মঙ্গলবার , ১৪ই মে, ২০২৪ , ৩১শে বৈশাখ, ১৪৩১ , ৫ই জিলকদ, ১৪৪৫

হোম > জাতীয় > গাজীপুরে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রমের উদ্বোধন

গাজীপুরে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রমের উদ্বোধন

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥
গাজীপুরঃ ‘নির্বাচনী অঙ্গীকারে ডিজিটাল হলো দেশ- মুজিব বর্ষেই-পাসপোর্ট ধন্য বাংলাদেশ’ স্লোগানে ঢাকার বাইরে প্রথম গাজীপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে ই-পাসপোর্টের (ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট) কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় গাজীপুর শহরের টাংকিরপাড় এলাকার গাজীপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদ এই কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিকভাবে শুভ উদ্বোধন করেন।

উদ্বোধনের পর মহাপরিচালক এই অফিসের প্রথম ই-পাসপোর্ট প্রার্থী মোঃ আব্বাস আলী শিকদারের হাতে পাসপোর্টের আবেদন স্লিপ তুলে দেন।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন গাজীপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক (এডি) মোঃ সালেহ উদ্দিন।

ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের পরিচালক (সিস্টেম এনালিস্ট) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ই-পাসপোর্ট ও স্বয়ংক্রিয় বর্ডার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনার প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুর রহমান খান, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস.এম. তরিকুল ইসলাম, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার আজাদ মিয়া, জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জহিরুল ইসলাম প্রমুখ।

মহাপরিচালক বলেন, দেশে ২ কোটি ৮২ লাখের বেশি পাসপোর্টধারী রয়েছে। কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর ১ মাস ১০ দিনে ৪ হাজার নাগরিকের কাছে ই-পাসপোর্ট তুলে দিতে পেরেছি। এই সময়ে আবেদন জমা হয়েছে ৪০ হাজার। প্রদানের সংখ্যাটা অত্যন্ত নগণ্য।

তিনি আরো বলেন, আমাদের যে জনবল রয়েছে তা নিয়ে দিন রাত কাজ করে যাচ্ছি জনগণকে সেবা দিতে। রাত আড়াইটা পর্যন্ত পাসপোর্ট প্রিন্টের কাজ চলে। তারপরও নতুন সিস্টেম থাকায় পাসপোর্ট পেতে কিছুটা বিলম্ব হতে পারে। আপনারা ধৈর্য ধরবেন। খুব বেশি জরুরি হলে যেকোনও অফিসের প্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।

মধ্যসত্ত্বভোগীদের (দালাল) উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনাদের প্রতি অনুরোধ সেবা প্রার্থীদের হয়রানি করবেন না। আরও অনেক কিছু করার বিষয় আছে। আপনারা অন্যভাবে আমাদের সহযোগিতা করেন। তাহলে আমরা সম্মিলিত ভাবে এগিয়ে যেতে পারব।

তিনি আরো বলেন, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালকের দায়িত্ব পেয়েছি ৫ মাস হয়েছে। এই সময়ে গাজীপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ পাইনি। তার মানে এই নয় যে- এখানে অভিযোগ নেই। জনগণ রাজস্ব প্রদান করছেন, তাদের সেবা দেয়া আমাদের দায়িত্ব। সেবা দিতে না পারা আমাদের ব্যর্থতা।

কর্মকর্তারা বলেন, আপাতত ই-পাসপোর্টের পাশাপাশি প্রচলিত এমআরপি পাসপোর্ট ব্যবস্থাটিও বহাল থাকবে। তবে নতুন করে আর কাউকে এমআরপি পাসপোর্ট ইস্যু করা হবে না। বর্তমানে এমআরপি পাসপোর্টধারীরা যখন নবায়ন করতে যাবেন, তখন তাদেরকেও ই-পাসপোর্ট দেয়া হবে। এভাবে পর্যায়ক্রমে সব এমআরপি পাসপোর্ট তুলে নেয়া হবে।

এ উপলক্ষ্যে বর্ণিল সাজে সজ্জিত করা হয় এই কার্যালয়। অনুষ্ঠানটি সেবা প্রার্থীদের অংশগ্রহণে পূর্ণতা পায়।

দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম এবং বিশ্বে ১১৯তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ঢাকার উত্তরা, আগারগাঁও ও যাত্রাবাড়ীতে এ কার্যক্রম চালু রয়েছে।

গত ৩ মার্চ এই অফিসে ই-পাসপোর্টের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি স্থাপনের পর কেন্দ্রীয় সার্ভারের সঙ্গে তা যুক্ত করা হয়।

