রবিবার , ১৯শে মে, ২০২৪ , ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ , ১০ই জিলকদ, ১৪৪৫

হোম > রাজনীতি > দেশে সব আছে রাজনীতি নেই

দেশে সব আছে রাজনীতি নেই

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি ডেস্ক ॥
বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মুকসুদ একটি দৈনিক পত্রিকায় তার কলামে লিখেছেন, দেশে প্রশাসন আছে, আইন আদালত আছে, ব্যবসা-বাণিজ্য আছে, উন্নয়ন কর্মকান্ড আছে, ঘুষ দুর্নীতি আছে যা নেই সেটি হচ্ছে রাজনীতি। তিনি বলেছেন, অনেক রাজনৈতিক দল আছে কিন্তু রাজনীতি নেই। রাজনীতিতে রাজনীতি না থাকার দায় কার, শুধু কি সরকারের? কি কৌশল নিচ্ছে বড় রাজনৈতিক দলগুলোৃ

ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, এ প্রসঙ্গে চ্যানেল টুয়েন্টি ফোর’এর টকশোতে বলেন, রাজনৈতিক দল তখনি গঠিত হয় যখন তাদের একটা মতাদর্শ থাকে। জনগনকে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য তারা একটি বক্তব্য হাজির করেন। একেক সময় একেক বক্তব্য থাকে আমাদের এখানে রাজনীতি ঘোরপ্যাচটা হচ্ছে এই । ব্রিটিশ আমলে আমরা স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন করেছিলাম দলের গঠন ছিল ১৮৮৫ সালে কংগ্রেস গঠন, ১৯০৬ সালের মুসলিমলীগ গঠন, ১৯২১ সালের পরে কংগ্রেস পার্টি এবং তারপরে অন্যান্য দল গেছে। আমরা দলের ইতিহাস এভাবে জানতাম। স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় ১৯৪৭ সালের কথা বলছি স্বাধীন হওয়ার পর ভারতের কংগ্রেস তখন পর্যন্ত তারা বলতো কংগ্রেস একটা রাজনৈতিক দল নয়, এটা একটি প্লাটফর্ম তবে এখানে নানা রাজনৈতিক দল থাকতে পারে একই সাথে কমিউনিস্ট পার্টি নাম বের করতে পারেন বা কংগ্রেসের সদস্য হতে পারেন । স্বরাজ্য পার্টির নাম বের করতে পারে।

সলিমুল্লাহ খান বলেন, কিন্তু স্বাধীন হওয়ার পর মহাত্মা গান্ধী প্রস্তাব তুললেন আমাদের আর কংগ্রেসের দরকার নাই এখন দেশ স্বাধীন হয়েছে নতুন রাজনৈতিক দল হতে পারবে। কিন্তু সেই কথা রক্ষা না করে কংগ্রেসের তৎকালীন নেতা তারা ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামের ঐতিহ্যকে ভারত গড়ার জন্য এবং তা ব্যবহার করে থাকার জন্য ক্ষমতায় চিরকাল থাকার জন্য নেহেরু কংগ্রেসকে একটা রাজনৈতিক দলে রুপান্তরিত করলেন। এবং সে দলের পক্ষ থেকে তিনি প্রথমে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হলেন । ১৯৬৪ সন পর্যন্ত আমরা ভারতে দেখলাম যে নেহেরুর যুগ ছিল। ৬২ সনে যুদ্ধে ভারত চীনের সাথে মার খাবার পর অনেকে বলে সেই শোকে মারা যান।

তিনি বলেন, তারপরে ভারতে ১৯৬৭ সনে তার কন্যা ইন্দিরা গান্ধী মন্ত্রী ছিলেন। তিনি আস্তে আস্তে ক্ষমতার দিকে যেতে থাকেন। তখন কংগ্রেসের প্রথম সংকট দেখা যায় ও কংগ্রেস বিভক্তি হয় ১৯৬৯ সনের দিকে। কংগ্রেসেটা ইন্দিরা হয় আর কংগ্রেস ওনাদের হয় । এই কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে যাওয়ার লোকেরা পরে বিজেপি গঠন করে। তখন ভারতে জরুরি অবস্থা দিতে হয়।

সলিমুল্লাহ বলেন, এখন ভারতে কংগ্রেস পার্টি প্রায় দুর্বল হয়েছে। অনেকেই বলছেন, গান্ধী পরিবারের নেতৃত্বে কংগ্রেস আর ক্ষমতায় আসতে পারবে না। তাদের অন্য নেতৃত্ব দরকার তারা রসিকতা করে বলছে নিতিশ কুমারকে নিয়ে আসলে ভালো হয়। নিতিশ কুমার এমন একজন রাজনীতিবিদ যার কোনো রাজনৈতিক দল নেই। আর কংগ্রেস এমন একটা রাজনৈতিক দল যার কোনো নেতা নেই। নিতিশ কুমার কিন্তু ইতিমধ্যে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন।

সলিমুল্লাহ মুসলিমলীগের কাহিনী প্রসঙ্গে বলেন, পাকিস্তানে এখনো মুসলিমলীগের অংশ হিসেবে নাওয়াজ শরিফ ক্ষমতায় ছিলেন। সেই মুসলিমলীগ আর আগের মুসলিমলীগ এক নেই। সেই মুসলিমলীগের নেতৃত্বেই স্বাধীন হয়েছে পাকিস্তান। আমাদের বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিবর রহমান, মুসলিমলীগে ছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন হবার আগেই আওয়ামীলীগ গঠিত হয়েছে মুসলিমলীগ থেকে বেরিয়েই। এটা মনে রাখতে হবে এটা প্রথমে মুসলিমলীগ ছিল ১৯৫৫ সন থেকে এটা শুধু আওয়ামীলীগ হয়েছে । আবার দু বছর পরে মাওলানা ভাসানী নেতৃত্বে ন্যাপ গঠিত হয়েছে। সেই ন্যাপ আবার ভাগ হয়েছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর নতুন রাজনৈতিক দলের উদ্ভব হয়েছে যেমন বিএনপি। এটা সামরিক বাহিনীর উদ্যোগে হয়েছে, একজন সামরিক নেতার উদ্যোগে। এখন দেশে ৩টা প্রধান রাজনৈতিক দলের মধ্যে শুধু আওয়ামীলীগ স্বাধীনতার আগের দল। আর বাকি দুটো স্বাধীনতার পরের। স্বাধীনতার আগের কমিউনিস্ট পার্টি, জামায়াতে ইসলাম এগুলোই আছে। আমার মনে হচ্ছে সংবিধানে এই যে রাজনৈতিক দলের স্বীকৃতি দেয় আমরা যদি গণতন্ত্র বলি রাজনৈতিক দল ছাড়া এই গণতন্ত্র চর্চা করা যাবে না। কারণ ১৬ কোটি মানুষ ১৬ কোটি ভোট দিয়ে দেশটা চালাতে পারবে না। তাই কোনো না কোনো ভাবে জোট বাধতে হবে।

সলিমুল্লাহ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে গ্রান্ড ওল্ড রিপাবলিকান পার্টি। পরে সেখান থেকে বেরিয়ে ডেমোক্রেটিক পার্টি হয়েছে। আমরা এখন স্বীকার করি যে পার্টি প্রথা থাকবে। আগে এই জিনিসকে আমরা খারাপ বলতাম, দল বাজি বলতাম। কিন্তু বাস্তবিক পক্ষে দলে একাধিক উপদল আছে।

সলিমুল্লাহ ফের বাংলাদেশের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ১৯৭৫ সনে যে ঘটনা ঘটেছে সেটাতো উপদলের কারণেই ঘটেছে। আওয়ামীলীগের ভিতরের লোকেরা এই বিরোধীতা করেছে। তার সাথে বাইরের লোক স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি ও সামরিক বাহিনী যুক্ত ছিল। মূলে তৎকালীন প্রেসিডেন্টকে হত্যা করার পর আবার যিনি প্রেসিডেন্ট হলেন সেদিনের পত্র পত্রিকা খুললে কি দেখা যায় খন্দকার মোস্তাক প্রেসিডেন্ট হয়েছে। তিনিতো আওয়ামী লীগেরই লোক ছিলেন, তিনিতো মন্ত্রিসভারই সদস্য ছিলেন। যারা নিহত হয়েছেন তারা ছাড়া যে ৪ জন আসতে অস্বীকার করেন তারা ছাড়া সবাইতো যোগ দিয়েছেন। এই বেদনাদায়ক ইতিহাস গুলো যদি মনে রাখি তাহলে বুঝবো তাহলে আওয়ামীলীগ গঠন করে যখন বাকশাল গঠন করা হয়েছিল সেটা কি রাজনৈতিক দল ছিল । বলা হয়েছিল বাকশাল জাতীয় দল একটাই দল থাকবে। মাত্র চারটি পত্রিকা ছিল দুটো ইংরেজি বাংলাদেশ টাইমস ও বাংলাদেশ অবজারবার এবং ইত্তেফাকের সাথে আরেকটা পত্রিকা ছিল। এই পত্রিকা গুলো পড়লে ঐদিন অবাক হতে দেখা যায়। সবাই তখন পিলপিল করে শপথ গ্রহণ করতে গেল । রাজনৈতিক দল সেই অর্থে গঠিত হয়নি কি গঠিত হয়েছিল একজন নেতার নেতৃত্বে তার অনুসারীরা একত্রিত হয়, এটাকে রাজনৈতিক দল বলে না। রাজনৈতিক দলের একটা আদর্শ থাকে। এটি গণতান্ত্রিক অথবা সমাজতান্ত্রিক একটা আদর্শ থাকে। সেই আদর্শ যখন থাকে না তখন সেটাকে রাজনৈতিক দল বলা যায় না।

