রবিবার , ১২ই মে, ২০২৪ , ২৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ , ৩রা জিলকদ, ১৪৪৫

হোম > Uncategorized > যে বিভীষিকা আজও তাড়ায় আমেরিকাকে

যে বিভীষিকা আজও তাড়ায় আমেরিকাকে

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: আজ ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৪। যুক্তরাষ্ট্র তথা বিশ্বের ইতিহাসের স্মরণকালের সবচেয়ে দুঃসাহসী ও ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ত্রয়োদশ বার্ষিকী আজ।

২০০১ সালের এই দিনে বিশ্বের একক সুপার পাওয়ার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ও অর্থনৈতিক প্রাণকেন্দ্রে তাদেরই আকাশ থেকে ছিনতাই করা উড়োজাহাজ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে সন্ত্রাসী গ্রুপ আল কায়েদার আত্মঘাতী সদস্যরা।

ধ্বংস হয় যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক শ্রেষ্ঠত্বের গৌরবদণ্ড ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের গগনচুম্বী দু’টি টাওয়ার। এমনকি রক্ষা পায়নি সমরসজ্জায় বলীয়ান বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক প্রাণভোমরা পেন্টাগনও।

২০০১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আল কায়েদার ওই ভয়াবহ তাণ্ডবে প্রাণ হারান কমপক্ষে ৩ হাজার মানুষ। মুহূর্তে বিনষ্ট হয় শত শত কোটি ডলারের সম্পদ। থমকে দাঁড়ায় বিশ্বের অর্থনীতির ব্যারোমিটার হিসেবে পরিচিত ওয়াল স্ট্রিট।

স্মরণাতীতকালের ভয়াবহ ওই সন্ত্রাসী হামলার জন্য সন্ত্রাসীরা বেছে নেয় চারটি বাণিজ্যিক যাত্রীবাহী বিমানকে।

এর মধ্যে আমেরিকান এয়ারলাইন্সের ‘ফ্লাইট ১১’ ও ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের ‘ফ্লাইট ১৭৫’ আঘাত হানে যথাক্রমে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের উত্তর ও দক্ষিণ টাওয়ারকে।

বিমান দু’টির আঘাতে ভেঙ্গে পড়ে ১১০ তলা উচ্চতার সুউচ্চ ওই ভবন দু’টি। আর তাদের ধ্বংসস্তপের নিচে চাপা পড়ে আরও কমপক্ষে দশটি ছোটো বড় স্থাপনা।

অপর দিকে ছিনতাই হওয়া তৃতীয় উড়োজাহাজ আমেরিকান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ৭৭ আঘাত হানে মার্কিন সমর দফতর পেন্টাগনের পঞ্চভুজাকার মূল ভবনে।

তবে চতুর্থ উড়োজাহাজ ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ৯৩ চূড়ান্ত লক্ষ্যতে আঘাত হানার আগেই বিধ্বস্ত হয় রাজধানী ওয়াশিংটনের নিকটবর্তী শ্যাকসভিলের একটি মাঠে।

ধারণা করা হয় ওই বিমানটির লক্ষ্যবস্তু ছিলো স্বয়ং হোয়াইট হাউজ।

১৯ জন আত্মঘাতী হামলাকারী এবং চার বিমানের ২২৭ জন আরোহী সহ সব মিলিয়ে সেদিনের ঘটনায় মারা যায় ৩ হাজার মানুষ।

২০০১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ১১ তারিখের ওই দুঃস্বপ্নের ভয়াবহতা আজও তাড়িয়ে বেড়ায় যুক্তরাষ্ট্রবাসীকে।

নাইন ইলেভেনের প্রতিক্রিয়া হয়েছিলো সুদূরপ্রসারী। ওই ঘটনার পর পাল্টে যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী পৃথিবীর হিসাব নিকাশ। শুরু হয় আধুনিক ইতিহাসের ‘পোস্ট নাইন ইলেভেন’ পিরিয়ডের।

হামলার পর ‘সন্ত্রাস’ প্রতিরোধে বিশ্ব মোড়লের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। শুরু হয় ‘ওয়ার অন টেরর’ বা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ।

সেই ওয়ার অন টেররের অংশ হিসেবে সন্ত্রাসী গ্রুপ আল কায়েদাকে আশ্রয় দেয়ার অভিযোগে আফগানিস্তান দখল করে নেয় মার্কিন বাহিনী।উচ্ছেদ করে তালেবান সরকারকে।

আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনকে দশ বছর খোঁজার পর পাকিস্তানে গিয়ে হত্যা করে মার্কিন সেনারা।

