মঙ্গলবার , ১৪ই মে, ২০২৪ , ৩১শে বৈশাখ, ১৪৩১ , ৫ই জিলকদ, ১৪৪৫

হোম > Uncategorized > বেতন-বোনাস এখনো বাকি

বেতন-বোনাস এখনো বাকি

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঈদের আর দুই কি তিন দিন বাকি। তবে এখন পর্যন্ত বেশির ভাগ পোশাকশ্রমিক বেতন, বোনাস ও ওভারটাইম পাননি।

ঈদের আগে বেতন-বোনাসের দাবিতে এক সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন স্থানে শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটছে। শ্রমিকদের এই অসন্তোষ ছিল গতকাল সোমবারও। গতকাল রাজধানীর মিরপুর, গাজীপুর ও সাভার এলাকায় নানাভাবে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন শ্রমিকেরা।

গাজীপুর সদর উপজেলার মাস্টারবাড়ী এলাকার স্টাইলো অ্যাপারেলসের শ্রমিকেরা বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাসের দাবিতে গতকাল বিােভ করেছেন। শ্রমিকেরা কারখানার কয়েকটি গ্লাস ভাঙচুরের পর সকালে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক আধা ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন। পরে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল নিপে ও লাঠিপেটা করে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ ঘটনায় অন্তত ৩০ জন শ্রমিক আহত হন।

একই দাবিতে মিরপুরের ছয়টি কারখানার শ্রমিকেরা সকালে দারুস সালাম সড়ক অবরোধ করেন। আবার সাভারের রানা প্লাজার সামনে তিগ্রস্ত শ্রমিকেরা বেতন-বোনাসের দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবস্থান করেন। পরে পুলিশ লাঠিপেটা করে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে অন্তত ২৫ জন শ্রমিক আহত হন।

এর আগে শ্রমিকেরা বেতন ও বোনাসের দাবিতে গত বুধবার গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর এলাকায় লিবাস টেক্সটাইল লিমিটেডের পোশাক কারখানায় ভাঙচুর ও আগুন দেন। রাজধানীতেও একাধিক কারখানায় বিােভ হয়েছে।

গার্মেন্ট শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু গতকাল জানান, মিরপুর, আশুলিয়া, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ থেকে অভিযোগ আসছে, শ্রমিকেরা তাঁদের প্রাপ্য বেতন-বোনাস পাচ্ছেন না। এখন পর্যন্ত এসব এলাকার মাত্র ৩০ শতাংশ কারখানার শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দিয়েছেন মালিকেরা। তার মধ্যে অনেক মালিক ঈদ বোনাস হিসেবে মূল বেতনের মাত্র ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ দিচ্ছেন। যদিও বোনাস মূল বেতনের শতভাগ দেওয়ার কথা। আবার কয়েকটি কারখানায় ঈদের আগে ওভারটাইম দিতে পারবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

তবে ঈদের আগে বেতন-বোনাস ও ওভারটাইম নিয়ে শ্রমিক অসন্তোষ হতে পারে—এমন আশঙ্কার কথা গত মাসেই জানিয়েছিল ঢাকা মহানগর (ডিএমপি) ও শিল্পাঞ্চল পুলিশের গোয়েন্দা শাখা। এ জন্য তারা পৃথকভাবে ঢাকা ও গাজীপুরে ১২৬টি ঝুঁকিপূর্ণ কারখানা চিহ্নিত করে। এসব কারখানার তালিকা পোশাকমালিকদের সমিতি বিজিএমইএ ও সরকারের কাছে জমা দেওয়া হয়।

এসব ঝুঁকিপূর্ণ কারখানার তালিকায় স্টাইলো অ্যাপারেলস ছাড়াও বেক্সিমকো, যমুনা, গিভেন্সি গ্রুপসহ বিজিএমইএর সাবেক সহসভাপতি হারুন-অর-রশীদের মালিকানাধীন ইস্ট ওয়েস্ট ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের কারখানার মতো বড় প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তালিকাভুক্ত ঝুঁকিপূর্ণ সব কারখানায় প্রায় দুই লাখ শ্রমিক কাজ করেন।

