লাকসাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি.
অবশেষে ১০দিন পর লাকসাম ইক্বরা মহিলা মাদ্রাসার ছাত্রী সামিয়া আক্তার (১৩) হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। সোমবার (২৮ এপ্রিল) নিহত সামিয়ার পরিবার এ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠ তদন্তসহ বিচারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
ওইদিন দুপুর সাড়ে ১২টায় লাকসাম প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে নিহত সামিয়ার মা অভিযোগ করেন, তাঁর মেয়েকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে। মাদ্রাসা সুপার জামাল উদ্দিন, শিক্ষক শারমিন ও দারোয়ান খলিলকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ঘটনার সঠিক রহস্য উদঘাটন হবে বলে তিনি দাবি করেন।
এ সময় সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সামিয়ার বাবা নিজাম উদ্দিন, খালাতো ভাই জাহিদ হোসেন ও রাকিব হোসেন।
আগেরদিন রবিবার (২৭ এপ্রিল) রাতে নিহত সামিয়ার মা শারমিন বেগম বাদি হয়ে লাকসাম থানায় এই হত্যা মামলাটি দায়ের করেন।
সামিয়ার মা’র অভিযোগ, সামিয়ার রহস্যজনক মৃত্যুর পর তিনি হত্যা মামলা দায়ের করার জন্য একাধিকবার থানায় গেলেও পুলিশ মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানান। পরে সামিয়ার মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে সুষ্ঠ তদন্তসহ বিচারের দাবি জানিয়ে লাকসাম উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) বরাবর তিনি একটি আবেদন করেন। অবশেষে ১০দিন পর গতকাল রবিবার (২৭ এপ্রিল) লাকসাম থানা হত্যা মামলাটি রুজু করেন।
তিনি জানান, তাঁর বাড়ি কুমিল্লার নাঙ্গলকোট পৌরসভার ২নম্বর ওয়ার্ডের নাওগোদা গ্রামে। তাঁর স্বামী নিজাম উদ্দিন প্রবাসে থাকেন। গত ১৫ মার্চ সামিয়াকে লাকসাম ইক্বরা মহিলা মাদ্রাসায় (আবাসিক) ভর্তি করেন। রমজান ও ঈদের ছুটি শেষে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু তাকে মাদ্রাসায় রেখে যান।
এদিকে মেয়ের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে গত শনিবার (২৬ এপ্রিল) সকালে সামিয়ার পিতা নিজাম উদ্দিন প্রবাস থেকে বাড়ি এসেছেন। মেয়ের মৃত্যুতে শোকে বাবা অনেকটা নির্বাক।
সামিয়ার মা জানান, সামিয়ার ফোন পেয়ে গত ১৩ এপ্রিল তার বড়বোন এবং খালাম্মাকে মাদ্রাসায় পাঠানো হয়। তাঁরা তাকে বাড়িতে নিতে চাইলে মাদ্রাসা সুপার জামাল উদ্দিন ছুটি দিতে অস্বীকৃতি প্রদান করেন। একপর্যায়ে তিনি ধমক দিয়ে তাঁদের বের হয়ে যেতে বলেন। এ সময় মাদ্রাসার দারোয়ান খলিল ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন এবং শিক্ষক শারমিন টেনে হিঁচড়ে সামিয়াকে শ্রেণিকক্ষে নিয়ে যায়।
নিহত সামিয়ার মা শারমিন আক্তারের অভিযোগ, মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন কথা বলে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছে। তাঁর মেয়েকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
তাঁর অভিযোগ, মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ঘটনাটি মিমাংসার জন্য কতিপয় রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যস্থতায় সামাজিক ভাবে সমঝোতার জন্য চাপ দিচ্ছেন।
ইক্বরা মহিলা মাদ্রাসার সুপার মো. জামাল উদ্দিন তাঁর বিরুদ্ধে আণীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ঈদের ছুটির পর সপ্তাহখানেক আগে ওই শিক্ষার্থীর নিয়মিত ক্লাস শুরু হয়। তবে সে মাদ্রাসার আবাসিকে থাকতে সে অনাগ্রহী ছিলো।
তিনি জানান, বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) রাতে ওই শিক্ষার্থী তার মাকে ফোন দেয় এবং বাড়ি যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে। ঘটনারদিন গভীর রাতে মাদ্রাসার একটি জানালার গ্রীলের ফাঁকা জায়গা দিয়ে পালাতে গিয়ে নিচে পড়ে আহত হয়। এমতবস্থায় স্থানীয় লোকজন দেখে আমাকে মুঠোফোনে অবহিত করলে আমিসহ অন্যান্যরা তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যাই। পরে চিকিৎসকের পরামর্শে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। সেখানে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সে মারা যায়।
এই ব্যাপারে লাকসাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাজনীন সুলতানা হত্যা মামলা রুজুর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
ওসি বলেন, সামিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় তার এক স্বজন লাকসাম থানায় পূর্বে একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু করেছিলেন। তবে ঘটনার তদন্তে পুলিশী কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়া, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ উদঘাটিত হবে।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) দিবাগত রাত তিনটার দিকে কুমিল্লার লাকসাম পৌরসভা কার্যালয় সংলগ্ন ইক্বরা মহিলা মাদ্রাসার পাঁচতলা ভবনের পাশে পৌরসভা সড়কের ওপর থেকে ওই মাদ্রাসার শিক্ষার্থী সামিয়া আক্তারকে স্থানীয় লোকজন আহত অবস্থায় উদ্ধার করেন। পরদিন শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়।