রবিবার , ১৯শে মে, ২০২৪ , ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ , ১০ই জিলকদ, ১৪৪৫

হোম > খেলা > এটা অবিশ্বাস্য, অবাস্তব অভিজ্ঞতা : করোনা যুদ্ধে নামা রাগবি তারকা

এটা অবিশ্বাস্য, অবাস্তব অভিজ্ঞতা : করোনা যুদ্ধে নামা রাগবি তারকা

শেয়ার করুন

স্পোর্টস ডেস্ক ॥
চলতি মাসের শুরুতে হতে যাওয়া ছয় জাতি টুর্নামেন্টের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ইতালিয়ান রাগবি ইউনিয়নের খেলোয়াড় ম্যাক্সিম এমবান্দা। কিন্তু তিনি নিজেও হয়তো জানতেন না সামনের দিনগুলোতে কী অপেক্ষা করছে জীবনে।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে একটি টেস্ট ম্যাচ খেলার কথা ছিল ইতালির। কিন্তু ইনজুরির কারণে ছিটকে যান ২৬ বছর বয়সী ম্যাক্সিম। পরে করোনাভাইরাসের কারণে বাতিল করা হয় সেই ম্যাচ। নিজে একা একাই প্রস্তুতি নিতে থাকেন পরবর্তী টুর্নামেন্টের।

কিন্তু মহামারী করোনাভাইরাসের প্রকোপ অতিমাত্রায় বাড়তে থাকলে, নিজের রাগবি জার্সি তুলে রেখে পিপিই গায়ে জড়ান ম্যাক্সিম, নাম লেখার করোনা যুদ্ধে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই বিধ্বস্ত উত্তর ইতালিতে সামনে থেকে করোনা যুদ্ধে লড়ছেন দেশটির রাগবি তারকা ম্যাক্সিম এমবান্দা।

শুরুতে তিনি পারমার বয়ষ্ক মানুষদের জন্য খাবার এবং ওষুধ সরবরাহের কাজ করতে থাকেন। পরে তাকে দেয়া স্বেচ্ছাসেবী অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভারের দায়িত্ব। দিনে অন্তত ১২ ঘণ্টা কোভিড-১৯ সংক্রমিত রোগীদের এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে নেয়ার কাজ করছেন তিনি।

কীভাবে বদলে গেল সবকিছু, তিনি নাম লেখালেন করোনা যুদ্ধে- এসব নিয়ে সিএনএনের সঙ্গে কথা বলেছেন ম্যাক্সিম। জানিয়েছেন, ‘আমি তখন পারমায়, আমার বাড়িতে। কোন অনুশীলন নেই, খেলা নেই, ছুটির দিনেও ম্যাচ নেই। সবকিছু কেমন যেন স্থবির হয়ে গেল।’

তখন ম্যাক্সিম নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করেছিলেন, কীভাবে এগিয়ে আসতে পারেন দেশের সাহায্যে। তিনি বলেন, ‘আমি আমাকে জিজ্ঞেস করলাম, পারমার মানুষজনের জন্য আমি কী করতে পারি? আমি তখন ইন্টারনেটে খোঁজাখুঁজি করে একটা প্রতিবেদন পেলাম। যেখানে পারমা কমিউনিটি এবং ইয়োলো ক্রসের মধ্যে সমন্বয়ের কথা বলা হয়েছে।’

ম্যাক্সিম বলতে থাকেন, ‘তখন পরিকল্পনা ছিল, করোনা রোগীদের ব্যস্ত হাসপাতাল থেকে তুলনামূলক ফাঁকা হাসপাতালে স্থানান্তর করা। কিন্তু আসলে খালি হাসপাতাল পাওয়া ছিল অসম্ভব পর্যায়ের ব্যাপার। কোন হাসপাতালে একটি বেড খালি হলে, সেটি ভরতে কোন সময়ই লাগত না। কারণ সবখানেই রোগীদের লম্বা লাইন।’

