সোমবার , ১৩ই মে, ২০২৪ , ৩০শে বৈশাখ, ১৪৩১ , ৪ঠা জিলকদ, ১৪৪৫

হোম > জাতীয় > জাতীয় নির্বাচন জানুয়ারিতে

জাতীয় নির্বাচন জানুয়ারিতে

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামী বছরের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হতে পারে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বর্তমান সরকারের অধীনে ‘একতরফাভাবে’ এ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কারণ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ছাড়া সংসদ নির্বাচন হলে নির্বাচনের বাইরে থেকে যেতে পারে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। কেননা বিএনপি ঘোষণা দিয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ছাড়া সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে না। কিন্তু নির্বাচন কমিশন দলীয় সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রয়োজনীয় আইনকানুনও সংশোধন করছে।

এমনকি সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনী না রাখারও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ইসি সূত্র জানায়, সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য কমপক্ষে ৪৫ দিন হাতে রেখে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে ইসি। এক্ষেত্রে নভেম্বরের শেষ দিকে বা ডিসেম্বরের শুরুতে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে জানুয়ারিতে ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করার পরিকল্পনা নিয়েছে কমিশন। নির্বাচন বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পাঁচ সিটি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের ভরাডুবির কারণেই সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করছে সরকার ও ইসি। এক্ষেত্রে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ ১৮-দলীয় জোটের অন্য শরিকদের নির্বাচনের বাইরে রাখারও পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা হস্তান্তর ও মেয়াদ নিয়ে সাংবিধানিক জটিলতা রয়েছে বলেও মনে করছেন সংবিধান বিশেষজ্ঞরা। যদিও নির্বাচন কমিশন বলছে, আগামী বছরের ২৪ জানুয়ারির আগেই সংসদ নির্বাচন হবে। তবে সংসদ নির্বাচনের পরে নতুন সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর জটিলতা এড়াতেই সরকারের শেষ সময় তথা জানুয়ারিতে নির্বাচন করতে চায় ইসি।

এদিকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনেই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে। মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন মাধ্যমে জরিপ কাজও চালানো হচ্ছে। প্রশাসনকেও ঢেলে সাজানো হচ্ছে। তবে প্রধান বিরোধী দল সাফ জানিয়ে দিয়েছে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া তারা কোনো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। প্রয়োজনে ওই নির্বাচন বয়কট করে জনগণকে নিয়ে রুখে দাঁড়াবে। অন্যদিকে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে মহাজোটের অন্যতম শরিক দল জাতীয় পার্টি। এককভাবে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিলেও সূত্র জানায়, একক না জোটগতভাবে- নির্বাচনে যাওয়া নিয়ে ভেতরে ভেতরে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছে এ দল।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবু হাফিজ বলেন, ২৬ অক্টোবর থেকে আগামী বছরের ২৪ জানুয়ারির মধ্যে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সংবিধানের কাঠামো অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি চলছে। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে ইসি বদ্ধপরিকর। সরকার বা বিরোধী দল কেউ ইসিকে প্রভাবিত করতে পারবে না। এর মধ্যেই নির্বাচন হবে। এক্ষেত্রে মেয়াদ শেষে বর্তমান সরকারের ক্ষমতায় থাকার সুযোগ নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি। অপর এক নির্বাচন কমিশনার বলেন, নির্বাচন কমিশন সংসদ নির্বাচন আর আগেভাগে করতে চায় না। সরকারের মেয়াদের শেষ পর্যায়েই নির্বাচন করার পরিকল্পনা রয়েছে। এক্ষেত্রে জানুয়ারিতে নির্বাচন করা হতে পারে।

