মামুনুর রশীদ নোমানী,বরিশাল অফিস:
বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর বিপর্যস্ত করে খনিজ পানি উত্তোলন ও বাজারজাতের অভিযোগে অমৃত গ্রুপের বিরুদ্ধে সাতমাইল এলাকায় মানববন্ধন করেছেন স্থানীয়রা। সোমবার (২৮ এপ্রিল) সকাল ১১টায় স্থানীয় সাধারণ জনগণের আয়োজনে শতাধিক মানুষ এতে অংশগ্রহণ করেন। মানববন্ধন থেকে অবিলম্বে অমৃত গ্রুপ অব কোম্পানির অবৈধ পানি উত্তোলন বন্ধের দাবি জানানো হয়।
সূত্র জানায়, অমৃত গ্রুপ বিগত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বাবুগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার ভূগর্ভস্থ পানি বিশাল আকারে উত্তোলন করে বোতলজাত করে বাজারজাত করে আসছে। এর ফলে হিজলা, খাতিয়া, রহমতপুর, মেখিয়া, চাঁদপাশা, মাধবপাশা, পাংশা, গড়িয়ার পাড় ও ক্যাডেট কলেজ এলাকার পানির স্তর বিপজ্জনকভাবে নিচে নেমে গেছে।
বর্তমানে গভীর নলকূপের মাধ্যমেও পানি পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকিমসজিদ-মাদ্রাসাসহ জনজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে চরম পানির সংকট দেখা দিয়েছে। মানববন্ধনে স্থানীয় বাসিন্দা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন,ভোর ৪টায় উঠেও টিউবওয়েলে পানি পাই না। অথচ আমাদের এলাকার ভূগর্ভস্থ পানি চুরি করে অমৃত গ্রুপ কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করছে।
এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে আজ আমরা রাস্তায় নেমেছি। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আরও কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো। বাবুগঞ্জ এলাকার গৃহিণী মিসেস নাসরিন আক্তার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,আমরা এখন পানি কিনে খেতে বাধ্য হচ্ছি। গ্রামের মানুষ কীভাবে চলবে।
খনিজ পানি আমাদের মৌলিক অধিকার, অথচ কোম্পানি তা লুট করছে। প্রশাসন যদি আমাদের পাশে না দাঁড়ায়, আমরা নিজেরাই ব্যবস্থা নেব। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট এম. মাসুদ হাওলাদার জানান, ভূগর্ভস্থ পানি দেশের সম্পদ।অমৃত গ্রুপ বেআইনিভাবে পানি উত্তোলন করে দেশের বাজারে বিক্রি করছে। এতে সাধারণ জনগণ পানির জন্য হাহাকার করছে। দ্রুত তদন্ত করে অবৈধ উত্তোলন স্থায়ীভাবে বন্ধ করা না হলে, জনগণের মধ্যে বড় ধরনের ক্ষোভ তৈরি হবে, যা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির জন্ম দিতে পারে।তিনি বলেন,পানি মৌলিক অধিকার, কোনোভাবেই ব্যক্তিমালিকানায় বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যায় না। সরকারকে দ্রুত এই সমস্যা সমাধান করতে হবে।
বরিশালে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে বাজারজাত করায় অমৃত গ্রুপের বিরুদ্ধে বরিশাল জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। সোমবার (২১ এপ্রিল) বরিশাল ক্যাডেট কলেজ এলাকার বাসিন্দা ও আইনজীবী এম. মাসুদ হাওলাদার এ আবেদন করেন।আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে , অমৃত গ্রুপ অব কোম্পানি বিগত এক বছরের বেশি সময় ধরে নদী বা সমুদ্রের পানি রিফাইন না করে ভূগর্ভস্থ পানীয় জল অবৈধভাবে উত্তোলন করে বরিশাল সহ দেশের সর্বত্র বাজারজাত করছে। যার ফলে পার্শ্ববর্তী হিজলা, ছাতিয়া, রহমতপুর, মেথিয়া, চাঁদপাশা, ক্যাডেট কলেজ, মাধবপাশা, পাংশা, গড়িয়ার পাড় সহ আশেপাশের এলাকার তীব্র পানীয়জলের সংকট দেখা দিয়েছে। গভীর নলকূপে প্রায় সময়েই পানি থাকে না, মাঝে মাঝে ভোর রাতে দিকে কিছুটা পানি পাওয়া যায়।
অমৃত লাল দে কনজ্যুমার ফুড প্রোডাক্ট ফ্যাক্টরির ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজার জয় দে বলেন, “বর্তমানে আমাদের ফ্যাক্টরির আশেপাশে জনবসতির ঘনত্ব অনেক বেড়ে গেছে। প্রতিবছর এই সময়টাতে এ অঞ্চলের টিউবওয়েলগুলোতে পানি তুলনামূলকভাবে কম উঠে। অন্যদিকে, আশপাশের অধিকাংশ পুকুর, ডোবা ও খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবও এর অন্যতম কারণ।তিনি আরও বলেন, “এলাকার অনেকেই অনেক আগেই গভীর নলকূপ (ডিপ টিউবওয়েল) বসিয়েছেন, যার গভীরতা ৬০০ থেকে ৮০০ ফুট পর্যন্ত। তাই এসব নলকূপে এখন পানি কম ওঠা স্বাভাবিক। আমরা ফ্যাক্টরিতে একটি ২ এইচপি পাম্প ও ২ ইঞ্চি পাইপ ব্যবহার করে ১০৪০ ফুট গভীরতা থেকে পানি উত্তোলন করি। প্রতিদিন ১১ থেকে ১৪ হাজার লিটার পানি উত্তোলন করা হয়, যা একটি সাধারণ পরিবারের ব্যবহারের সমপরিমাণ।” জয় দে দাবি করেন, “আমাদের পানি ব্যবহারের পরিমাণ এলাকায় কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলে না। বরং আমরা যতটুকু পানি উত্তোলন করি, তা খুবই সীমিত এবং নিয়ন্ত্রিত।সরেজমিনে জানা গেছে, প্যাকেজজাত পানির প্রস্তুতকারক ‘যোগমায়া ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লি. নামক প্রতিষ্ঠানটির কারণে বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার অনেক বসতবাড়ির টিউবওয়েল ও মর্টার লাইনে প্রায় এক বছর ধরে পানি উঠছেনা। রাত গভীর হলে কিছু পানি উত্তোলন করা সম্ভব হয়। সুপেয় পানির তীব্র সংকটের দুর্ভোগে পড়েছে শত শত পরিবার।একাধিক বাসিন্দা বলেন- শুষ্ক মৌসুমের সময় বরিশাল সহ দেশের সকল স্থানে ভূগর্ভস্থের সুপেয় পানির সংকট দেখা দেয়। এই সময়ে ভূগর্ভস্থের পানি উঠিয়ে বাজারজাত করলে সংকট আরো বাড়বে এটা স্বাভাবিক। অথচ ৫ কিলোমিটার দূরে নদী থাকলেও সেখান থেকে পানি উত্তোলন ও রিফাই করে বাজারজাত করলে উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না।