ঝুঁকিপূর্ণ তালিকার বিষয়ে বিজিএমইএর সহসভাপতি এস এম মান্নান গত রোববার বলেন, ‘সমিতির নেতারা তালিকা ধরে ধরে চিহ্নিত কারখানাগুলোর খোঁজখবর নিয়েছেন। তবে আমরা কোনো সমস্যা পাইনি। আশা করছি, শ্রমিক অসন্তোষের কোনো ঘটনা ঘটবে না।’

শিল্প পুলিশ-২ গাজীপুর তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, সময়মতো বেতন-ভাতা পরিশোধ না করা, উৎসব ভাতা ও ঈদ উপলে ছুটির জন্য গাজীপুর শিল্পাঞ্চলে কিছু কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিতে পারে। ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে শিল্প পুলিশ ৬৫টি পোশাক কারখানার তালিকা দিয়েছে।

এ বিষয়ে শিল্প পুলিশের সহকারী কমিশনার মোশারফ হোসেন বলেন, ‘যেসব কারখানায় ১০ তারিখের মধ্যে বেতন পরিশোধ হয় না কিংবা প্রায়ই সমস্যা হয়, সেসব কারখানাই মূলত চিহ্নিত করা হয়েছে।’

তবে এত কিছুর পরও গাজীপুরের স্টাইলো অ্যাপারেলসে শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটেছে। কারখানাটির সুয়িং অপারেটর মোহাম্মদ সুজায়েত বলেন, ‘দোকানে বাকি পড়ে আছে। বাসা ভাড়া বাকি। এখন বেতন না পেলে এই দেনা পরিশোধ করতে পারব না। আর এটা না হলে দোকান ও বাসার মালিক গ্রামের বাড়ি যেতে দেবে না। তারা প্রতিদিনই খোঁজ নিচ্ছে, কবে বেতন পাব।’

আরেক শ্রমিক বিলকিস বেগম বলেন, ‘আমি আর আমার স্বামী এই কারখানাতেই কাজ করি। বেতন-বোনাস না পেলে ছেলেমেয়েদের পোশাক কিনে দিতে পারব না। আর দোকানের বাকি, বাসা ভাড়া তো আছেই।’

তবে গাজীপুরের কয়েকটি কারখানায় বেতন দেওয়া শুরু হয়েছে। গোয়েন্দা বাহিনীর ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় আছে পানিশাইল এলাকার ডরিন ফ্যাশন লিমিটেড। কারখানাটিতে এর আগে বেশ কয়েকবার বেতন-বোনাস নিয়ে শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটেছে। তবে কারখানা কর্তৃপ গতকাল থেকে শ্রমিকদের ঈদ বোনাস ও জুলাই মাসের বেতন দেওয়া শুরু করেছে। আবার বাসন এলাকার ইস্ট ওয়েস্ট ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড নামের কারখানায়ও শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ শুরু হয়েছে।

ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় থাকা গিভেন্সি গ্রুপের মালিক জাহিদ হাসান রোববার রাতে বলেন, ‘দুই দিন আগেই সব শ্রমিকের বোনাস দেওয়া হয়েছে। ৬ বা ৭ আগস্টের মধ্যে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করা হবে।’

বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম দাবি করে বলেন, ‘অনেক কারখানায় বেতন-বোনাস দেওয়া আজ (গতকাল) শুরু হয়েছে। তবে বেশির ভাগ কারখানার মালিক শ্রমিকদের বেতন-বোনাস কাল মঙ্গলবার (আজ) ও বুধবার পরিশোধ করবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন।’ তিনি বলেন, সমিতি কেন্দ্রীয়ভাবে বিষয়টি তদারক করছে।