গত সপ্তাহে একটি হাসপাতালে গিয়েও রোগীকে না রেখে ফিরতে হয় ম্যাক্সিমকে। কারণ সেখানে অন্তত ১৫০ জন মানুষ চিকিৎসার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে ছিল। পারমার হাসপাতালগুলোর অন্তত ৯৫ শতাংশ জায়গাই করোনা ওয়ার্ডে রুপান্তরিত হয়েছে।

অবশ্য এছাড়া আর উপায়ও নেই। কেননা ইতালিতে এরই মধ্যে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার আক্রান্ত হয়েছে করোনায়। আর মারা গেছে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ। এক মাস আগেও ম্যাক্সিম কল্পনা করেননি যে, পরিস্থিতি এমন হয়ে যাবে।

‘মাসখানেক আগেও বলতে পারতাম না যে, আমরা এই অবস্থায় পড়বো। এটা অবিশ্বাস্য। আমি স্কুলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, ইরাক যুদ্ধ, সিরিয়া যুদ্ধ, আফ্রিকা- এসবের ব্যাপারে পড়েছি। কিন্তু এখন তো পুরোপুরি ভিন্ন জগত। অদৃশ্য শত্রুর বিপক্ষে লড়াই। এটা অবাস্তব।’

ম্যাক্সিমের বাবা একজন সার্জন। তবে ম্যাক্সিম নিজে কখনও এমন জরুরি সেবায় অংশ নেননি। মূলত বাবা-মায়ের অনুপ্রেরণাতেই সম্ভব হয়েছে এটি, ‘আমার বাবা-মা সবসময় আমাকে সাহায্যকারী হিসেবে বড় করেছে। তারা বলতো, যখন আমার কাছে টাকা আছে বা শক্তি আছে, আমি যেন বিপদে পড়া মানুষদের সাহায্য করি।’

নিজের এই স্বেচ্ছাসেবী কাজের চ্যালেঞ্জের কথা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিদিন দেখা যায়, নতুন কোন হাসপাতাল সবচেয়ে ব্যস্ত হাসপাতাল হয়ে যায়। তাই দেখা যায়, একদিন এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে স্থানান্তর করার পর, দ্বিতীয় দিন আবার ভিন্ন কোন হাসপাতালের খোঁজ করতে হয়।’

এসময় তিনি ডাক্তার-নার্সদের জন্য একটা ভারসাম্যপূর্ণ কাজের রুটিনের পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ‘ডাক্তার এবং নার্সরা যেন চাপমুক্তভাবে নিজেদের সেরা কাজটা করতে পারে, সেজন্য আমাদের একটা ভারসাম্য আনতে হবে। যাতে করে তারা বেশি মানুষকে সেবা দিতে পারে।’

এদিকে এই কাজের মধ্যেও নিজের ফিটনেস ঠিক রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন ম্যাক্সিম, ‘ইয়োলো ক্রসে যাওয়ার আগে কিংবা কাজ শেষে ফিরে, আমি ঘরের মধ্যে ট্রেনিং করি। বিভিন্ন ব্যায়াম করি। আমাকে ফিটনেস ধরে রাখার জন্য ট্রেনিং করতেই হবে। কারণ আমি আশা করি খুব শীঘ্রই এই অবস্থা কেটে যাবে এবং আবার মাঠে খেলার সুযোগ পাব।’

দেশের তরুণ সমাজের জন্যও এক বার্তা দিয়েছেন ম্যাক্সিম। তিনি বলেন, ‘তরুণ ছেলে-মেয়েরা, যাদের বাচ্চাকাচ্চা বা পরিবার সঙ্গে নেই, একা থাকে- তারা বোর হয়ে গেলে, সোশ্যাল মিডিয়াতে অভিযোগ না করে ইন্টারনেটে রিসার্চ করো, তোমার আশপাশের বয়ষ্কদের ফোন করে খোঁজখবর নাও। অনেক মানুষেরই এখন সাহায্য দরকার। তাদের পাশে দাঁড়াও।’