বাংলাদেশে রাজনীতির সংকটকে উল্লেখ করে সলিমুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশ এখন সংকটে আছে সেই রাজনীতিতে আর নেই যেটাকে আদর্শ রাজনীতি বলে কারণ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার সময় একটা আদর্শ ছিল যেখানে শাসন ছিল এবং শোষণও হয়েছে বর্তমানে আমরা বলছি যেন কেউ আমাদের শোষণ করছে না আমরা সবাই বাঙ্গালী। এই কথাটা একটা মিথ্যা কথা। সবাই বাঙ্গালী হলেও আমরা সবাই পুরুষ নই কেউ নারী আছেন সে কথা কি বলা যাবে না। আমরা সবাই পুঁজিপতি নই কেউ শ্রমিক আছেন সে কথা কি বলা যাবে না। এটা বললে কি আপনি বিভেদ সৃষ্টি করছেন। সত্য কথাটাতো বলতে হবে। বর্তমানে মজা হয়েছে কি আমাদের দেশে ধর্ম আছে। আমাদের দেশে রাজনীতি আছে সবই আছে। কিন্তু ধর্ম এবং রাজনীতিতে না মিশানোর একটা শপথ আমরা করে নিয়েছিলাম কিন্তু আমাদের ধর্ম জিনিসটা প্রবেশ করেছে। ধর্মটা প্রবেশ করলে হয়কি, আর রাজনীতি থাকে না।

