রবিবার , ১৯শে মে, ২০২৪ , ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ , ১০ই জিলকদ, ১৪৪৫

হোম > শীর্ষ খবর > ডিসি ইব্রাহিমের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

ডিসি ইব্রাহিমের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি ডেস্ক ॥
জমি দখলসংক্রান্ত অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত পুলিশের ওয়ারী বিভাগের ডিসি ইব্রাহিম খানের সঙ্গে আর কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

বুধবার রাজধানীর কারওয়ানবাজার ওয়াসা কর্তৃক আয়োজিত ১৫ আগস্ট শোক দিবসের আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে প্রাথমিকভাবে তাকে (ডিসি ইব্রাহিম) সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ওই বিষয়ে অধিকতর তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ওয়ারী জোনের উপকমিশনারের সঙ্গে আর কেউ জড়িত থাকলে তাকেও আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। তদন্ত শেষে এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানানো যাবে।

এর আগে রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে ডিসি ইব্রাহিমকে অব্যাহতির প্রজ্ঞাপন জারি হয়।

বিসিএস ২৪তম ব্যাচের এ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্তের পর পুলিশ সদর দফতরে সংযুক্ত করা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, সাময়িক বরখাস্ত থাকাকালীন তিনি পুলিশ অধিদফতরে সংযুক্ত থাকবেন এবং প্রচলিত বিধি মোতাবেক খোরপোষ ভাতা পাবেন।

জানা যায়, গত দুই মাস আগে তিনি পুলিশের লালবাগ বিভাগ থেকে বদলি হয়ে ওয়ারী বিভাগে যোগদান করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শহীদ বুদ্ধিজীবী একেএম শামসুল হক খানের পরিবারকে নবাবপুরের ২২১ নম্বরে ৪ কাঠার বাড়িটি দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ওই বাড়িতে থাকতেন শহীদ বুদ্ধিজীবী একেএম শামসুল হক খানের ভাই কেএম শহীদুল্লাহ ও তার পরিবারের সদস্যরা।

ডিসি মোহাম্মদ ইব্রাহিম খান লালবাগ জোনে থাকাবস্থায় ২০১৮ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর তার অফিসের ১০০ গজের মধ্যে শহীদ বুদ্ধিজীবীর পরিবারের ওই বাড়িতে স্থানীয় প্রভাবশালী জাবেদ ও আবেদ গংরা ২৫-৩০ জন লোক নিয়ে লুটপাট ও তাদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন চালায়।

বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যদের বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে রাতারাতি আগের ভবন ভেঙে সেখানে দেয়াল নির্মাণ করে নতুন করে ভবন গড়ে তোলার কাজ শুরু করে। অভিযোগ ওঠে, পুরো ঘটনায় পুলিশ নীরব ছিল। আতঙ্কিত পরিবারটি পরে থানায় মামলা করতে গেলে বংশাল থানা পুলিশ চুরির মামলার বাইরে অন্য মামলা রেকর্ড করতে রাজি হয়নি।

ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের অভিযোগ, মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে পুলিশকে ‘ম্যানেজ’ করে এ কাজ করা হয়েছে। পরে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারটি নিরুপায় হয়ে প্রথমে সংবাদ সম্মেলন ও পরে পুলিশের মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীর সঙ্গে দেখা করে সব খুলে বললে পুরো ঘটনায় নতুন মোড় নেয়।

আইজিপি বিষয়টি তদন্তের জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশনা দেন। পরে ডিএমপির পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি তদন্ত করে ডিসি ইব্রাহিম খানের সংশ্লিষ্টতা আছে বলে প্রতিবেদন দেয়।

তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ডিসি ইব্রাহিম খানের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার, তদন্তে অসহযোগিতা ও দায়িত্ব অবহেলার তথ্য উঠে আসে। তার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় চলতি বছরের ২৩ মে পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত ডিআইজি (পার্সোনাল ম্যানেজমেন্ট-১) আমিনুল ইসলাম তাকে একটি চিঠি দিয়ে এসব অপরাধের বিষয়ে ব্যাখ্যা জানতে চান।

চিঠিতে বলা হয়, ভুক্তভোগীর এসব অভিযোগ শুনেও ডিসি ইব্রাহিম বংশাল থানার ওসি ব্যবস্থা নিতে কোনো নির্দেশনা দেননি বা নির্দেশনা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। পুলিশ সদর দফতরের ডিসি যে তদারকি প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন, সেটি তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন না করে জমা দিয়ে অসত্য তথ্য উপস্থাপন করেছেন। এ ছাড়া তিনি দায়িত্বে অবহেলা করেছেন। ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য ডিসি ইব্রাহিমকে ১০ কার্যদিবস সময় দেয়া হয়। তার ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হওয়ায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তাকে বরখাস্ত করার সুপারিশ করে সদর দফতর।

এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই ইব্রাহিম খানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এসব বিষয়ে বক্তব্য নিতে সোমবার বিকালে ওয়ারী জোনের ডিসি ইব্রাহিম খানের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এদিকে মুক্তিযোদ্ধার জমি দখলে ভূমিদস্যুদের সহযোগিতার অভিযোগে পুলিশের ওয়ারী বিভাগের ডিসি ইব্রাহিম খান বরখাস্তের পর বংশাল থানার তৎকালীন ওসি শাহিদুর রহমানও বরখাস্ত হতে পারেন। শাহিদুর রহমান বর্তমানে কোতোয়ালি থানার ওসির দায়িত্বে রয়েছেন।

পুলিশের কয়েকটি সূত্র জানায়, ওসি শাহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। দোষী প্রমাণিত হলে তিনিও বরখাস্ত হতে পারেন। সূত্র: যুগান্তর