স্টাফ রিপোর্টার ॥ আবারো চালু হচ্ছে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সরাসরি উড়োজাহাজ চলাচল। চলতি সপ্তাহে এ বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হবে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সূত্রে জানা যায়, ১৫ আগস্ট ওয়াশিংটনে দুই দেশের প্রতিনিধি দল সরাসরি উড়োজাহাজ চলাচলে চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে একমত হয়। শনিবার ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মোজিনা জানান, চলতি সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে মুক্ত আকাশ বিমান চলাচল চুক্তি সই হতে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ ব্যাপক সম্ভাবনার দেশ। এ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে সবার মধ্যে সমস্যা সমাধানের মানসিকতা তৈরি করতে হবে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর জানায়, এ চুক্তির মাধ্যমে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক সম্পর্ককে জোরদার করাসহ বাণিজ্য এবং যোগাযোগ বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এতে দুই দেশের আকাশসীমা বা এর বাইরে অন্য দেশে উড়োজাহাজ সেবা দিতে পারবে। এছাড়া উড়োজাহাজ ব্যবস্থাপনা ঠিক করবে, দুই দেশের মধ্যে নিজ নিজ দেশের উড়োজাহাজ কতবার যাওয়া-আসা করবে। এছাড়া কী ধরনের উড়োজাহাজ ব্যবহার করা হবে বা এ উড়োজাহাজগুলোর জন্য কী ধরনের ভাড়া নির্ধারণ করা হবে তা এ চুক্তির মধ্যে উল্লেখ থাকবে।
প্রসঙ্গত, ফ্লাইট নিরাপত্তায় দুর্বলতার কারণে ২০০৯ সালে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষকে দ্বিতীয় ক্যাটাগরির নিয়ন্ত্রণ সংস্থা হিসেবে চিহ্নিত করে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অথরিটির (এফএএ)। ডাউন গ্রেডেড ক্যাটাগরি-২ থাকায় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বা সিভিল এভিয়েশন কোনো উড়োজাহাজই চার বছর ধরে সে দেশে প্রবেশের অনুমতি পাচ্ছে না। ফলে থমকে রয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ঢাকা-নিউইয়র্ক রুটের ফ্লাইট চালুর উদ্যোগ।
ক্যাটাগরি-১-এ উন্নীত দুটি গুরুত্বপূর্ণ শর্তের মধ্যে রয়েছে— সিভিল এভিয়েশনের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন এবং নিজস্ব অর্গানোগ্রাম (জনবল কাঠামো) অনুযায়ী জনবল নিয়োগ করা। এছাড়া অন্য শর্তের মধ্যে রয়েছে সিভিল এভিয়েশনকে মার্কিন ট্রান্সপোর্টেশন সিকিউরিটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (টিসিএ) সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স নিতে হবে, কমপক্ষে চারজন অভিজ্ঞ সেফটি ইন্সপেক্টর নিয়োগ দেয়ার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলকারী বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলোর সেফটি স্ট্যাটাস উন্নীত করতে হবে এবং বিমানবন্দরে জরুরি ভিত্তিতে ল্যান্ডিং ইকুইপমেন্ট, রাডার, আইএলএস, ডিভিওয়্যার, ডিএমই, এএফটিএন, ওয়েদার অবজারভেশন ব্যবস্থার উন্নতি করতে হবে।
সিভিল এভিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, ক্যাটাগরি-১-এ উন্নীত হতে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ এফএএ প্রায় সবগুলো শর্তই পর্যায়ক্রমে পালন করছে। এরই মধ্যে বিমানবন্দরের ল্যান্ডিং ইকুইপমেন্ট, রাডার, আইএলএসসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা উন্নত করা হয়েছে।
এর আগে ২০১১ সালের ১০ ডিসেম্বর সৌদি আরবের জেদ্দায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (আইকাও) এয়ার সার্ভিসেস নেগোসিয়েশন কনফারেন্স (আইসিএএএন) চলাকালে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব ট্রান্সপোর্টেশনের একটি খসড়া এয়ার সার্ভিস চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ওই চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, শিগগিরই এ বিষয়ে চূড়ান্ত চুক্তি হলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ঢাকা-নিউইয়র্ক ফ্লাইট চালুর প্রক্রিয়া শুরু করতে পারবে।
জানা গেছে, এ চুক্তির মাধ্যমে দুই দেশের সিভিল এভিয়েশনের নিরাপত্তার বিষয়টি জুড়ে দেয়া হয়েছে। এর ফলে এক দেশের মাটি ব্যবহার করে অন্য দেশে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারবে না এ ধরনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। চলাচলকারী উড়োজাহাজের মান ও এর নিরাপত্তা বা বৈমানিকের মান বা এর নিরাপত্তা দুই দেশের সমমান হতে হবে। দুই দেশ পর্যায়ক্রমে এ বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করে মতামত প্রকাশ করবে। দুই দেশের উড়োজাহাজ সংস্থাই যেকোনো দেশে একই ও সমমানের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবে। এছাড়া নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিয়ে চুক্তির পরিবর্তন, পরিবর্ধন বা বাতিল করার অধিকার রাখা হয়েছে।