তিনি বলেন, ধর্মের জায়গায় ধর্ম থাকবে রাজনীতির জায়গায় রাজনীতি থাকবে। তুমি ধর্মেও আছো জিরাফেও আছো বঙ্কিম চট্টোপাধ্যায়ের একটা কবিতায় ছিলো। এখন কিভাবে রাজনীতির জায়গাটা ধর্ম দখল করছে। আর তা জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য আমরা একদিকে টেলিভিশন খুললেতো দেখায় যায় না এখন দেখলাম সানি লিয়নের নাচ দেখাচ্ছে। অর্থাৎ এই যে অশ্রীল অঙ্গভঙ্গী প্রদর্শনী সেটা আপনিও দেখাচেছন আমিও দেখাচ্ছি এবং দেখছিও বটে। এতে বুঝা যায়কি অশ্রীল প্রদর্শনী দিয়ে আমি জনগণের মন জয় করতে চাচ্ছি। ধর্ম প্রতীক সেভাবে ব্যবহার করছে মানুষ। যার কারণে দেশে সন্ত্রাসবাদ বেড়ে যাচ্ছে। দেশে যে রাজনীতি নেই তার প্রমাণ হচ্ছে দেশে ব্যাপক হারে সন্ত্রাসবাদ বেড়ে যাচ্ছে। শুধু এখানে নয় আমি জিনিসটাকে এখন বাইরে নিয়ে যাব। আমরাতো মনে করছি বিশ্বায়নের যুগ বিশ্বায়ন মানে আমরা মনে করি অত্যন্ত ভালো জিনিস। একটু পূর্বাপর দেখতে হবে আমাদেও, আজকে দেখেন স্পেনে আক্রমন হচ্ছে গতকাল ফ্রান্সে হয়েছে এর আগে নেদারল্যান্ডে হয়েছে এটা কেন হচ্ছে এভাবে। এটা হওয়ার পেছনে কারণ আছে যে রাজনীতির আর তরুণ সমাজকে আকর্ষণ করতে পারছে না। স্বাধীনতার সময় আমরা কি দেখেছিলাম ভিয়েতনামে যুদ্ধ চলছে সারা পৃথিবীতে প্রতিবাদ চলছে। আজকে সেই প্রতিবাদ কোথায় । প্রতিবাদ জায়গায় ট্রাক নিয়ে জনযাত্রার উপর গাড়ি চালিয়ে দিচ্ছে। আমাদের এখানে বোমা নিয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করছে। এগুলো হলো লক্ষণ এই লক্ষণের কারণ হচ্ছে সৈয়দ আবুল মুকসেদ যেটা বলেছেন। সত্যিকার অর্থে রাজনীতি নেই। এখানে রাজনীতি শব্দের অর্থ নীতির রাজ। অর্থাৎ সবচেয়ে ভালো নীতি বা সবচেয়ে বড় নীতি। যেটা দেশকে সমাজকে জাতিকে পুনর্গঠন করবে। কারণ হচ্ছে, যেটা বলা উচিত সেই বিষয়টাকে আমরা নিষিদ্ধ করছি। মার্কিন দেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছে কি কমিউনিস্টদের কথা বলা যাবে না। মার্কিন দেশে যখন ভিসা করা হত তখন বলা হতো তুমি কি কখনো কোনো কমিনিস্ট পার্টি অথবা শাখার সদস্য ছিলা । কমিনিস্ট নেতাদের মিথ্যা কথা বলতে হয়েছে তা না হলে সে তো ভিসা পাবে না। বর্তমানে অলিখিত কথা আছে সেভাবে তুমি কি জিহাদী বা জঙ্গী ছিলা । এই যে রাজনীতির ক্ষেত্রে পদ পরিবর্তনটা হলো যেভাবে আমরা ১৯৮০ সাল থেকে লক্ষ করলাম ইরানের বিপ্লব, আফগানিস্তানের বিপ্লব তারপর আমেরিকানদের সেখানে আগমন সেইটার প্রভাব আমাদের দেশেও আসছে। তার জন্য আমি বলব যে যেখানে রাজনীতি থাকে সেখানে মানুষ সংঘবদ্ধ ভাবে প্রতিবাদ করে দাঁড়াতে পারে। কিন্তু আমি আপনিতো সংঘবদ্ধভাবে প্রতিবাদ করতে পারছি না দাঁড়াতে পারছি না। এদিকে বলছে আপনি অবমাননা করছেন কোন ব্যক্তি এই জন্য আপনা ৫৭ ধারার মামলা হয়েছে। কিছু বললে বলেকি আপনি আদালত অবমাননা করছেন এটা অদ্ভুত একটা পরিস্থিতি সব জায়গাতে, জনগণের যে মৌলিক অধিকার নিয়ে কথা বলছিলাম সেটার বাস্তবে তার চিহ্ন মাত্র নেই। তখন কি থাকে শুধু পয়সা কামানো। পয়সা কামানো কি ছলে বলে কৌশলে যেখানে পুঁজির আদিম সঞ্চয় বলে সেটা থেকে কেউ মুক্ত নয় । না হলে রাষ্ট্রের অনেক কর্মচারীকে কাজে লাগাতে হতো দুর্নীতি দমন কমিশনে। তার মানে কি দুর্নীতি যে আছে তাকে আমরা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিচ্ছি। সে দিন দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান ইকবাল মাহমুদ বললেন, যে সচিবেরা যদি দুর্নীতি না করে তাহলে কোন দুর্নীতি হবে না। তার মানে প্রকাশ্যে ভাবে সচিবদের দুর্নীতিবাজ বললেন। কোন ব্যক্তিকে ধরে বলেনি, সবাইকে বলেছেন। দেশের সরকার চালাবার যারা প্রধান কর্মকর্তা তারা হলো সচিব, তারা যদি প্রকাশ্যে দুর্নীতি করেন এ কথা আরেক জন সচিব পর্যায়ের মানুষ বলে থাকেন, তাহলে বুঝেন সেখানে রাজনীতি হবে কি করে। আমরাতো এখন সচিব হতে চাইব,আমরা রাজনৈতিক দল করতে চাইব না।

