সোমবার , ১৩ই মে, ২০২৪ , ৩০শে বৈশাখ, ১৪৩১ , ৪ঠা জিলকদ, ১৪৪৫

হোম > জাতীয় > জঙ্গিবাদ নিয়ে কী রাজনীতি হচ্ছে?

জঙ্গিবাদ নিয়ে কী রাজনীতি হচ্ছে?

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি ডেস্ক ॥
সরকার ও পুলিশের অভিযোগ জঙ্গিবাদ নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে। আর বিরোধি রাজনৈতিক দলগুলো বলছে জঙ্গিবাদ নিয়ে নাটক করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের আগে জঙ্গি আক্রমণের ঘটনা নিয়েও তারা প্রশ্ন তুলেছে। এখন সরকার ও বিরোধি রাজনৈতিক দলগুলো এই ইস্যুতে দ্বিমুখী অবস্থান নিয়েছে। এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে আসলে জঙ্গিবাদ নিয়ে কী হচ্ছে?

এদিকে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি দেশে জঙ্গি আছে। আর অনেকেই মনে করেন দেশে জঙ্গি নেই। যে যাই বলুক না কেন সেটা বড় কথা নয়। কথা হলো জঙ্গিবাদ থাকলে তা নির্মূল করা হবে।

জঙ্গিবাদ বিস্তার রোধ ও নির্মূলের জন্য নতুন কৌশল খোঁজা হচেছ। এখন বিভিন্ন সোর্সে জঙ্গিদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে সর্বস্তরের মানুষেরও সহায়তা চাইছে পুলিশ। তবে মানুষের মধ্যে সচেতনতা এখনও তেমনভাবে আসেনি। এই কারণে জঙ্গিবাদ নির্মূলে মাঝে মাঝে সাফল্য এলেও তা পর্যাপ্ত নয়। যে কারণে শায়খ আব্দুর রহমান ও বাংলা ভাইয়ের বিচার কাজ সম্পন্ন করে ফাঁসি কার্যকর করার পর মনে করা হয়েছিল জঙ্গি নির্মূল হয়ে গেছে। কিন্তু সেটি হয়নি। বরং হলি আর্টিজানের মতো জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছে। সেখানে ২০ জনকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। আগামী দিনে যে হলি আর্টিজানের মতো কোনো ঘটনা ঘটবে না এই ব্যাপারে নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কেউ।

যদিও হলি আর্টিজানের ঘটনার পর পুলিশ, র‌্যাব ও জঙ্গিবাদ নির্মূলের সঙ্গে সম্পৃক্ত সংস্থার দায়িত্বরত সদস্যরা বিভিন্ন কৌশল নিয়েছে। তারা একের পর এক সোর্সের পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জঙ্গিদের আটক করেছে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তথ্য সংগ্রহের পর আরো জঙ্গি আটক হয়েছে। বিভিন্ন স্থানেও অভিযানও পরিচালনা করা হয়েছে। এই অবস্থায় জঙ্গিবাদ এখনও রয়েছে এমন আশঙ্কা থেকে জঙ্গি নির্মূলে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ঠে। চেইন মেইনটেইন করেই তাদেরকে ধরা হ্েচ্ছ। কিন্তু জঙ্গিরা এখন এটা জেনে যাওয়ায় তাদের এক সোর্সের সঙ্গে অন্য সোর্স দূরত্ব বজায় রাখছে। মোবাইল ফোন ব্যবহার প্রায় বন্ধই করে দিয়েছে। সরাসরি যোগাযোগে প্রাধান্য দিচ্ছে।

এই ব্যাপারে সূত্র জানায়, এখন জঙ্গিদের ধরার জন্য সমাজের বিভিন্ন স্তরে সোর্স ব্যবহার আরো বাড়ানো হবে। যাতে মানুষ জঙ্গি সম্পর্কে তথ্য দিয়ে সহায়তা করে।

পুলিশের সদর দফতর থেকে এই ব্যাপারে পুলিশ, র‌্যাব, ডিবি, এসবিসহ বিভিন্ন সংস্থাকেও চিঠি দেওয়া হয়েছে।

এর পাশাপাশি এখন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররা একটানা দশদিনের বেশি অনুপস্থিত থাকলে তাদের তথ্য জানানোর জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি তেমনভাবে কাজে আসছে না। এটাকে বাধ্যতামূলক করা হবে।

