স্টাফ রিপোর্টার ॥ মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাংসদ সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীকে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার এ রায় ঘোষণা করেন বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে গণহত্যা, হত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুট ও দেশান্তরে বাধ্য করাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ২৩টির মধ্যে ৯টি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হলেও ৫ টি প্রমাণ করতে পারেননি প্রসিকিউশন। বাকি অভিযোগগুলো সাী না থাকায় কোন মন্তব্য করেননি ট্রাইব্যুনাল।
বিএনপির কোনো নেতার বিরুদ্ধে এটাই হলো মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় প্রথম রায়। এর আগে সাবেক ও বর্তমান মিলিয়ে জামায়াতের ছয় নেতার বিরুদ্ধে রায় দেওয়া হয়েছিল।
সাকা চৌধুরীর মামলায় উভয়পরে শুনানি ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে গত ১৪ আগস্ট রায় ঘোষণার জন্য অপেমাণ (সিএভি) রাখা হয়।
মামলার শুনানিতে প্রসিকিউশনের প থেকে সাকা চৌধুরীর সর্বোচ্চ শাস্তির আবেদন করা হয়। গণহত্যা, হত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুট ও দেশান্তরে বাধ্য করাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ২৩টি অভিযোগের মধ্যে ১৭টিতে স্যা ও যুক্তি উপস্থাপন করেছে প্রসিকিউশন।
২০১১ সালের ১৪ নভেম্বর সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়। একই বছরের ১৮ নভেম্বর আনুষ্ঠানিক এ অভিযোগ আমলে নিয়ে ২৩টি অভিযোগে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
২০১২ সালের ১৪ মে প্রসিকিউশনের স্যাগ্রহণ শুরু হয়ে গত ২৮ জুলাই তা শেষ হয়। প্রসিকিউশনের ৪১ জন এবং আসামিপে চার জনের জবানবন্দি নেয়া হয়।
একাত্তরের এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে ৪৩৭ ব্যক্তিকে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকা ছাড়াও চট্টগ্রামের রাউজানের শাকপুরা, ঊনসত্তরপাড়াসহ বিভিন্ন স্থানে গণহত্যা চালানোরও অভিযোগ রয়েছে সাকার বিরুদ্ধে। এসব অপরাধ সাকা চৌধুরীর উপস্থিতি ও নির্দেশে এবং পাকিস্তানি সেনাদের মাধ্যমে সংঘটিত হয়।
অত্যাচার-নির্যাতন ও হত্যার েেত্র চট্টগ্রামে সাকা চৌধুরীর বাড়িকে ‘গুডস হিল’ টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এখানে মুক্তিযোদ্ধা, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন, শিল্পী-সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও নারীদের ধরে নিয়ে নির্যাতনের পর হত্যা করা হতো বলে প্রসিকিউশনের অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
২০১০ সালের ২৬ জুন হরতালের আগের রাতে রাজধানীর মগবাজার এলাকায় গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় একই বছরের ১৬ ডিসেম্বর সাকা চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তীতে ১৯ ডিসেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক দেখানো হয়। এরপর থেকে তিনি কারাগারে।
ওই বছরের ১৪ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হলে ১৭ নভেম্বর তা আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। ২০১২ সালের ৪ এপ্রিল ট্রাইব্যুনাল-১ তার বিরুদ্ধে ২৩টি অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন। ওই বছরের ১৪ মে ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের জবানবন্দির মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপরে স্যা গ্রহণ শুরু হয়। এরপর দীর্ঘ প্রায় ১৫ মাস ধরে চলা স্যা গ্রহণ শেষ হয় চলতি বছরের ২৪ জুলাই। এ সময়ের মধ্যে তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ রাষ্ট্রপে স্যা দেন ৪১ জন, আসামিপে চারজন। ২৮ জুলাই থেকে যুক্তি উপস্থাপন শুরু হয়ে ১৪ আগস্ট তা শেষ হয়।
২৩ অভিযোগ: সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলায় ২৩টি অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে একাত্তরের ১৩ এপ্রিল কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠাতা নূতন চন্দ্র সিংহ হত্যাকাণ্ড; চট্টগ্রামের মধ্য গহিরা, জগৎমল্লপাড়া, সুলতানপুর বণিকপাড়া, ঊনসত্তরপাড়া, শাকপুরা প্রভৃতি গ্রামে গণহত্যার অভিযোগ। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ অনুসারে, চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানাধীন সাকা চৌধুরীর পৈতৃক বাড়ি গুডস হিল একাত্তরে ছিল একটি নির্যাতন কেন্দ্র। অনেক ব্যক্তিকে সেখানে ধরে নিয়ে আটকে রেখে নির্যাতন ও হত্যা করা হয়। এ ছাড়া হিন্দু জনগোষ্ঠীকে নিপীড়নে পাকিস্তানি সেনাদের সক্রিয়ভাবে সহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে।