মঙ্গলবার , ১৪ই মে, ২০২৪ , ৩১শে বৈশাখ, ১৪৩১ , ৫ই জিলকদ, ১৪৪৫

হোম > Uncategorized > পুলিশ ফোর্সকে সার্ভিসে রূপান্তরে এগিয়ে যাচ্ছি

পুলিশ ফোর্সকে সার্ভিসে রূপান্তরে এগিয়ে যাচ্ছি

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
রাজশাহী: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পুলিশের সব সদস্যকে ঔপনিবেশিক ধ্যান-ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে হবে। জনগণের পরম বন্ধুর পরিচয় দিতে হবে।

মনে রাখতে হবে, মানুষ তার চরম বিপদের সময় পুলিশের কাছে সাহায্যের জন্য আসেন। তাই, আইনি সেবা দিয়ে গণমানুষের আস্থা অর্জন করতে হবে। জনমানুষের দোরগোড়ায় পুলিশি সেবাকে পৌঁছে দেওয়ার জন্য আমরা পুলিশ ফোর্সকে সার্ভিসে রূপান্তরের লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছি।

বৃহস্পতিবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকাল সোয়া ১১টায় রাজশাহীর সারদায় অবস্থিত বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে ৩৩তম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের সমাপনী কুচকাওয়াজে প্রধান অতিথির ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম পর্যায়ে ৩২ হাজার এবং ২য় পর্যায়ে ৫০ হাজার জনবল নিয়োগের পরিকল্পনা গ্রহণ করি। রাজস্ব ও উন্নয়ন বাজেটের অর্থায়নে ২৭টি নতুন ব্যারাক, ৬২টি ফাঁড়ি, ৭৩টি পুলিশ তদন্তকেন্দ্র, ৩৮টি মহিলা ব্যারাক, আবাসিক কোয়ার্টার নির্মাণ, ১৭১টি নতুন থানা ভবন নির্মাণ, ৪৫ জেলায় পুলিশ সুপারদের অফিস ভবন ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ করে সিআইডির ৪৫টি নতুন অফিস স্থাপন, ৫০টি হাইওয়ে আউটপোস্ট, ১২টি র‌্যাব কমপ্লেক্স, ১টি র‌্যাব ট্রেনিং স্কুল কমপ্লেক্স, পুলিশ রিফর্ম প্রোগ্রাম (২য় পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় ২১টি থানাকে মডেল থানায় রূপান্তর এবং ৬টি ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার নির্মাণসহ অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় স্থাপনা নির্মাণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

এছাড়া সাইবার ক্রাইম তদন্তে দক্ষতা বাড়াতে বিশেষ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ পুলিশকে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় একটি যুগোপযোগী আধুনিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন বাস্তবমুখী ও জনবান্ধব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছি। দীর্ঘদিনের দাবিনুযায়ী পুলিশ পরিদর্শক পদকে দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড পদ থেকে প্রথম শ্রেণির (নন-ক্যাডার) গেজেটেড পদে এবং উপপরিদর্শক ও সার্জেন্ট পদকে তৃতীয় শ্রেণির পদ থেকে দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড পদে উন্নীত করেছি। আমাদের সময়েই সর্বমোট ১২ হাজার ৯৩৩ জন পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যদের পদোন্নতি প্রদান করা হয়েছে। রেশন ৬০ ভাগ থেকে শতভাগে উন্নীত করেছি।

তিনি বলেন, বিশ্বায়নের এই যুগে অপরাধ তদন্তে যুগোপযুগী ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে অপরাধ দমন ও উদঘাটন সম্ভব নয়। তাই, সাইবার ক্রাইম, মানিলন্ডারিং, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ ঘটাতে হবে। সেই লক্ষ্যে পুলিশ বাহিনীকে উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদান ও তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছি।

অপরাধ ও অপরাধী শনাক্তকরণে পুলিশের আন্তর্জাতিকমান নিশ্চিতকরণে আমরা বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রকে আধুনিক ও যথাযথ মানসম্পন্ন করার জন্য জনবল বৃদ্ধিসহ, অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধন করে চলেছি।

এ সময় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ও গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে এনেছি। এদেশে সংবিধানকে সমুন্নত করার পাশাপাশি গণতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছি। আমরা জঙ্গিবাদ শক্তহাতে দমনের মাধ্যমে এ দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা বিনাশের সব অপচেষ্টা প্রতিহত করতে শতভাগ সমর্থ হয়েছি। পুলিশের আন্তরিক সহযোগিতার মাধ্যমে চরমপন্থীদের আইনের আওতায় আনতে পেরেছি। স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি দমনেও আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। যুদ্ধপরাধীদের বিচার করা ছিল জনগণের কাছে আমাদের অন্যতম অঙ্গীকার। ইতোমধ্যে কিছু রায় কার্যকর হতে শুরু হয়েছে। ইনশাআল্লাহ্ একে একে সব যুদ্ধাপরাধীর বিচার এ দেশের মাটিতে সম্পন্ন করা হবে।

শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দেশে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে চাই। খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, বিদ্যুৎ, আইন-শৃঙ্খলার মতো জনগুরুত্ব সম্পন্ন প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমরা ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। এই পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আপনাদের সেবার মান কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে উন্নীত করতে হবে। মৌলিক ও মানবাধিকারকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে।

সমাজের নারী, শিশু ও প্রবীণদের প্রতি সংবেদনশীল আচরণ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন আসুন, আমরা সবাই মিলে নতুন প্রজন্মের কাছে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার প্রত্যয়ী হই।

বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির অধ্যক্ষ নাঈম আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা, রাজশাহীর সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনসহ পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

৩৩তম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের সমাপনী কুচকাওয়াজে ২৬ জন নারীসহ মোট ১৬১ জন প্রশিক্ষণার্থী অংশ নেন।

এদের মধ্যে অশ্বাহরণে শিক্ষানবিশ এএসপি ফারুক হোসেন, সর্ব বিষয়ে (একাডেমিক) এএসপি রেজওয়ানা চৌধুরী, পঙ্কজ বড়ুয়া বিশেষ পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী সকাল সাড়ে ১০টায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে পৌঁছান। প্রথমেই তিনি বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে নবনির্মিত অতিথি ভবন ‘তরুণিমা’ এবং প্যারেড গ্রাউন্ডের নবনির্মিত গ্যালারীর উদ্বোধন করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩৩তম বিসিএস ব্যাচের শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারগদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে অভিবাদন গ্রহণ করেন।

পরে প্রধান অতিথির ভাষণ শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা নদীর তীরে নবনির্মিত অতিথি ভবন ‘ঊর্মি’ উদ্বোধন শেষে শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের সঙ্গে আলোকচিত্র গ্রহণে অংশ নেন।

বিকেলে প্রধানমন্ত্রী ঢাকার উদ্দেশে সারদা ত্যাগ করার কথা রয়েছে। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম