রবিবার , ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ , ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ , ১৮ই শাওয়াল, ১৪৪৫

হোম > Uncategorized > গাজীপুরে মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগে ভূয়া কাগজপত্র ও জাল জালিয়াতিতে এমপিওভূক্তির অভিযোগ

গাজীপুরে মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগে ভূয়া কাগজপত্র ও জাল জালিয়াতিতে এমপিওভূক্তির অভিযোগ

শেয়ার করুন

মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার
বিশেষ প্রতিবেদক
গাজীপুর সদর উপজেলার চান্দপাড়া দারুত্তালীম জামিরিয়া দাখিল মাদ্রাসায় নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ভূয়া কাগজপত্র ও জাল সনদপত্র তৈরি ও জালিয়াতি করে সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার) পদে নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। ওই শিক্ষকের নাম শিউলী আক্তার, যার ইনডেক্স নং M0000803.

জানা যায়, ওই প্রতিষ্ঠানের সুপারিনটেনডেন্ট মোঃ মোক্তার হোসেন এ অবৈধ নিয়োগ প্রক্রিয়ার মূল কারিগর। অভিযোগ উঠেছে, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের কিছু অসাধু কর্মকর্তা/কর্মচারীর যোগসাজসে ২০২০ সালে সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার) শিউলী আক্তারকে এমপিওভূক্ত করেন। বিধি মোতাবেক ২০১৫ সালের পর থেকে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ প্রশাসনিক ও কর্মচারী পদ ব্যতিত সাধারণ শিক্ষক নিয়োগের এখতিয়ার রাখেন না। নিয়োগের সুপারিশপত্র প্রেরণ করবেন বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। এ নিয়োগে এ বিধির ব্যত্যয় ঘটে। তাছাড়া নীতিমালা অনুযায়ি চাকুরিতে প্রবেশকালীন বয়স ৩৫ বছর হলেও শিউলী আক্তারের এমপিওভূক্ত কালীন বয়স ৪০ ঊর্ধ্ব। তাঁর জাতীয় সনদপত্র অনুযায়ি জন্ম তারিখ ৭ মার্চ, ১৯৮০ খ্রী:। শিউলী আক্তার যে বিষয়ের শিক্ষক বা পাঠ দান করেন, সে বিষয়ে একাডেমিক কোন শিক্ষা বা সনদপত্র তাঁর নেই। এতে করে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা নিত্যদিন প্রতারিত ও তাদের শিক্ষাজীবন বিনষ্ট হচ্ছে। শিউলী আক্তার সুপারিনটেনডেন্ট মোঃ মোক্তার হোসেনের স্ত্রী থাকায় তার বিরুদ্ধে কেউ মূখ খোলার সাহস পায় না। প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত হাজির না হলেও প্রতি মাসে নিয়মিত বেতন-ভাতা উত্তোলন করে আসছেন। এ নিয়ে মাদ্রাসার সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কমিটি ও এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভ ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

এ সব অভিযোগের সূত্র ধরে গত ২৮ মে দুপুর ১২টায় মাদ্রাসায় এ প্রতিবেদক উপস্থিত হন, কথা হয় সুপারিনটেনডেন্ট মোঃ মোক্তার হোসেনের সাথে। তাঁর কাছে চাওয়া হয় স্ত্রী সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার) শিউলি আক্তারের নিয়োগ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের জন্য ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্তের কপি, পত্রিকার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি (স্থানীয় ও জাতীয়), নিয়োগ বোর্ড গঠনের ম্যানেজিং কমিটির রেজুলেশন/ সিদ্ধান্তের কপি, মাউশি/মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্ত থেকে প্রতিনিধি মনোনয়নের চিঠি, নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী চাকুরি প্রার্থীদের উপস্থিতির স্বাক্ষর, নিয়োগ পরীক্ষার নম্বার সিট, নিয়োগ বাছাই কমিটির সুপারিশসহ রেজুলেশন, কমিটি কর্তৃক নিয়োগপত্র অনুমোদনের রেজুলেশন, নিয়োগপত্র, যোগদানপত্র, যোগদানপত্র অনুমোদনের রেজুলেশন, কম্পিউটার শাখা খোলার অনুমতিপত্র (বোর্ড কর্তৃক), কম্পিউটার পদে নিবন্ধন সনদ, কম্পিউটার বিষয়ে একাডেমিক শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র। এসব কাগজপত্র দেখাতে চাইলে সুপারিনটেনডেন্ট অপারগাতা প্রকাশ করেন। ওইদিন মাদ্রাসায় শিক্ষক/কর্মচারীদের হাজিরা খাতায় শিউলী আক্তারের স্বাক্ষর থাকলেও তিনি মাদ্রাসায় ছিলেন না।
এ প্রতিবেদক এ বিষয়ে আজ মঙ্গলবার (৩১ মে) বিকালে গাজীপুর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রেবেকা সুলতানার সাথে তাঁর কার্যালয়ে কথা হয়। তিনি এ বিষয়ে বলেন, সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার) পদে নিয়োগ জালিয়াতির অভিযোগ পেয়েছি, তা তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

২০১৫ সালের ১৫ জুনে তদবিরের মাধ্যমে সুপারিনটেনডেন্ট মোঃ মোক্তার হোসেন চান্দপাড়া দারুত্তালীম জামিরিয়া দাখিল মাদ্রাসায় নিয়োগ পান। এর পূর্বে সে কাপাসিয়া উপজেলার চাপাত আকবরিয়া দাখিল মাদ্রাসার সহকারী সুপার পদে চাকুরী করতেন। তখন তিনি কাপাসিয়া উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের নিজ বাড়িতে সপরিবারে বসবাস করতেন। সে সময় তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রোকন এবং কাপাসিয়া উপজেলার নিজ ইউনিয়ন চাঁদপুরের আমির’র দায়িত্ব পালন করতেন। বর্তমানে জামায়াতের অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন কাপাসিয়া উপজেলা শাখার সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
জামায়াতের একটি সূত্রে জানায়, ২০১৪ সালে কাপাসিয়া উপজেলা ও নিজ ইউনিয়ন চাঁদপুরের অনেক ধনাঢ্য পরিবার ও ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নামে জাকাতের টাকা তুলে সংগঠনের তহবিলে জমা না দিয়ে তিনি আত্মসাৎ করেন।
তাঁর ফেইসবুক পেইজে (লিঙ্ক- www.facebook.com/mokhtar.hossain.332) নিজের শিক্ষায় ডিগ্রী বিএড ও এমএড প্রকাশ করলেও এ ডিগ্রী বৈধ কোন সনদপত্র তাঁর নেই। কোন প্রতিষ্ঠান থেকে এ সব ডিগ্রী অর্জন করেছেন জানতে চাওয়া হলে প্রতিউত্তরে তিনি জানান, আমি মাদ্রাসা অধিদপ্তর থেকে বিএড ও এমএড ডিগ্রী অর্জন করেছি।