সংবিধানের ১২৩ (৩) অনুচ্ছেদ অনুসারে মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান রয়েছে। নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর। ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি সংসদ অধিবেশন শুরু হয়েছিল। সে অনুযায়ী ২০১৩ সালের ২৬ অক্টোবর থেকে ২০১৪ সালের ২৪ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে কমিশনকে।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয় মাথায় রেখে নির্বাচনী আচরণবিধিতে আমূল পরিবর্তন করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে দলীয় প্রধান তথা প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও ২০ মন্ত্রী বা মনোনীত ব্যক্তিকে বিশেষভাবে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এমনকি ক্ষমতাসীন দলের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ৫৩ সংসদীয় আসনের সীমানা পরিবর্তন করা হয়েছে। বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) সংশোধনী আনা হয়েছে। এক্ষেত্রে সরকারকে সুবিধা দিতেই সংশোধন করা হচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকেই। ইতোমধ্যে বিএনপি আরপিও সংশোধনী প্রত্যাখ্যান করেছে। এ ছাড়া আসন অনুযায়ী ভোটার তালিকাও করা হচ্ছে। নির্বাচনের প্রয়োজনীয় মালামাল ক্রয়ে ইউএনডিপির সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকও করেছে ইসি।

আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে অনেক মালামাল চলে আসবে ইসির কাছে।

ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ইসির সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ দিকে। আগামী বছরের ২৫ অক্টোবর নির্বাচন কমিশনাররা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এর পর জাতীয় নির্বাচনের চূড়ান্ত তারিখ ঘোষণা করবেন। যদিও প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলছেন, সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রস্তুত নির্বাচন কমিশন। এক্ষেত্রে দুই ধরনের সরকারের অধীনেই এ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। তবে নির্বাচন কমিশন অনেকটাই নিশ্চিত হয়েছে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী অনুযায়ী বর্তমান সংসদ বহাল রেখেই দশম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ফলে সংসদ নেতা থেকে সংসদ সদস্য, স্পিকার থেকে হুইপ, প্রত্যেকেই নিজ নিজ পদে বহাল থাকছেন। আর পদে থেকে নির্বাচন করলে নির্বাচনে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নষ্ট হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধানের মনোনীতদের (মন্ত্রী) নির্বাচনী প্রচারণা করার সুযোগ দিয়ে কমিশন আচরণবিধি করলে নির্বাচনে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নষ্ট হবে। আর নির্বাচন হবে বৈষম্যমূলক। তিনি বলেন, সংসদ নির্বাচনের আচরণবিধিমালা সংশোধন করার আগে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ইসির সংলাপ করা উচিত। এ ছাড়া এ ধরনের আচরণবিধি দিয়ে নির্বাচন করলে দেশে সংকট সৃষ্টিও হতে পারে বলে মনে করেন তিনি। সাবেক এই কমিশনার বলেন, বিএনপি আরপিও প্রত্যাখ্যান করেছে।

কিন্তু দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে আরপিও সংশোধন করলে তবে সমালোচনা হতো না। অন্যদিকে দশম সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনী আচরণবিধি ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন নিয়ে বিতর্কের মুখে পড়েছে কমিশন। আরপিও’তে সংশোধনী এনে সংসদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার পথ বন্ধ করা হয়েছে। এমনকি ইসির প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতাও (৯১(ই) ধারা) বাদ হয়েছে আরপিও থেকে। একই সঙ্গে সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিল ও প্রার্থীর (দলীয়) প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে দলের হাতে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় রাখা হয়নি সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিধান। তবে সংসদ নির্বাচন চলাকালীন সময়ে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা চেয়ে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) সংশোধনী আনা হয়েছে।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, সংবিধান অনুযায়ী সংসদ নির্বাচনের সময় সংসদ বহাল থাকবে। এ সময় সংসদ সদস্যরা স্বপদে থেকে নির্বাচনে অংশ নেবেন। এ ছাড়া বিলবোর্ড ব্যবহারে স্থানীয় নির্বাচনে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও জাতীয় নির্বাচনে তা শিথিল করা হতে পারে। উন্নয়নমূলক প্রকল্প অনুমোদন ও অর্থ ছাড় বিষয়েও নিষেধাজ্ঞা থাকবে। একজন নির্বাচন কমিশনার বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনের সময় সংসদ বহাল থাকায় স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা স্বপদে থেকে নির্বাচন করার সুযোগ থাকায় নির্বাচনী প্রচারণার আচরণবিধিমালায় এ সংশোধনী আনতে হচ্ছে।