বাংলাভূমি ডেস্ক ॥
একটি দেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে পর্যন্ত ধর্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যে লড়তে হচ্ছে। স্বয়ং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আশ্বাস দিচ্ছেন, খুব শীঘ্রই বনানীতে দুই তরুণীকে ধর্ষণকারীদের গ্রেফতার করা হবে। তাদেরকে গ্রেফতারে পুলিশের ব্যর্থতা নিয়ে তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনে ওয়াদাবদ্ধ পুলিশ এ ধর্ষণ মামলার পর সাতদিনের মাথায় ধর্ষকদের টিকিটি স্পর্শ করতে পারেনি। তাদের পাসপোর্টও খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ। মিডিয়া বলছে, সিলেটে ধর্ষকদের একজন শাফাতকে দেখা গেছে। ধর্ষকরা নির্যাতিত ওই দুটি মেয়েকেও বলেছে, পুলিশ তাদের কিছুই করতে পারবে না। তাহলে ধর্ষকরাই সবচেয়ে শক্তিশালী!
সম্পদে শক্তিশালী হলে আইনকে থোড়াই কেয়ার করা যায়। তাই দেখাচ্ছে ধর্ষক ও তাদের অভিভাবকরা। তাদের অভিভাবকদের কি দোষ? দোষ এটুকু যে তারা জানেন না তাদের সন্তানরা কোথায়? যেমন জানতেন না তারা কখন কোথায় কি করছে? এবং এ গ্রাউন্ডেই এইসব অভিভাবকের বিচার হওয়া জরুরি। তাতে অনেকে ধর্ষকে পরিণত হওয়ার সুযোগ পাবে না।
পুলিশ এক সপ্তাহ হতে চলল তাও কেন ধর্ষকদের খুঁজে পাচ্ছে না? মিডিয়ায় লেখালেখি হচ্ছে কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। তা যদি সত্যি হয় তাহলে এই টাকা কার কার হাতে গিয়েছে তা হয়ত জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তদন্তে বেরিয়ে আসতে পারে। ততদিনে ধর্ষকরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে যাওয়ার সুযোগ পাবে কি? জাতীয় দৈনিকগুলোর সম্পাদকীয়তে পর্যন্ত ধর্ষকদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসার বয়ান দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সে বয়ান পুলিশ কি থোড়াই কেয়ার করছে? পুলিশ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কয়েকজন ধর্ষককে দিনের পর দিন অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করতে না পারলে আমাদের গোয়েন্দা সামর্থ্য নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
আসলে সামর্থ্য ঠিকই আছে। কিন্তু কোটি টাকার লেনদেনের বিষয়টি যদি সত্যি হয়ে থাকে তাহলে সেটাই সব ওলটপালট করে দিচ্ছে। এই ধর্ষক যদি গরিব হত তাহলে আইনের শাসন কড়া হত কি? পুলিশ কি তাহলে আরো অধিক তৎপর হয়ে উঠত? ধর্ষকের বাড়ির মালামাল ক্রোক করত? মানুষ গরিব বা ধনী এ বিবেচনায় যে রাষ্ট্রের আইন সক্রিয় বা নিষ্ক্রীয় হয় সেখানে সামাজিক নিরাপত্তার অবশিষ্ট কিছু থাকে কি?
রাজনৈতিক প্রভাব কাজ করছে কি বনানীর ধর্ষকদের আড়াল করে রাখার ব্যাপারে? ইত্যাকার প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে নাগরিক জীবনে। আড়ালে ধর্ষিতাদের আতঙ্ক আরো বাড়ছে? সব কিছু ছাপিয়ে তাহলে কি এই সত্যই প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাচ্ছে ধর্ষকদের কথাই ঠিক। ‘পুলিশকে টাকা দিলে তারা আমাদের কিছুই করতে পারবে না’। টাকার জোরে আসামী ধরার যে প্রযুক্তিগত সামর্থ আছে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের তাও কি কাজ করছে না? দুষ্ট লোকেরা বলে একটি মদের দোকান চালু হলে, কোনো খুন বা অপরাধ ঘটলে পুলিশের আয় বাড়ে? মন্দ লোকদেরও আয় বাড়ে। আয় বাড়ে আইনজীবীদের। সাংবাদিকদেরও লেখার সুযোগ সৃষ্টি হয়। রাজনৈতিক প্রভাবও কাজ করে। এসব কিছু ছাপিয়ে তাহলে বড় সত্য হচ্ছে ধর্ষকরাই সবচেয়ে শক্তিশালী। আমাদের সময়.কম