সলিমুল্লাহ বলেন, ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের পরে থেকে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির মধ্যে বেশ একটা উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপি যদিও এই রায়ে উচ্ছসিত তবু আমার কাছে পরিষ্কার নয় কেন তারা উচ্ছসিত। দুই দলের মধ্যে উত্তেজনাকে কিভাবে দেখছেন এ প্রশ্নেবর জবাবে সলিমুল্লাহ বলেন, দুই দলের মধ্যে যে উত্তেজনা রয়েছে এটা একেবারেই রাজনীতিক নয়। গতবার আধা সামরিক যে সরকার গঠিত হয়েছিল সেটারই একটি ফলিত প্রকাশ এটা দেখতে পাচ্ছি। দুই বিষয় নিয়ে যে তর্ক হচ্ছে সেটা হলো রায়ের মূল বিষয় নিয়ে কেউ তর্ক করছে না। সরকারের দলেরও বিষয়েও সাহস নাই তারা তর্ক করছে যে সমস্ত পর্যবেক্ষণ বলা হয় আমরা আইনি ভাষায় পরীক্ষা নিরিক্ষা বলি সেগুলো নিয়ে তর্ক করছে না। এটা খুবই দুঃখ জনক এগুলোর কোন আইনগত মূল্য নাই, এগুলো উচ্চ আদালত ভূষিত হয়েছি বলেই তার এক ধরনের শক্তি আছে। কিন্তু মামলার মূল বিষয় ছিল ষোড়শ সংশোধনী নামিয়ে যে আইনটা করেছিলেন সংসদ সেটা তারা বাতিল করেছে এটাই বিষয় এবং এটা বাতিল করার পর কিছু যুক্তি দেখিয়েছে সেটা লক্ষ করেছি । লক্ষ করার বিষয় আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম কে ধন্যবাদ জানিয়েছেন একটা বিষয়ে চুপ থাকার জন্য । এ ধরণের চুপ থাকা মানে এটা মেনে নেয়াকে বুঝায়। জিয়াউর রহমান সম্পর্কে যেু অবজারভেশন আছে এ রায়ে প্রধানবিচারপতি রায়ে সেগুলোকে বিএনপি মেনে নিয়েছে ধরে নেয়া যায়। যেহেতু তারা এই রায়কে সাধারণ ভাবে স্বাগত জানিয়েছে। এই যে বিশ্লেষণ না করে সমগ্র রায়কে স্বাগত জানাব এবং রায়কে প্রত্যাখ্যান করব এটা অরাজনৈতিক প্রক্রিয়া বলে আমি মনে করি। আমি বলছিলাম প্রকৃতি শূন্যতা সহ্য করে না বলে একটা কথা আছে এমনকি সংস্কৃতিও এই নিয়ম অনুসরণ করে।

তিনি বলেন, একটা উদাহরণ দিলে খুব পরিষ্কার হবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কালিদাসের শকুনতলা নিয়ে একটি মন্তব্য করেছেন দুইটা প্রবন্ধে সেখানে তিনি বলছেন, ঐ যে তপবন আশ্রমে শকুনতলা বড় হচ্ছে তিনি বলছেন, সমাজের বন্ধন নেই কিন্তু ধর্মের বন্ধন আছে। অর্থাৎ তপবনটা সমাজের বাইরে তাই সহজেই শকুনতলা মিলিত হতে পারল তার পালক বাবার অনুপস্থিতে এই জিনিসটা ঠিক হয়নি রবীন্দ্রনাথের মতে। সেখানে ধর্মের বন্ধন আছে কিন্তু সমাজের নেই এটা তিনি মেনে নেননি।

কিন্তু আমাদের দেশে রাজনীতিতে নতুন রাজনীতি আসার কথা জাতীয়তাবাদি আন্দোলনের ফল হচ্ছে বাংলাদেশ। সেটার জায়গায় এখন যে গোপনে শ্রেণীসংগ্রামের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে উচ্চ শ্রেণীর সাথে নি¤œ শ্রেণী, শ্রেণীর টুকরার সাথে শ্রেণীর এর সাথে সাথে বিএনপির দ্বন্দ্বে দেখবেন, আওয়ামীলীগের সাথে বিএনপির কি করে দেখবেন। এই নি¤œ শ্রেণী বা মধ্যবিত্ত শ্রেণী এখন উচ্চ শ্রেণী যাকে ফরাসি ভাষায় ক্লাস প্রেগমেন্টস বলা হয়। আগের জাতীয়তাবাদের রাজনীতি ছিল সমাজের সকলকে ঐক্যবদ্ধ করা যতটুকু সম্ভব। বর্তমানের রাজনীতি হচ্ছে তার মধ্যে নিজের আধিপত্য গড়ে তোলা নিজের স্বার্থপূরণ করা ফলে রাজনীতি আর আগের মতো নেই।

সলিমুল্লাহ জানান, এরই মধ্যে সুপ্রিম কোর্টে এক রাজনীতিক দল আত্মপ্রকাশ করেছে। খায়রুল হক সাহেব বলেছিলেন, এটা জাজের রিপাবলিকানে পরিণত হয়েছে। এখন সুপ্রিম কোর্ট নিজে একটা রাজনৈতিক দলের ভূমিকা পালন করছে। সুপ্রিম কোর্ট উদাহরণ স্বরুপ সংসদকে নিয়ে মন্তব্য করেছেন সংসদ অকার্যকর, সংসদ অপরিপক্ব। এটার নৈতিক দায় সুপ্রিম কোর্টের উপরে বর্তায়। সুপ্রিম কোর্ট নিজস্ব মুখে বলছেন, আমরা পরিপক্ক আছি আমরা ফ্যাংশনাল এটাই বলছি আমি । তাহলে রাষ্ট্রের দুইটা অঙ্গের মধ্যে যখন একটা অঙ্গ খলিত হয়ে যায় তাহলে বাকি অঙ্গ অক্ষত থাকে এমন তাহলে, এটা আমাদের রাষ্ট্র নাই। অথচ রাষ্ট্র আছে আমাদের এই যে দ্বন্দ্বটা চলছে এখানে রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত ছিল এই রায়ের রাজনীতিক দিক কোনটা বিবেচনা করা, এই রায়ের একটা সুদুর প্রসারি তাৎপর্য আছে।

তিনি বলেন, রায়ের মধ্যে এই সংসদটা অকার্যকর, ২০১৪ সনে ৫ জানুয়ারি নির্বাচনটা সঠিক হয়নি। এতে আরো এক বাড়তি অবজারভেশন আছে। এখানে ৫০ বা ৪৫ জন নারী সদস্য আছেন যারা নির্বাচিত নয়। এটাতো সংবিধানের বিধান অনুসারে হয়েছে। এখন ৭০ ধারা বলে যে ধারা আছে সুতরাং একটা বিধান আছে। এই সংসদে যেহেতু তার দলের হয়ে ভোট দিতে পারেন না এ রকম একটা বিধান আছে। এই কারণে বিচারপতিদের অপসারণ করা যায় না।

সলিমুল্লাহ বলেন, তর্কের খাতিরে বলি বিচারপতিরা কিন্তু সারাজীবনের জন্য একটা নিয়োগ পান । অন্যান্য সাংবিধানিক পদে কিন্তু সারাজীবনের জন্য নিয়োগ পান না। পাবলিক সার্ভিস কমিটি সারা জীবনের জন্য নিয়োগ পান না। ঐগুলোও সাংবিধানিক পদ তবে বিচারপতির পদটা কিন্তু বিশেষ সাংবিধানিক পদ বিবেকের সাথে যদি আমরা জিজ্ঞেস করি তারা কি নির্বাচিত হয়ে আসেন । তাদের কে নিয়োগ দেন, রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেন, রাষ্ট্রপতি কিভাবে নিয়োগ দেন, তিনি সংসদ থেকে নির্বাচিত এই সমস্ত প্রশ্নে এগুলোকে বলে পরোক্ষ গণতন্ত্র।

সলিমুল্লাহ বলেন, আইয়ুব খানের বেসিক গণতন্ত্রকে আমরা নিন্দা করেছিলাম, এটা পরোক্ষ গণতন্ত্র বলে। সেখানে প্রেসিডেন্ট শুধুমাত্র কলেজের ৮০ হাজার লোকের ভোটে নির্বাচিত হবেন আর সারা দেশের লোক নিয়ে নির্বাচিত হবেন না। এই জন্য আমি বলছি আমাদের রাজনীতিই মূল বিষয় । রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গের সাথে পারস্পরিকভাবে ধরে রাখতে পারবে তার মধ্যে কে প্রাধান্য পাবে। তাহলে এটিকে আমরা রাজনীতিক বিষয় হিসেবে দেখি। বিচারপতি থেকে শুরু করে রাষ্ট্রপতি সকলেরই দায়বদ্ধতা থাকতে হবে। এই দায়বদ্ধতা থেকেই আমরা রাষ্ট্রের কাছে দায়বদ্ধ। এই পদ্ধতিকে আমরা জবাবদিহিতা বলছি। এই প্রশ্নটা হচ্ছে মূল প্রশ্ন।

আমাদের সময়.কম