সবকিছু এখনও বহাল আছে কক্সবাজারে। সেখানকার ছাত্র সমন্বয়ক, বিএনপি-যুবদল সবাই নাকি অপরাধ অপকর্মের আস্তানা সি পার্ল থেকে মাসিক হারে বেতন নিয়ে থাকেন। হোটেল কর্তাদেরই দাবি এসব- কিন্তু কর্মকর্তা পর্যায়ে, নাকি কামলা হিসেবে মাসিক বেতন/অনুদান/ভিক্ষা নেন তা জানা যায়নি।
——-
এবার দেখা যাক, আমাদের দেশের প্রচলিত আইন কি বলে?
ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ (২০০৫ সনের ১১ নং আইন)- পাবলিক প্লেস এবং পাবলিক পরিবহণে ধূমপান নিষিদ্ধ।
৪।(১) ধারা ৭ এর বিধান সাপেক্ষে, কোন ব্যক্তি কোন পাবলিক প্লেস এবং পাবলিক পরিবহণে ধূমপান করিতে পারিবেন না।
৬। (২) কোন ব্যক্তি উপধারা (১) এর বিধান লঙ্ঘন করিলে তিনি অনধিক তিনশত টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং উক্ত ব্যক্তি দ্বিতীয়বার বা পুনঃ পুনঃ একই ধরনের অপরাধ সংঘটন করিলে তিনি পর্যায়ক্রমিক ভাবে উক্ত দণ্ডের দ্বিগুণ হারে দণ্ডনীয় হইবেন।
দেশের আইন যেখানে পাবলিক প্লেসে ধূমপানের জন্য দায়ী ব্যক্তিকে অনধিক ৩০০ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রেখেছে, সেখানে একই দেশে কোন আইন বলে সেই দণ্ডের পরিমাণ ১০ হাজারে পৌঁছালো?
কক্সবাজারে পর্যটকদের স্বার্থ সংশ্লিষ্টতা দেখভাল করাসহ যথাযথ আইন প্রয়োগের জন্য ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া রয়েছে। মূল সৈকতের চারপাশে গড়ে ওঠা ফুটপাত বাজার, অবৈধ দখল, বেআইনি ইমারত নির্মাণ, অবৈধ কর্মকাণ্ডের আখড়াগুলোর মাসোহারা তুলতে তুলতেই তিনি ক্লান্ত থাকেন। এ কারণে সেখানে দেশের প্রচলিত আইনকে পায়ে দলে প্রতারকরা নিজস্ব বিধি বিধান পর্যন্ত প্রয়োগ শুরু করেছেন, তাও প্রকাশ্যে, রিসিট দিয়ে। কারণ দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট মহোদয় ক্লান্ত থাকলে তো চোখেও দেখেন কম কম। আর আওয়ামী মালিকের প্রতিষ্ঠান বলে কথা…
লেখাটা সাঈদুর রহমান রিমনের টাইমলাইন থেকে নেওয়া