কর্মকর্তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ই-পাসপোর্ট হলো একটি বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট, যাতে একটি এমবেডেড ইলেকট্রনিক চিপ রয়েছে। এ চিপের মধ্যে রয়েছে বায়োমেট্রিক তথ্য, যা পাসপোর্টধারীর পরিচয় প্রমাণের জন্য ব্যবহার করা হয়। এতে মাইক্রোপ্রসেসর বা চিপ এবং অ্যান্টেনাসহ স্মার্টকার্ড প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়। পাসপোর্টের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চিপে সংরক্ষণ করা হয়। ই-পাসপোর্টে যেসব বায়োমেট্রিক তথ্য নেয়া হয় সেসব হলো- ছবি, আঙ্গুলের ছাপ (ফিঙ্গার প্রিন্ট) ও আইরিশ। ইলেকট্রনিক বর্ডার কন্ট্রোল ব্যবস্থা (ই-বর্ডার) দিয়ে পাসপোর্ট চিপের বাইরের বায়োমেট্রিক বৈশিষ্ট্যগুলোর তুলনামূলক যাচাই করা হয়। পাবলিক কি ইনফ্রাষ্ট্রাকচােরর (পিকেআই) মাধ্যমে পাসপোর্ট চিপে থাকা তথ্য যাচাই করা হয়। তাই জালিয়াতি করা কঠিন।

সাধারণ পাসপোর্ট থেকে ই-পাসপোর্টের পার্থক্য হলো, এতে মোবাইল ফোনের সিমের মতো ছোট ও পাতলা আকারের চিপ থাকে। এতে ৩৮ ধরনের নিরাপত্তাবৈশিষ্ট্য থাকবে, যার অনেক বৈশিষ্ট্য থাকবে লুকানো অবস্থায়। ই-পাসপোর্ট করার সময় মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের (এমআরপি) তথ্যভান্ডারে পাওয়া তথ্যগুলো ই-পাসপোর্টে স্থানান্তর করা হবে।

সাধারণ পাসপোর্টের মতো ই-পাসপোর্টের আবেদনও অনলাইনে পাওয়া যাবে। চাইলে পিডিএফ ফরম নামিয়ে নিয়ে হাতেও পূরণ করা যাবে। ফরম পূরণের সময় ছবি ও সত্যায়ন করা লাগবে না। তবে বয়স্কদের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র ও অপ্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে জন্মনিবন্ধন সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

আবেদনপত্র গ্রহণের সময় আবেদনকারীর ১০ আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের আইরিশের ছবি নেওয়া হবে। সেসব তথ্য চিপে যুক্ত হবে। ইমিগ্রেশন পুলিশ বিশেষ যন্ত্রের সামনে পাসপোর্টের পাতাটি ধরতেই সব তথ্য বেরিয়ে আসবে।

ই-পাসপোর্ট দুই ধরনের। একটি ৪৮ পাতার, অন্যটি ৬৪ পাতার। সাধারণ, জরুরি ও অতি জরুরির জন্য ফি তিন ধরনের। দুই দিনের মধ্যে পাসপোর্ট দেওয়ার নিয়ম চালু হয়েছে। এ জন্য ফিও বেশি গুনতে হবে।

আবেদন করবেন যেভাবে-
ই-পাসপোর্টের জন্য অনলাইনে িি.িফরঢ়.মড়া.নফ ওয়েবসাইটে গিয়ে গিয়ে আবেদন করা যাবে। সাইটে বাংলা বা ইংরেজি ভাষা নির্বাচন করে নেওয়ার সুবিধা আছে। সেখানে শুরুতেই অনলাইনে পাসপোর্ট আবেদন, নতুন/রি-ইস্যু বাটন পাওয়া যাবে। এখানে ক্লিক করে সরাসরি আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে। এর আগে দেখে নিতে পারেন ই-পাসপোর্ট আবেদনের ৫টি (পাঁচ) ধাপ। একটি ধাপ হচ্ছে বর্তমান বসবাসরত জেলাতে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম শুরু হয়েছে কি না, তা দেখা। এর পরের গুলো হচ্ছে অনলাইনে ই-পাসপোর্ট আবেদন ফরম, পাসপোর্ট ফি পরিশোধ, ছবি ও ফিঙ্গার প্রিন্টের জন্য পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ ও পাসপোর্ট অফিস থেকে ই-পাসপোর্ট সংগ্রহ। এর মধ্যে খেয়াল রাখতে হবে, কাগজপত্র ও ব্যক্তিগত তথ্য যাচাই, আবেদনকারীর ছবি তোলা, আঙুলের ছাপ ও আইরিশের ছবি গ্রহণ, যথাযথভাবে পাসপোর্ট ফি পরিশোধ হয়েছে কি না এবং তালিকাভুক্তির পর সরবরাহ করা ডেলিভারি স্লিপ সংরক্ষণ।

