মঙ্গলবার , ১৪ই মে, ২০২৪ , ৩১শে বৈশাখ, ১৪৩১ , ৫ই জিলকদ, ১৪৪৫

হোম > শীর্ষ খবর > বিরোধীদলকে অপ্রস্তুত রেখে সরকারি দলের নির্বাচনী প্রস্তুতি

বিরোধীদলকে অপ্রস্তুত রেখে সরকারি দলের নির্বাচনী প্রস্তুতি

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি ডেস্ক ॥
বন্যা দুর্গতদের ত্রাণ বিতরণ ও তাদের পরিস্থিতি স্বচক্ষে দেখার জন্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উত্তরাঞ্চল সফরে যেয়ে বাংলাদেশের মানুষের নৌকা ছাড়া কোনো গতি নেই বলেছেন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে পুনরায় নির্বাচনের আহবান জানিয়েছেন। এর আগে ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়নি। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা তাদের মেয়াদ শেষ করতে যাচ্ছেন। জনপ্রতিনিধি হিসেবে তারা কতটুকু দায়িত্ব পালন করতে পেরেছেন তা বিচারে ভোটাররা আগামী নির্বাচনে তাদের ভোট প্রয়োগ করার সুযোগ পাবেন কি না সেটাই বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন বিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এমন প্রেক্ষাপটে প্রধান বিরোধীদল আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্যে রুপরেখা দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে নির্বাচনের বিষয়টি আদালতের রায়ে তিরোহিত হয়ে গেছে। লক্ষ্য করার মত বিষয় হচ্ছে দলীয় সরকারের অধীনে ১৯৮৬, ‘৮৮, ‘৯৬ ও ২০১৪-এর ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত চারটি নির্বাচনের কোনোটিতেই ক্ষমতাসীনদের পরাজয় ঘটেনি। তবে ১৯৯১, ‘৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় ক্ষমতাসীন কোনো দলেরই পরপর দু’টি নির্বাচনে জয় পায়নি। ভোটারবিহীন নির্বাচনে নির্বাচিত এমপিরা যখন ক্ষমতায় থেকেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন, তখন তাদের জয় ১০০ শতাংশ নিশ্চিত হয়ে যায়।

আগামী একাদশ নির্বাচনে এধরনের নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি হবে নাকি ভোটারদের অংশ গ্রহণে উৎসবমুখর নির্বাচনের আয়োজন করবে নির্বাচন কমিশন তা দেখার বিষয়। আর নির্বাচন পরবর্তী রাজনীতিই বা কি হবে? সে রাজনীতি কি বাংলাদেশের আর্থসামাজিক পরিস্থিতির উন্নয়নকে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে পারবে? ইতিমধ্যে সরকার সমর্থক বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, আইনবিদ, শিক্ষাবিদ, সুশীলসমাজ, সাহিত্য-সংস্কৃতিসেবীরা বিশ্বাস করেন, প্রধানমন্ত্রী ২০১৪-এর ৫ জানুয়ারির মতো প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন আর চান না বিধায় আগামী নির্বাচন অবশ্যই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। টেলিভিশনের টকশোতে তাদের এধরনের বক্তব্যে আরো একটি শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়, তা হচ্ছে যদি বিএনপি তাতে অংশগ্রহণ করে।

নির্বাচন কমিশন এখনো প্রধানবিরোধী দলকে আস্থায় আনতে পারেনি আগামী নির্বাচনে অংশ গ্রহণের জন্যে। বরং উল্টো দোষারোপ করা হচ্ছে, বেগম খালেদা জিয়া যদি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে ২০১৩ সালের অক্টোবরে গণভবনে দাওয়াত খেয়ে ১৪ দলীয় নির্বাচনকালীন সরকারে যোগদান করে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নিতেন, তাহলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হতো না। কাজেই এই নির্বাচনের সম্পূর্ণ দায় তার ওপর বর্তায়। অথচ ১৯৯১ সালের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর অধীনে নির্বাচনে অংশ নিতে রাজি না থাকায় নির্বাচনকালীন অসাংবিধানিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ১৪ দলের ১২৭ জন এমপি ও জামায়াতের ২০ জন এমপি ১৯৯৪ সালে সংসদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। ওই পদত্যাগপত্র স্পিকার গ্রহণ না করায় তারা হাইকোর্টে রিট করে পদত্যাগপত্র গ্রহণে স্পিকারকে বাধ্য করায় মেয়াদপূর্তির ১৫ মাস আগেই পঞ্চম সংসদের অবসান ঘটিয়েছিলেন।

