স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে টার্গেট ছিল ৪০০ রান করার। কিন্তু তা করতে ব্যর্থ হয়েছেন ব্যাটসম্যানরা। এরপর বাংলাদেশ দলের টার্গেট ছিল নিউজিল্যান্ডকে তিন শ’ রানের মধ্যে আটকে দেয়া। কিন্তু তৃতীয় দিন শেষে বাংলাদেশের সেই হুমকিকেও উড়িয়ে দিয়ে তাদের সংগ্রহ ৮ উইকেট হারিয়ে ৪১৯ রান। তারা এগিয়ে ১৩৭ রানে। বলা চলে বাংলাদেশের সব হিসাব উলটে দিয়ে ঢাকা টেস্টে এগিয়ে আছে নিউজিল্যান্ড দল। গতকাল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে ৩ উইকেটে ১০৭ রান নিয়ে খেলা শুরু করে নিউজিল্যান্ড। তৃতীয় দিন ৯৯.৩ ওভার ব্যাট করে ৫ উইকেট হারিয়ে ৩১২ রান তুলেছে সফরকারীরা। ঢাকা টেস্টে গতিপথ দ্বিতীয় দিন শেষেও বাংলাদেশের অনুকূলে ছিল। তবে তৃতীয় দিনের মধ্য ভাগের পর পাল্টে যায় সব।
গতকাল সাকলে রস টেলরের বিদায় স্বস্তি দিয়েছিল মুশফিকদের। তবে উইলিয়ামসন-এন্ডারসন এই স্বস্তিকে শঙ্কায় রূপ দিতে দেরি করেননি। সেঞ্চুরি করলেন এন্ডারসন। কেন উইলিয়ামসন হাফ সেঞ্চুরির ধারাটা ধরেই রাখলেন।
শেষ বিকালে ওয়াটলিং ও সোধি ছড়ালেন চূড়ান্ত আতঙ্ক। দুজনেই পূর্ণ করেন হাফ সেঞ্চুরি। ওয়াটলিংয়ের ৫ম এবং সোধির প্রথম। নবম উইকেটে অপরাজিত এই জুটি তুলে নিয়েছে ৮৪ রান। সকালে টেইলর পঞ্চাশতম টেস্টে ৫৩ রান করে স্লিপে নাসির হোসেনের হাতে ক্যাচ দেন সাকিবের বলে। কিন্তু তার বিদায়ের পর আগের দিন বাংলাদেশের উদাহরণ অনুসরণ না করে ‘টেস্ট’ মেজাজেই খেলতে থাকে নিউজিল্যান্ড। উইকেটে টিকে থাকতে হয় কিভাবে তা যেন বাংলাদেশ দলকে শেখাতে শুরু করেন উইলিয়ামসন। অন্যপাশে আরও এক ধাপ এগিয়ে থাকেন ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি হাঁকানো কোরি এন্ডারসন। এই জুটির দৃঢ়তায় প্রথম সেশনে যোগ হয় ১২৪ রান। তবে উইলিয়াসনকে ডিপ মিডউইকেটে তামিম ইকবালের ক্যাচে পরিণত করে ৪২ ওভার ৪ বলের জুটি ভাঙেন আবদুর রাজ্জাক। কিন্তু এর আগে পঞ্চম উইকেটে ১৪০ রান করে নিউজিল্যান্ডকে বড় সংগ্রহের ভিত গড়ে দেন তারা। ১৫১ বলে ৬টি চারের মারে ৬২ রান করে উইলিয়ামসন বিদায় নেন।
এরপর বেশিক্ষণ টেকেননি এন্ডারসনও। চট্টগ্রাম টেস্টে মাত্র ৯ রান করা বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান আল-আমিন হোসেনের প্রথম টেস্ট শিকারে পরিণত হওয়ার আগে খেলেন ১১৬ রানের ঝকঝকে এক ইনিংস। ১৭৩ বলের ইনিংসে ১৩টি চার ও ২টি বিশাল ছক্কা হাঁকান এই ব্যাটসম্যান। এরপর ব্রেসওয়েলকে ১৭ রানে আউট করে টেস্টে দশমবারের মতো ইনিংসে পাঁচ উইকেট শিকার করেন সাকিব। একটু পরেই অনিয়মিত স্পিনার নাসির হোসেন ফিরিয়ে দেন ওয়াগনারকে। একটু স্বস্তি ফিরে এসেছে হয়তো ভেবেছিলেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম। কিন্তু সেই স্বস্তি কেড়ে নেন প্রথম টেস্টে দশম উইকেটে শতরানের জুটি গড়ে সেঞ্চুরি করা উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান ওয়াটলিং। মাত্র দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামা সৌধি অবশ্য সোহাগ ও তামিমের হাতে একবার করে জীবন পেয়েছেন। টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটিতে পৌঁছানো সোধি শেষ পর্যন্ত ৫৫ রানে অপরাজিত আছেন। তার ৬৭ বলের ইনিংসে রয়েছে ৭টি চারের মার। অন্যদিকে ওয়াটলিংয়ের অপরাজিত ৫৯ রান এসেছে
১৫৬ বলে।
স্কোর কার্ড
বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড
শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়াম, মিরপুর।
২য় টেস্ট, ৩য় দিন
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ২৮২
নিউজিল্যান্ড ১ম ইনিংস: (২য় দিন শেষে, উইলিয়ামসন ২৮*, টেইলর ৩৭*)
উইলিয়ামসন ক তামিম ব রাজ্জাক ৬২ ১৫১ ৬ ০
টেইলর ক নাসির ব সাকিব ৫৩ ৭৯ ৫ ০
অ্যান্ডারসন ক সোহাগ ব আল-আমিন ১১৬ ১৭৩ ১৩ ২
ওয়াটলিং অপরাজিত ৫৯ ১৫৬ ৪ ০
ব্রেসওয়েল ক মুশফিক ব সাকিব ১৭ ৪৫ ২ ০
ওয়াগনার ক আইউব ব নাসির ৮ ২৬ ১ ০
সোধি অপরাজিত ৫৫ ৬৭ ৭ ০
অতিরিক্ত: (ব ৪, লব ৪, ও ২, নব ১) ১১
মোট: (৮ উইকেট; ১৩৩ ওভার) ৪১৯
উইকেট পতন: ৪-১২৭ (টেইলর), ৫-২৬৭ (উইলিয়ামসন), ৬-২৮৭ (অ্যান্ডারসন), ৭-৩১৮ (ব্রেসওয়েল), ৮-৩৩৫ (ওয়াগনার)।
বোলিং: আল-আমিন ১৬-৩-৫৮-১, সোহাগ ৩৪-৮-৭৭-০, সাকিব ৪০-১৩-৯৭-৫, রাজ্জাক ১৯-১-৮৪-১, রুবেল ১৮-১-৮১-০, নাসির ৩-১-৭-১, মমিনুল ৩-০-৭-০।
অবস্থা: নিউজিল্যান্ড ১৩৭ রানে এগিয়ে, হাতে ২ উইকেট।