পাসপোর্ট গ্রহণের সময় ডেলিভারির রসিদ প্রদর্শন বাধ্যতামূলক। এ ছাড়া সর্বশেষ পুরোনো পাসপোর্ট (যদি থাকে) নিতে হবে। ই-পাসপোর্ট আবেদনের পূর্বে পাসপোর্ট ফি পরিশোধ করতে হবে। ই-পাসপোর্ট আবেদন অনলাইনে দাখিল করার সময়েও পাসপোর্ট ফি পরিশোধ করা যাবে। পাসপোর্ট ফি স্বয়ংক্রিয়ভাবে হিসাব করা হবে। বাংলাদেশের পাসপোর্ট অফিসের আবেদন দাখিলের ক্ষেত্রে অনলাইনে পেমেন্ট করা যাবে। অনলাইন পেমেন্ট ছাড়াও ওয়ান ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া ও ঢাকা ব্যাংকের যে কোন শাখায় এবং সোনালী ব্যাংকের নির্ধারিত শাখায় ই-পাসপোর্ট ফি জমা করা যাবে। সোনালী ব্যাংকের পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে অনলাইন পেমেন্ট দেওয়া হয় এবং এখন পর্যন্ত চালু করা অনলাইন পেমেন্ট পদ্ধতি হলো স্টারকার্ড, ভিসা, কিউ-ক্যাশ, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে বিকাশ ও ডিবিবিএল নেক্সাস। অনলাইনে পেমেন্ট করার জন্য আপনার ব্রাউজারের পপ-আপ ব্লকার অক্ষম করতে হবে।

ফি কত-
৫ বছর মেয়াদী ৪৮ পাতার সাধারণ পাসপোর্ট নিয়মিত সময়ে অর্থাৎ ২১ কর্মদিবসে পেতে হলে ভ্যাটসহ জমা দিতে হবে ৪ হাজার ২৫ টাকা। একই পাসপোর্ট জরুরী অর্থাৎ ১০ কর্মদিবসে পেতে লাগবে ৬ হাজার ৩২৫ টাকা এবং অতিব জরুরী অর্থাৎ ২ কর্মদিবসে পেতে হলে ৮ হাজার ৬২৫ টাকা জমা দিতে হবে।

১০ বছর মেয়াদী ৪৮ পাতার সাধারণ পাসপোর্ট নিয়মিত সময়ে অর্থাৎ ২১ কর্মদিবসে পেতে হলে ৫ হাজার ৭৫০ টাকা, জরুরী অর্থাৎ ১০ কর্মদিবসে পেতে ৮ হাজার ৫০ টাকা এবং অতিব জরুরী অর্থাৎ ২ কর্মদিবসে পেতে ১০ হাজার ৩৫০ টাকা জমা দিতে হবে।

অন্যদিকে ৫ বছর মেয়াদী ৬৪ পাতার সাধারণ পাসপোর্ট নিয়মিত সময়ে অর্থাৎ ২১ দিনে পেতে ৬ হাজার ৩২৫ টাকা, জরুরী অর্থাৎ ১০ কর্মদিবসে পেতে ৮ হাজার ৬২৫ টাকা এবং অতিব জরুরী অর্থাৎ ২ কর্মদিবসে পেতে ১২ হাজার ৭৫ টাকা ফি জমা দিতে হবে।

একই সংখ্যক পাতার ১০ বছর মেয়াদী সাধারণ পাসপোর্ট নিয়মিত সময়ে অর্থাৎ ২১ কর্মদিবসে পেতে ৮ হাজার ৫০ টাকা, জরুরী অর্থাৎ ১০ কর্মদিবসে পেতে ১০ হাজার ৩৫০টাকা এবং অতিব জরুরী অর্থাৎ ২ কর্মদিবসে পেতে হলে ফি দিতে হবে ১৩ হাজার ৮০০ টাকা।

তবে ১৮ বছরের কম ও ৬৫ বছরের বেশি বয়সী নাগরিকরা শুধুমাত্র ৫ বছর মেয়াদী ই-পাসপোর্ট পাবেন।

ই-পাসপোর্ট করতে যা লাগবে-
ই-পাসপোর্টের আবেদনপত্র পূরণ করতে হবে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বা জন্ম নিবন্ধন সনদ (বিআরসি) অনুযায়ী। অপ্রাপ্তবয়স্ক (১৮ বছরের কম) আবেদনকারী, যার জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নেই, তার মা-বাবার জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নম্বর অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে।

ই-পাসপোর্টের সুবিধা-
ই-পাসপোর্টের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এর মাধ্যমে ই-গেট ব্যবহার করে খুব দ্রুত ও সহজে ভ্রমণকারীরা যাতায়াত করতে পারবেন। ফলে বিভিন্ন বিমানবন্দরে ভিসা চেকিংয়ের জন্য লাইনে দাঁড়াতে হবে না। এর মাধ্যমেই ইমিগ্রেশন দ্রুত হয়ে যাবে। ই-গেটের নির্দিষ্ট স্থানে পাসপোর্ট রেখে দাঁড়ালে ক্যামেরা ছবি তুলে নেবে। থাকবে ফিঙ্গার প্রিন্ট যাচাইয়ের ব্যবস্থাও। সব ঠিক থাকলে তিনি ইমিগ্রেশন পেরিয়ে যেতে পারবেন। কোনো গরমিল থাকলে জ্বলে উঠবে লালবাতি। কারও বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা থাকলে, সেটিও জানা যাবে সঙ্গে সঙ্গে।