কেয়ারটেকার সরকারের দাবির আন্দোলনে ১৭৬ দিন হরতাল হয়েছিল। আজ বলা হচ্ছে হরতালের দিন শেষ হয়ে গেছে। ‘৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার নির্বাচন যা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো প্রয়োজন ছিল, তা বর্জন এবং সচিব মহীউদ্দিন খান আলমগীরের নেতৃত্বে সরকারি কর্মচারিদের বিদ্রোহ হওয়ার পর মেয়র হানিফ প্রতিষ্ঠিত জনতার মঞ্চে অংশগ্রহণের মাধ্যম ২৮ দিন অবরোধ পালন করা হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়কারী ১৪ দল ক্ষমতায় আসেন।
এরপর পরিত্যক্ত মুন সিনেমা হলের মালিকানা মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের হাত থেকে ফিরে পাওয়ার জন্য পুরনো মালিক জিয়াউর রহমান সরকারের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত রিটের শুনানি করে প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক ১৯৭৯ সালে সংসদে পাস করা পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে ২০০৫ সালে যে রায় দেন, ওই রায় অনুযায়ী সংবিধানের পরামর্শ সংশোধনীর জন্য ২০১০ সালে সংসদীয় কমিটি গঠিত হয়। প্রধান বিচারপতি হিসেবে তিনি তার কাস্টিং ভোটের (৪-৩) রায়ে ২০১১ সালের মে মাসে তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করলেও দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচন এই সরকারের অধীনে করার জন্য প্রধান উপদেষ্টা পদে বিচার বিভাগবহির্ভূত কোনো বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বকে নিয়োগের ভার সংসদের ওপর অর্পণের বিষয়টি সংক্ষিপ্ত রায়ে উল্লেখ করেছিলেন।

তার এ পরামর্শ না নিয়ে পঞ্চদশ সংশোধনীর সাথে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের বিধান সংযোজন করে গত ৩০ জুন ২০১১ সালে তা পাস করা হয়। এই সংশোধনীতে বিচারপতিদের অপসারণ ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের এখতিয়ারে রাখা হয়েছিল, যা তিন বছর পর ২০১৪ সালে ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদের এখতিয়ারে ন্যস্ত করা হয়েছে, তা আপিল বিভাগের রায়ে সম্প্রতি বাতিল হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করা সংসদীয় রীতিনীতির পরিপন্থী ছিল। কারণ একই দাবিতে ১৪ দলের যে ১২৭ জন সংসদ সদস্য ‘৯৪ সালে পদত্যাগ করেছিলেন, তার মধ্যে ৮৫-৯০ জন ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে এই সংসদে ছিলেন। তাই বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এই ও পর্যটন কাজে সংযুক্ত না হওয়ার লক্ষ্যে ভোটদানে বিরত থাকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি নৌকা প্রতীকে জয়ী হওয়ায় ভোট দানে বিরত থাকলে সংবিধানে এমপিদের মৌলিক অধিকার খর্বকারী ও স্বাধীন মত প্রকাশে বড় বাধা সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তার সংসদ সদস্য পদ খারিজ হয়ে যায় বিধায় তিনি ভোটদান করেছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী যদি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে ‘৯৬ সালের ১২ জুন অথবা ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের মতো (এ দু’টি নির্বাচনেই ১৪ দলীয় জোট জয়ী হয়েছিল) অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে আন্তরিক হতেন; তাহলে প্রধান বিচারপতির রায় অনুযায়ী দশম সংসদ নির্বাচনকালীন সরকার প্রধান কে হবেন সেই ব্যাপারে বিরোধী দলের সাথে ঐকমত্যে পৌঁছতে তিনি পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের ১৫ মাস আগেই তড়িঘড়ি করে ৩০ জুন ২০১১ একতরফাভাবে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করতেন না, যা ছিল তাদের দীর্ঘ দিনের আন্দোলনের ফসল। এভাবে তিনি নিষ্পত্তিকৃত একটি রাজনৈতিক বিরোধকে পুনরুজ্জীবিত করেছেন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে যদি সংসদ থেকে পদত্যাগ ও ১৭৬ দিন হরতাল পালন করা যায়, তাহলে তা বাতিলের জন্য ১০০ দিন সংলাপ করার ফুরসত কেন মিলছে না ? ১৪ দল এখন সব কিছুতেই সংবিধানের উদাহরণ টানছেন। প্রশ্ন ওঠে ‘৯৪-’৯৬ সালে তাদের আন্দোলন সংবিধানে প্রদত্ত কোন বিধানের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়েছিল? সরকারি কর্মচারীদের বিদ্রোহ ও তাদের নেতার মন্ত্রিত্ব গ্রহণ চাকরিবিধির কোন অনুচ্ছেদে লেখা আছে?

২০০৬-০৭ সালে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মদকে নির্বাচনকালীন সরকারপ্রধান করে বিএনপি ক্ষমতায় ফিরে আসার অপচেষ্টা চালাচ্ছে- এই অভিযোগে ১৪ দল ও সুশীলসমাজের সমর্থনে জেনারেল মইন এগিয়ে এসেছিলেন সংবিধানের কোন বিধি মোতাবেক? ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির আগে ওই সুশীলসমাজের একটি ক্ষুদ্র প্রতিনিধিদল রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদের সাথে সাক্ষাৎ করে রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে দশম সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে তাকে ভূমিকা রাখার অনুরোধ জানালে তিনি সংবিধান প্রদর্শন করে তাদের বিদায় জানান। বলা হয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিকৃত হয়ে পড়েছিল; তাই বাতিল করা হয়েছে। ছিনতাইকারীর হাতে সার্জারি নাইফ চলে যেতে পারে বলে অস্ত্রোপচার থেকে চিকিৎসকরা বিরত থাকেন?

১৯৮৮ সালে এরশাদ মার্কা নির্বাচনের মতো ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন করে বুদ্ধিজীবী ও সুশীলসমাজের সমর্থনে মেয়াদ শেষ করতে যাচ্ছে সরকারি দল। এখন নির্বাচন কমিশন কি অবাধ ক্ষমতার প্রয়োগ করে ভারত বা শ্রীলঙ্কার নির্বাচন কমিশনের মতো নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে পারবে? স্থানীয় সরকার পর্যায়ের নির্বাচনে তার কোনো উদাহরণ কমিশন দেখাতে পারেনি। ভারত ও শ্রীলঙ্কায় বাংলাদেশের মতো একক কেন্দ্রীয় সরকারের শাসনে তাদের সব কিছু পরিচালিত হয় না। ভারত ও শ্রীলঙ্কা বিভিন্ন রাজ্য ও প্রদেশে বিভক্ত, তাই কেন্দ্রীয় সরকারের প্রশাসনের পক্ষে বিভিন্ন রাজ্য ও প্রদেশের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর প্রভাব বিস্তারের কোনো সুযোগ থাকে না। শ্রীলঙ্কার দীর্ঘ ৩৫ বছর তামিলদের সাথে চলা গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটানোর ক্ষেত্রে সফল প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে ক্ষমতায় থেকেও নির্বাচন করায় পরাজিত হন, বাংলাদেশে এটি কল্পনা করা যায় না।

