শাহান সাহাবুদ্দিন, বিশেষ প্রতিনিধি:
গাজীপুর সদর উপজেলার ভবানীপুর বাজারের আশপাশ এলাকায় ভাওয়াল রেঞ্জের বনভূমিতে নির্মিত অবৈধ ঘরবাড়ি, দোকান ও মার্কেট গুঁড়িয়ে দিয়ে ৪০ শতাংশ সংরক্ষিত বনভূমি উদ্ধার করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) দিনব্যাপী বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ এবং পুলিশ ও র্যাবের অংশগ্রহণে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত করে বনভূমি উদ্ধার করা হয়। উচ্ছেদকৃত জমির আনুমানিক মূল্য ২০ কোটি টাকা।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত ভাওয়ালগড় ইউনিয়নের ভবানীপুর বাজার এলাকায় বন বিভাগের জমিতে স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান চালায় বন বিভাগ। এ সময় তিনটি স্থান থেকে ৪০ শতাংশ জমি উচ্ছেদের তালিকা করা হয়।
উচ্ছেদকালে চোখের সামনে একে একে স্বপ্ন গুঁড়িয়ে যেতে দেখে অনেকেই বুক চাপড়ে কান্না করতে থাকেন। তাদের আর্তনাদে উপস্থিত দর্শনার্থী অনেকেই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি।
সজিব-ফারহানের মা কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকেন, ‘আমরা কী মাথা গুঁজার ঠাঁই পাবো না? আমাদের কী বেঁচে থাকার অধিকার নাই? আমরা গরীব এটাই কী আমাদের অপরাধ!’
মিলন ভূঁইয়ার স্ত্রী বিলাপ করতে করতে বলেন,’ ভাবছিলাম একটু স্বস্তিতে থাকমু সন্তানাদি নিয়া। অভাব অনটনের জীবনে শান্তির দেখা পামু। তা আর হইলো না।’
সিদ্দিক নামের একজন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমরা তো এই দেশেরই নাগরিক। কতো লোক কোটি কোটি টাকা লুটপাট করে নিয়ে যায়। বড় বড় অট্রালিকা বানায়। হেগর (ওদের) কিছু হয় না, মরি আমরা গরিবেরা।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক শিক্ষক বলেন,’ যেসব সচ্ছল ও বিত্তশালীরা ভাড়া দেওয়ার উদ্দেশে বনের জমিতে স্থাপনা তুলেছে সেগুলো আগে ভেঙে দেওয়ার দাবি জানাই। কিন্তু যারা নিতান্তই দরিদ্র, অসহায়, মাথা গোঁজার একমাত্র ঠাঁই, সেগুলো পুনর্বাসনের আগ পর্যন্ত মানবিক দৃষ্টিতে দেখার আবেদন জানাই। একইসঙ্গে যেসব শিল্পপতিরা কোটি কোটি টাকার বনের সম্পত্তি দখল করে শিল্প-প্রতিষ্ঠান গড়েছেন তাদের দিকে সরকারের নজর দেওয়া উচিত। রাঘববোয়ালরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকবে কেন? তাদের থেকে জবরদখলকৃত জমি উচ্ছেদ করে আইনানুগ পদক্ষেপের দাবি জানাই।’
সূত্র জানায়, ১৪১৫ নং দাগে টিনের ছাপরা ঘরবাড়ি উচ্ছেদ করে ১৫ শতাংশ, ১৩৯৭ নং দাগে হেলাল উদ্দিনের গোডাউন ও মার্কেট উচ্ছেদ করে ৯ শতাংশ, ১৪২২ নং দাগে মিলনের মার্কেটের ৮ টি দোকানঘর উচ্ছেদ করে ১৬ শতাংশ, মোট ৪০ শতাংশ বনের জমি উদ্ধার করা হয়। যার আনুমানিক মূল্য ২০ কোটি টাকা।
ভাওয়াল রেঞ্জের আয়োজনে পরিচালিত এই অভিযানে অবৈধভাবে বনবিভাগের জমিতে নির্মিত দখল বাণিজ্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। ভাওয়াল রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম এর নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে ছিলেন পুলিশ, র্যাব ও বন বিভাগের বিপুল সদস্য।
বনবিভাগ সূত্র জানায়, ভাওয়াল রেঞ্জের আওতাধীন ভবানীপুর বাজার এলাকার অবৈধ দখলদারদের ঘরবাড়ি, দোকান, মার্কেট, গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এতে করে অনেকেই তাদের সহায় সম্বল হারিয়ে ভেঙে পড়েন।
ভাওয়াল রেঞ্জ কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন,’ভবানীপুর বাজার এলাকায় তিনটি দাগে আমাদের মাননীয় উপদেষ্টা মহোদয়ের নির্দেশে এবং প্রধান বন-সংরক্ষক ও বিভাগীয় বন-কর্মকর্তার সহযোগিতা ও পরামর্শক্রমে সকাল ৯টা থেকে আমরা অভিযান পরিচালনা করি। এই অভিযানের মাধ্যমে দোকান, মার্কেট ও ঘরবাড়ি উচ্ছেদ করে মোট ৪০ শতাংশ বনভূমি উদ্ধার করা হয়। যার আনুমানিক মূল্য ২০ কোটি টাকা। তিনি আরও বলেন, ‘যারা বন বিভাগের জায়গায় ঘরবাড়ি তৈরি করে দখল করেছেন, নিজ দায়িত্বে অপসারণ করে নিবেন। আমাদের এ অভিযান ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।