সোমবার , ১৩ই মে, ২০২৪ , ৩০শে বৈশাখ, ১৪৩১ , ৪ঠা জিলকদ, ১৪৪৫

হোম > রাজনীতি > মওদুদের বাড়িতে উচ্ছেদ অভিযান চলছে

মওদুদের বাড়িতে উচ্ছেদ অভিযান চলছে

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের অবৈধ দখলে থাকা গুলশান-২ এর ১৫৯ নম্বর প্লটের বাড়িটি মুক্ত করতে রাজউকের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অভিযান চলছে।

বুধবার (০৭ জুন) দুপুর থেকে রাজউকের ম্যাজিস্ট্রেট ওয়ালিউর রহমানের নেতৃত্বে বাড়িটিতে অভিযান শুরু হয়েছে। সেখানে রাজউকের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা রয়েছেন বলেও জানা গেছে।

গুলশান-২ এর ১৫৯ নম্বর প্লটের বাড়িটি নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন ৪ জুন (রোববার) খারিজ করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে মওদুদ আহমদ ও তার ভাই মনজুর আহমেদের দখলে থাকা বাড়িটি ছাড়তেই অভিযান শুরু করে রাজউক।

রোববার (০৪ জুন) প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে ৫ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

১৫৯ নম্বর বাড়ির মিউটেশন (নামজারি) মওদুদ আহমদের ভাই মনজুর আহমদের নামে করতে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বাতিল করে গত বছরের ০২ আগস্ট রায় দেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে ওই বাড়ি আত্মসাতের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে মামলাও বাতিল হয়ে যায়।

এরপর মামলা বাতিলের বিরুদ্ধে দুদক এবং নামজারি বাতিলের বিরুদ্ধে মনজুর আহমদ আপিল বিভাগের রায়ের রিভিউ চেয়ে আবেদন জানান।

দুই রিভিউ আবেদনের শুনানি একসঙ্গে নিয়ে মওদুদ আহমদ ও তার ভাই মনজুর আহমদের বিরুদ্ধে করা বাড়ি আত্মসাৎ মামলার অভিযোগ গঠন বাতিলে দুদকের রিভিউ আবেদন সরাসরি খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। অন্যদিকে নামজারি বাতিলের বিরুদ্ধে মনজুর আহমদের রিভিউ আবেদন পর্যবেক্ষণসহ খারিজ করেছেন।

আদালতে মওদুদ আহমদের পক্ষে তিনি নিজে এবং ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ ও কামরুল হক সিদ্দিকী শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও দুদকের পক্ষে আবদুল মতিন খসরু ও খুরশীদ আলম খান শুনানিতে ছিলেন।

গত ৩১ মে দুই পক্ষের রিভিউ আবেদনের ওপর শুনানি শেষে ০৪ জুন রোববার আদেশের দিন ধার্য করেন আপিল বিভাগ। কর্মদিবসের প্রথম ভাগেই বিষয়টিতে আদেশ দেন সর্বোচ্চ আদালত।

আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায়ের পর গত বছরের ০২ আগস্ট অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জানিয়েছিলেন, হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাজউকের আপিল মঞ্জুর করায় বাড়িটি মওদুদ আহমদের ভাইয়ের নামে নামজারি করতে হবে না। ফলে ভাইয়ের নামে দখল করা বাড়িটি মওদুদ আহমদকে ছাড়তে হবে।

এছাড়া দুর্নীতি মামলার অভিযোগ আমলে নেওয়া বৈধ বলে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে মওদুদ ও তার ভাই মনজুরের করা আপিল নিষ্পত্তি করে দেওয়ায় বিচারিক আদালতে মামলাটি চলবে না।

এক আবেদনের শুনানি নিয়ে ২০১০ সালের ১২ আগস্ট ওই বাড়িটি মনজুর আহমদের নামে মিউটেশন করার রায় দেন হাইকোর্ট। রাজউক এ রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল দায়ের করে ২০১১ সালের ০৩ ফেব্রুয়ারি। ২০১৪ সালের ০৯ মার্চ আপিল বিভাগ রাজউককে আপিলের অনুমতি দেন।

অন্যদিকে ২০১৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর রশীদ রাজধানীর গুলশান থানায় মওদুদ আহমদ ও তার ভাই মনজুর আহমদের বিরুদ্ধে ওই বাড়ি আত্মসাতের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। ২০১৪ সালের ১৪ জুন এ মামলার অভিযোগ গঠন করেন বিচারিক আদালত। এর বিরুদ্ধে তাদের আবেদন গত বছরের ২৩ জুন খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। পরে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেন মওদুদ আহমদ।

দুদকের করা মামলার অভিযোগে বলা হয়, বাড়িটির প্রকৃত মালিক ছিলেন পাকিস্তানি নাগরিক মো. এহসান। ১৯৬০ সালে তৎকালীন ডিআইটির (রাজউক) কাছ থেকে এক বিঘা ১৩ কাঠার এ বাড়ির মালিকানা পান এহসান। ১৯৬৫ সালে বাড়ির মালিকানার কাগজপত্রে এহসানের পাশাপাশি তার স্ত্রী অস্ট্রিয় নাগরিক ইনজে মারিয়া প্লাজের নামও অন্তর্ভুক্ত হয়।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে স্ত্রীসহ ঢাকা ত্যাগ করেন এহসান। তারা আর ফিরে না আসায় ১৯৭২ সালে এটি পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকাভুক্ত হয়।

এরপর ১৯৭৩ সালের ০২ আগস্ট মওদুদ তার ইংল্যান্ডপ্রবাসী ভাই মনজুরের নামে একটি ভুয়া আম মোক্তারনামা তৈরি করে বাড়িটি সরকারের কাছ থেকে বরাদ্দ নেন বলেও মামলায় অভিযোগ করে দুদক।