রবিবার , ১৯শে মে, ২০২৪ , ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ , ১০ই জিলকদ, ১৪৪৫

হোম > শীর্ষ খবর > সাত ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

সাত ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি ডেস্ক ॥

মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে বাংলাদেশ বহুদূর এগিয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকা থেকে উঠে এসে ঝুঁকিমুক্ত দেশে পরিণত হয়েছে। এর পরও বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর মানি লন্ডারিংয়ের ঘটনা ঘটছে। এ বিষয়ে ৭টি ঝুঁকি শনাক্ত করেছে এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ (এপিজি) অন মানি লন্ডারিং। এসব ঝুঁকি মোকাবিলায় বাংলাদেশকে আরও সক্ষমতা অর্জনের জন্য তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

এপিজির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মানি লন্ডারিংয়ের অনেক ধরনের ঝুঁকি থেকে বাংলাদেশ বেরিয়ে এসেছে। এর পরও কিছু ঝুঁকি রয়ে গেছে। এসব ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য বাংলাদেশকে আরও অবকাঠামোগত উন্নয়ন করতে হবে। একই সঙ্গে আইনের প্রয়োগ বাড়াতে হবে। মানি লন্ডারিংয়ের ঝুঁকি থেকে বেরিয়ে আসতে যা যা করতে হবে, সেগুলো হচ্ছে আমদানি ও রপ্তানির মাধ্যমে অর্থপাচারের ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা আরও জোরদার করা; বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে বাণিজ্য ও লেনদেনের ক্ষেত্রে তদারকি ব্যবস্থা শক্তিশালী করা; প্রযুক্তিগত ব্যবস্থার উন্নয়ন; দেশের সব প্রতিষ্ঠান অ্যান্টি মানি লন্ডারিং ব্যবস্থার আওতায় নিয়ে আসা; বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটকে (বিএফআইইউ) অনলাইন করা; মানি লন্ডারিংয়ের ঝুঁকিপ্রবণ ব্যক্তিদের তদারকির অভাব দূর করা এবং বিমানবন্দর, সমুদ্র ও স্থলবন্দরগুলোতে নগদ মুদ্রা, মূল্যবান ধাতব পদার্থ শনাক্তকরণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা প্রভৃতি।

এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, দেশের প্রভাবশালীরাই কালো অর্থের মালিক। তারাই মানি লন্ডারিং বেশি করে। মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে অর্থ আয় করে সেগুলোও আবার পাচার করে। অর্থের পাচার রোধে দেশে প্রযুক্তিগত ব্যবহারে এখনো অনেক গাফিলতি রয়েছে। দেশে সবচেয়ে বেশি অর্থপাচার হয় আমদানি ও রপ্তানির মাধ্যমে। এ দিকে যথাযথ পর্যবেক্ষণ থাকলে পাচার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এ ছাড়া হুন্ডি ও অন্যান্য ব্যবস্থায় টাকা পাচার রোধেও টেকনিক্যাল ব্যবস্থা অনেক বৃদ্ধি করতে হবে।

জিএফআইয়ের তথ্যমতে, ২০০৫ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ৭ হাজার ৫৮৫ কোটি ডলার বা ৬ লাখ ৬ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এর মধ্যে শুধু ২০১৪ সালেই পাচার হয়েছে ৯১১ কোটি ডলার বা ৭২ হাজার ৮৭২ কোটি টাকা। এ ছাড়া সুইস ব্যাংক, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ থেকে পাচারকৃত অর্থের একটি বড় অংশ যাচ্ছে পণ্য আমদানি ও রপ্তানির মাধ্যমে। আমদানির মূল্য বেশি দেখিয়ে বা যে পরিমাণ উল্লেখ করা হচ্ছে, তার চেয়ে কম পণ্য আমদানি করে দেশ থেকে টাকা পাচার হচ্ছে। ঠিক বিপরীতভাবে পরিমাণে বেশি রপ্তানি করেও কম রপ্তানি দেখিয়ে বা মূল্য কম দেখিয়ে অর্থপাচার হচ্ছে। সংস্থাটি মনে করে, তদারকির অভাবেই মূলত টাকা পাচার করা সম্ভব হচ্ছে। তারা এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে কাজ করছে।

বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে স্থল বাণিজ্য হচ্ছে। এ জন্য স্থলবন্দর রয়েছে। বাণিজ্যের কারণে লেনেদেনও হচ্ছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তদারকি ব্যবস্থা শক্তিশালী নয়। যে কারণে মানি লন্ডারিংয়ের ঝুঁকি রয়েছে।

তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে মানি লন্ডারিং অনেক ক্ষেত্রেই প্রতিরোধ করা সম্ভব। কিন্তু বাংলাদেশে সব ক্ষেত্রে এটি নেই। যেসব খাতে মানি লন্ডারিং হতে পারে সেসব খাতে অনলাইনে তদারকির ব্যবস্থা করার সুপারিশ করেছে এপিজি।

ব্যাংক, বীমা, অ্যান্টি মানি লন্ডারিং বিধিমালার আওতায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংককে সরবরাহ করার বিধান রয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান সেগুলো করেও। কিন্তু এগুলো খতিয়ে দেখা হয় কম। অনেক প্রতিষ্ঠান এসব তথ্য দেওয়ার আওতায় নেই। সেগুলোতেও মানি লন্ডারিংয়ের ঝুঁকি রয়েছে।

বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট এখনো অনলাইনে পুরোপুরি কাজ করতে পারছে না। সব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এটির অনলাইন যোগযোগ নেই। যে কারণে তাৎক্ষণিকভাবে যেমন তথ্য পাচ্ছে না, তেমনই সেগুলো পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্তও নিতে পারছে না।

মানি লন্ডারিংয়ের ঝুঁকিপ্রবণ ব্যক্তিদের বেশিরভাগই রাঘববোয়াল। এরা সব সময়ই ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকেন। তাদের তদারকি করা খুবই কঠিন। যদি তাদের তদারকির আওতায় আনা যায়, তাহলে মানি লন্ডারিংয়ের ঝুঁকি অনেকাংশেই কমে যাবে বলে মনে করে এপিজি।

দেশের বিমানবন্দর, সমুদ্র ও স্থল বন্দরগুলোতে নগদ মুদ্রা, মূল্যবান ধাতব বা তরল পদার্থ শনাক্তকরণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। ফলে এসব পণ্যের মাধ্যমেও মানি লন্ডারিং হতে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এ তসলিম আহমেদ বলেন, বিদেশে টাকা পাচার করার কারণগুলো অনুসন্ধান করতে হবে। অন্যান্য দেশে বিনিয়োগ সুবিধা এবং নাগরিক সুবিধা বেশি পেলে সেখানে টাকা পাচারের প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। তাই বাংলাদেশের সঙ্গে সেসব দেশের লেনদেনের বিষয়ে নজর রাখতে হবে। এ ছাড়া পর্যাপ্ত নাগরিক সুবিধা প্রদান করাসহ দেশেই বিনিয়োগের পরিবেশ সৃষ্টি হলে টাকা পাচার হ্রাস পাবে। সূত্র: আমাদেরসময়