১৯৯৬ সালে সরকারি কর্মচারীদের বিদ্রোহ ঘোষণা করে ‘জনতার মঞ্চে’ আরোহণ এবং নির্বাচনের পরে ওই নেতার মন্ত্রিত্ব পাওয়া এবং ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে জেনারেল মইনের বঙ্গভবন অভিযানের পেছনে আওয়ামী লীগ বা ১৪ দলের সমর্থন ছিল। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ও পরবর্তী সময়ে উপজেলা, পৌরসভা ও ইউপি নির্বাচনে সরকারি কর্মচারীরা ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের পক্ষে যে ‘সার্ভিস’ দিয়ে এসেছেন তাও নজিরবিহীন।

১০ বছর ধরে ক্ষমতাসীনদের অধীনে তাদের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি পর্যাপ্ত পদ না থাকার পরও বেশির ভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী দু-তিনটি করে পদোন্নতি পেয়েছেন এবং যারা নতুন নিয়োগ পেয়েছেন, তারাও ক্ষমতাসীন দলের এমপিদের বিশেষ সুপারিশে নিয়োগ পেয়ে প্রতিনিয়ত তার ‘প্রতিদান’ দিতে প্রতিশ্রুতবদ্ধ। মন্ত্রিসভা ও ৩৫০ জন এমপি নিজ পদে বহাল থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় তাদের জয় নিশ্চিত জেনেই নির্বাচন পরিচালনায় নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দায়িত্ব পালন করবেন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচন শেষ হওয়া পর্যন্ত মোট ৪০-৪৫ দিন তারা নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মোতাবেক নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের কারণে যেসব কেন্দ্রে সরকারি দলের পক্ষে কম ভোট পড়বে, সেসব কেন্দ্রের দায়িত্বে নিয়োজিত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, বেসরকারি স্কুল-কলেজ ও মাদরাসা শিক্ষকেরা পরে পদোন্নতির বদলে কপালে মিলবে হয়রানিমূলক বদলি ও হয়রানি। বেসরকারি স্কুল-কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষক-কর্মচারীর অনেকেই চাকরি হারাতে পারেন। কাজেই নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুসারে ৪০-৪৫ দিন সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করে তাদের চাকরির পরবর্তী ১৭২৬ দিন ঝুঁকিতে ফেলতে চাইবেন না।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মিলিত ভোটব্যাংক ৬০-৬৫ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করে এবং অন্যান্য দলের ৫ শতাংশ ছাড়া ৩০ শতাংশ ভোটার কোনো দলের নয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত প্রতিটি নির্বাচনে তারা ক্ষমতাসীনদের বিপক্ষে ভোটাধিকার প্রয়োগ করায় কোনো দল উপর্যুপরি পরপর দুইবার জয়লাভ করতে পারেনি। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে প্রধান বিরোধী দল অংশগ্রহণ না করে ক্ষমতাসীনদের জয় নিশ্চিত জেনেই নিরপেক্ষ ভোটার ও নির্বাচন বর্জনকারী দলগুলোর ভোটাররা কেন্দ্রে যান না। তাদের ‘ভোটদানের দায়িত্ব গ্রহণ করে’ সরকারি দলের কর্মীরা আর সরকারি কর্মচারীরা তাতে ‘সহায়তা’ করে থাকেন। এর উদাহরণ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন।

এ ধরনের নির্বাচনই এখন বৈধ। ক্ষমতায় থেকে ১০০ শতাংশ সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া তাই খুব সহজ। তাহলে কি ভুর ছিল এরশাদকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ৯ বছরের আন্দোলন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ১৭৬ দিন হরতাল কিংবা মইনকে ডেকে আনার। বিরোধী দল পরিবর্তনের জন্য ১৮ মাসব্যাপী এত হাঁকডাকের নির্বাচন প্রস্তুতি এখন সরকারি দলের নির্বাচন প্রস্তুতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১৪ দল ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের এবং ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরে যে আদলের সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে জয়ী হয়েছিল, প্রবল জনসমর্থন থাকলে তেমন নির্বাচনে অংশ নিতে বাঁধা কোথায়? আমাদের সময়.কম