মসজিদে আসরের পর থেকে মাগরিবের নামাজের পর পর্যন্ত কেউ টানা বসে থাকে কিনা, বসে থাকলে তারা কি করে, তাদের কারো গতিবিধি সন্দেহজনক কিনা, তারা সেখানে বসে কোনো বৈঠক করে কিনা, বিষয়গুলো মসজিদের ইমাম সাহেবরা লক্ষ্য রাখবেন। সন্দেহজনক কিছু হলে তারা নিকটস্থ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাবেন।

এছাড়াও সন্দেহজনক ফেসবুক আইডিগুলোর দিকেও নজরদারি করা হবে। এখনও অভিযোগের ভিত্তিতে কিছু কিছু করা হচ্ছে। তবে আগামীতে এই নজরদারির পরিমাণ আরও বাড়বে। বিভিন্ন পাড়া মহল্লাতে সোর্স নিয়োগ করা হচ্ছে যাতে করে এলাকায় নতুন কোনো লোক আসলে  তাদের আচার আচরণ সন্দেহজনক হলে তা থানায় জানানার জন্য বলা হবে। এখন এটা বাড়িওয়ালাদের কাছে তথ্য চেয়ে করা হয়েছে। তবে এখন তথ্য সংগ্রহ করা ছাড়াও মহল্লার বিভিন্ন স্তরের মানুষের কাছ থেকে তথ্য নিবে।

এছাড়াও ডিজিটাল সুবিধা ব্যবহার করে জঙ্গিদের আরও কিভাবে নেটওয়ার্কের মধ্যে জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক নজরদারিতে আনা যায় সেটাও চেষ্টা করা হচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ জঙ্গিবাদ নির্মূলে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে সেসব উদ্যোগ গ্রহণ করার বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে। এই জন্য সংশ্লিষ্টরা সেই সব বিষয়েও পর্যালোচনা করছেন।

জঙ্গিবাদ নিয়ে রাজনীতি না করতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পুলিশ প্রধান এ  কে এম শহীদুল হক। বিভিন্ন সন্দেহভাজন জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের অভিযানের পর বিএনপি নেতাদের সমালোচনার মধ্যেই তিনি এই আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, এটা নিয়ে রাজনীতি করা যায় না, এটা দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়।

গত বছর জুলাইয়ে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার পর থেকে পুলিশ রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, টাঙ্গাইলে সন্দেহভাজন বেশ কিছু জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়েছে। প্রায় সব আস্তানাতেই নিহত হয়েছে সন্দেহভাজন বেশ ক’জন জঙ্গি। এদের মধ্যে সাম্প্রতিক জঙ্গি তৎপরতায়  নেতৃত্বদানকারী হিসেবে চিহ্নিতরাও রয়েছে।

বিএনপির তরফ থেকে জঙ্গিবিরোধি অভিযানের ব্যাপারে সমালোচনা করা হয়েছে।  বেগম খালেদা জিয়াসহ দলের শীর্ষ নেতারা এর সমালোচনা করেছেন। বলেছেন, সন্দেহভাজন জঙ্গিদেরকে না ধরে কেন মেরে ফেলা হচ্ছে? খালেদা জিয়া বলেছেন, জঙ্গি নাম দিয়ে তরুণদেরকে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। সীতাকুন্ডের অভিযানের বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের আগে এসব জঙ্গি তৎপরতার বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, জঙ্গিবাদকে হাতিয়ার করেছে আওয়ামী লীগ।

পুলিশের মহাপরিদর্শক বলেছেন, দেশের প্রত্যেকটি খাতে যখন সার্বিক উন্নয়ন হচ্ছে, সেখানে একটি মহল বরাবরের মতো মিথ্যাচার করছে। বিবৃতি দিচ্ছে। তারা বলছেন আমরা নাকি জঙ্গি নিয়ে খেলা করছি। তিনি তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, জঙ্গিবাদ নিয়ে কোনো রাজনীতি করবেন না। পুলিশ জঙ্গিদের হত্যা করতে চায় না। কিন্তু জঙ্গিরা আত্মসমর্পণ না করে উল্টো হামলা করে। এই অবস্থায় গুলি করা ছাড়া উপায় থাকে না। তিনি বলেন, জনগণ ও পুলিশকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। আমাদের সময়.কম