স্টাফ রিপোর্টার ॥ একদলীয় নির্বাচন প্রতিহত করতে ব্যবসায়ীদেরও ভোটকেন্দ্র ভিত্তিক সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটি গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন বিরোধী দলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ ব্যবসায়ী পরিষদ আয়োজিত মতবিনিময় ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। খালেদা জিয়া বলেন, সরকার একদলীয় নির্বাচনের করতে গেলে প্রতিহত করতে সকলকে আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা সবাই এক। দেশ ও প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করতে হবে। আসুন, সারাদেশে ভোটকেন্দ্র ভিত্তিক সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটি গঠন করি। আর মাত্র কয়েকটি দিন। ইনশআল্লাহ, সামনে সুদিন আসবে। খালেদা জিয়া বলেন, দেশের গণতন্ত্র আজ চোরাবালিতে হারিয়ে যেতে বসেছে। আসুন সবাই মিলে এ রুগ্ন গণতন্ত্রকে সারিয়ে তুলতে কাজ করি। শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে দাবি আদায় করি। জনগনের ভোট আজ বিপন্ন। শাসকদল নিজেদের নিজেদের ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করতে সংবিধানকে কেটে কুটে কলঙ্কময় করেছে। তাই সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সম্ভাবনাময় এ দেশের আকাশ থেকে কালোমেঘ সরাতে হবে। তিনি বলেন, বিগত ৫ বছর ধরে কল্পিত উন্নয়নের কথা শুনতে শুনতে মানুষের কানঝালাপালা হয়ে গেছে। আপনারা যারা ভুক্তভোগি তারা ভালো করেই জানেন। মানুষকে যারা সম্মান করতে জানে না তাদের মর্যাদার আসন থেকে নামিয়ে দেয়ার সময় এসেছে। খালেদা জিয়া বলেন, দেশের সুদৃঢ় গণতন্ত্র ও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য আমরা নিবৃত্তে নীতিমালা ও পরিকল্পনা নির্ধারণের কাজ করছি। আমরা নতুন ধারার রাজনীতি ও সরকার গঠনে অঙ্গিকারাবদ্ধ। কথামালা নয় কাজেই প্রমাণ দিতে চাই। আমরা মেধাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেব। সবার মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে সিদ্ধান্ত নেব। দলীয়করণ ও সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দেব না। সবমতের সমন্বয়ে গড়ে তুলব জাতীয় ঐক্য। ঘৃণা ও বিভেদের নয়, রাজনীতি হবে জনকল্যাণ ও ঐক্যের। নির্বাচনের আগে বড় বড় প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনের পর প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের রেওয়াজ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এখনই সব কথা বলতে চাই না। সময়ই বলে দেবে কি করতে চেয়েছি, কতটুকু করতে পেরেছি। তিনি বলেন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজন এখন সময়ের চাহিদা। দেশবাসীর প্রধান দাবি। এটাই আজ জাতীয় ঐক্য। তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, সরকারকে এখনও দায়িত্বশীল হবার ও মানুষের হৃদস্পন্দন বুঝবার আহ্বান জানাচ্ছি। সময় দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। হানাহানির পথ থেকে সরে আসুন। খালেদা জিয়া বলেন, বর্তমানে দেশের গণতন্ত্র আক্রান্ত। বিরোধীদলের রাজনীতি আক্রান্ত। এ আক্রান্ত সময়েও দেশের স্বার্থে আমরা দ্বন্দ্ব-সংঘাত এড়িয়ে চলেছি। কারণ আল্লাহর উপর আমাদের পূর্ণ বিশ্বাস ও জনগনের উপর আস্থা রয়েছে। দেশের মানুষ এখন সাদা আর কালো, ভালো আর মন্দ বুঝতে পারছে। খালেদা জিয়া বলেন, দলীয় বিবেচনায় ব্যাংক ঋণ দেয়া হচ্ছে। দলীয় লোকদের ব্যাংক ঋণ দেয়ার মাধ্যমে লুণ্ঠিত হচ্ছে ব্যাংক। বেসরকারি ব্যাংক লুট হচ্ছে। রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলো দেউলিয়া হয়ে পড়েছে। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দেশের অর্থনৈতিক খাত। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের সময়ে দলীয় বিবেচনায় ব্যাংক ও বীমার লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, হঠাৎ করে তারা এতটাকা কোথায় পেল? এর মাধ্যমে দেশের ব্যাংক-বীমাখাতে যেমন বিশৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছে তেমনি বিদেশে পাচার হচ্ছে অর্থ। খালেদা জিয়া বলেন, সরকার কঠিন শর্তে বিদেশ থেকে ঋণ নিচ্ছে। ঋণ পরিশোধের সময় সীমা কমিয়ে আনা হয়েছে। এতে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়বে। ব্যবসায়ী ও ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোকে দলীয়করণ করা হচ্ছে। সরকারের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না নোবেলজয়ী গ্রামীণ ব্যাংকও। তিনি বলেন, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে এখন ১০-১২ঘন্টা সময় লাগে। ভাড়া বেড়েছে কয়েকগুন। ঢাকার যানজটের কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। সারাদেশে সব এলাকার অবস্থাই একই। সরকারি দলের লোকজনের লুটপাট ও চাদাবাজির কারণে দ্রব্যমূল্য বেড়েছে। বেড়েছে দারিদ্রের হার। এ সময় খালেদা জিয়া ২০০৫ সাল থেকে ২০১২ সালের দারিদ্র বিমোচন সংক্রান্ত নানা তথ্য উপাত্ত তুলে ধরেন। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, বর্তমানে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি ভয়াবহ অবস্থান ধারণ করেছে। বর্তমান সরকারের প্রথম চার বছর নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ ছিল। আমাদের সময়ে বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানে যে ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্টের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল তাও বন্ধ করে দিয়েছে। এখন বিদ্যুতের জন্য নতুন কলকারখানাগুলো উৎপাদনে যেতে পারছে না। নতুন তৈরি এ্যাপার্টমেন্টগুলো বিক্রি হচ্ছে না। খালেদা জিয়া বলেন, সরকারী দলের লোকজন মধ্যসত্ত্বভোগী চক্র গড়ে তুলেছে। তাই কৃষিউৎপাদন পন্যের দাম বাড়লেও বাড়েনি শস্যমূল্য। শস্যমূল্য যা বেড়েছে তাও চলে যাচ্ছে মধ্যসত্ত্বভোগীদের হাতে। কৃষক কিছুই পাচ্ছে না। সরকার বলেছিল, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রনে রাখবে। কিন্তু এ সরকারের আমলে অব্যাহতভাবে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। উল্টো বিদেশী বিনিয়োগ কমে গেছে। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন খুবই খারাপ। সরকার দলীয় অপরাধীরা ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রন করছে। প্রতিদিনই ব্যবসায়ীরা খুন হচ্ছে। প্রতিদিনই খুন-গুম হচ্ছে। এতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে ব্যবসা-বাণিজ্যে। বিচার বিভাগ ও পুলিশে দলীয়করণের কারণে এখন ন্যায় বিচার লঙ্ঘিত ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। দেশে এখন ন্যায় বিচার নেই। খালেদা জিয়া বলেন, হাজার প্রচারণা চালিয়ে জনগনকে দুঃশাসন ভুলানো যাবে না। শেয়ারবাজারে লুণ্ঠনের শিকার হওয়ার লোকজনকে ভোলানো যাবে না। খুন-গুমের শিকার পরিবারগুলোকে ভোলানো যাবে না। বিদ্যুতের অভাবে কলকারখানা চালু করতে না পারা ব্যবসায়ীদের ভোলানো যাবে না। মানুষ বিদ্যুৎ চায়, মেগাওয়াট-কিলোওয়াটের ধাধা নয়। বিরোধী নেতা বলেন, দেশের রাজনীতি ও অর্থনীতির এমন মলিন ছবি মুছে দিয়ে আনতে হবে উজ্জ্বল চিত্র। বিরোধী দলীয় নেতা ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা আমাদের উপর আস্থা রাখতে পারেন। সীমিত সামর্থ নিয়েও অতীতে আমরা শিল্প-ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্থনীতিকে গতিশীল করতে কি কি করেছি আপনারা জানেন। বিচারের ভার আপনাদের হাতেই দিলাম। বিএনপি সবসময় ব্যবসা বান্ধব সরকার পরিচালনা করেছে। আপনাদের আজকের দাবি মনে রেখেই সামনের দিনে আমরা সরকার গঠন করলে সিদ্ধান্ত নেব। ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে আমরা ব্যবসা করব না। প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করে ব্যবসাবান্ধব দেশ ও সরকার প্রতিষ্ঠা করব।