আমেরিকার দেখাদেখি বিশ্বজুড়ে ‘মুসলিম চরমপন্থা’ রোধে সন্ত্রাসবিরোধী আইন প্রণয়ন করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারগুলো। নজরদারি বাড়ানো হয় সন্ত্রাসীদের আর্থিক কাঠামোর ওপরও।

পাশাপাশি ওই বিষয়কে পুঁজি করে সুবিধা নেয়ার অপচেষ্টার অভিযোগ ওঠে বুশের নেতৃত্বাধীন তৎকালীন মার্কিন শাসক চক্রের বিরুদ্ধে।

সন্ত্রাসী ধরার নামে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে দেয়া হয় অপরিসীম ক্ষমতা। ফলে কোনো দেশের সার্বভৌমত্বের তোয়াক্কা না করে সন্ত্রাসী খোঁজার নাম করে গোপন অভিযান চালাতে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও বিশেষ বাহিনী। শুরু হয় ড্রোন হামলা।

বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের গোপন কারাগারগুলোতে সন্ত্রাসীদের গোপন তথ্য আদায়ের নামে ও জোর পূর্বক স্বীকারোক্তি নিতে নির্যাতন করা হয় অনেক নিরপরাধ ব্যক্তিকেও।

ধৃত ও সন্দেহভাজন আল কায়েদা,তালেবান নেতাদের বন্দি রাখার জন্য নির্মাণ করা হয় কুখ্যাত গুয়ানতানামো কারাগার।

বিচারহীনতা ও কয়েদীদের ওপর নির্যাতনের জন্য পরবর্তীতে বিশ্বজুড়ে কুখ্যাতি পায় কারাগারটি।

সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ের ওই ধারাবাহিকতায় ঠুনকো অজুহাতে ইরাক দখল করে নেয় তৎকালীন বুশ প্রশাসন, উচ্ছেদ করে সাদ্দাম সরকারকে।

কিন্তু এসবের ফলাফল হয় সুদূরপ্রসারী। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে মার্কিন বিরোধী মনোভাব। আফগানিস্তানে দীর্ঘ মার্কিন বিরোধী লড়াইয়ে নামে ক্ষমতাচ্যুত তালেবানরা।

অপর দিকে ইরাকেও শুরু হয় দখলদার বিরোধী লড়াই।

এক সময় এ লড়াই ছড়িয়ে পড়ে দেশের সীমানার বাইরে। আর ফলাফল হিসেবে এখন মধ্যপ্রাচ্য জুড়েই এখন হিংসা, রক্তপাত আর হানাহানি। বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে এখন মোকাবেলা করতে হচ্ছে আল কায়েদার থেকেও বেপরোয়া এবং হিংস্র জঙ্গি গ্রুপ ইসলামিক স্টেটকে।

আমেরিকার অর্থনীতির জন্যও নাইন ইলেভেনের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ছিলো সুদূরপ্রসারী। হামলার পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির হৃদপিণ্ড ম্যানহাটনের ব্যবসা বাণিজ্যে স্থবিরতা দেখা দেয়। এমনকি কয়েকদিনের জন্য বন্ধ থাকে বিশ্ব অর্থনীতির ব্যারোমিটার বিশ্বের সবচেয়ে বড় পুঁজিবাজার ওয়াল স্ট্রিটের কার্যক্রমও।

২০০১ সালের ওই ঘটনার পর কেটে গেছে দীর্ঘ ১৩ বছর। নাইন ইলেভেনের দুঃস্বপ্ন এখনও তাড়িয়ে বেড়ায় যুক্তরাষ্ট্রকে। নানা অনুষ্ঠান পালনের মাধ্যমে তারা স্মরণ করে সেদিনের ঘটনায় নিহতদের।

ওই ঘটনার স্মরণে বেশ কিছু স্মৃতি সৌধ স্থাপন করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। যার মধ্যে নিউইয়র্কে ন্যাশনাল সেপ্টেম্বর ১১ মেমোরিয়াল অ্যান্ড মিউজিয়াম, পেন্টাগন মেমোরিয়াল এবং পেনসিলভানিয়া ফ্লাইট ৯৩ ন্যাশনাল মেমোরিয়াল উল্লেখযোগ্য।

নাইন ইলেভেনের পর প্রেসিডেন্ট বুশ আশ্বাস দিয়েছিলেন তার সন্ত্রাসী বিরোধী লড়াই পুরো বিশ্বকে নিরাপদ করবে।

মাঝে কেটে গেছে আরও তের বছর। লাদেন ও সাদ্দামকে পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে। আফগানিস্তানে নেই তালেবানরাও।

নাইন ইলেভেনের ত্রয়োদশ বার্ষিকীতে তাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো,সত্যিই বিশ্ব কী আজও নিরাপদ?