বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক॥ সৌভাগ্যের রজনী পবিত্র শবেবরাত। মহান আল্লাহর রহমত পাওয়ার আশায় নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির, ওয়াজ ও মিলাদ মাহফিলসহ এবাদত-বন্দেগীর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ পালন করছে পবিত্র লাইলাতুল বরাত। সারারাত এবাদত-বন্দেগীসহ মুসলিম উম্মাহর সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশ্বের মুসলমান সম্প্রদায় বিশেষ মোনাজাত ও দোয়াখায়ের করবেন। পবিত্র শবেবরাত উপলক্ষে ধর্মপ্রাণ নারী-পুরুষ নফল রোজা পালন করেন। পবিত্র শবেবরাত উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন।
মুসলমানদের বিশ্বাস, মহিমান্বিত এই রাতে মহান আল্লাহতায়ালা মানুষের ভাগ্য অর্থাৎ তার নতুন বছরের ‘রিজিক’ নির্ধারণ করে থাকেন। বাসাবাড়ি ছাড়াও মসজিদে মসজিদে রাতভর চলবে নফল নামাজ, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, ওয়াজ মাহফিল ও অন্যান্য এবাদত-বন্দেগী। এ ছাড়াও এই পবিত্র রাতে মুসলমানরা মৃত পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজনসহ প্রিয়জনদের কবর জেয়ারত করে থাকেন।
মহিমান্বিত এ রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা বিগত জীবনের সব ভুল-ভ্রান্তি, পাপ-তাপের জন্য গভীর অনুশোচনা করে মহান আল্লাহ তাআলার দরবারে কায়মনো বাক্যে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। রোজা রাখা ও নফল নামাজ, জিকির-আজকার, পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে বিনম্র প্রার্থনা করেন ভবিষ্যৎ জীবনে পাপ-পঙ্কিলতা পরিহার করে পরিশুদ্ধ জীবনযাপনের জন্য।
তাছাড়া বর্ষপঞ্জিতে শাবান মাস একটি গুরুত্বপূর্ণ মাস। রাসূল (সা:) এ মাসে বেশি-বেশি নফল রোজা রাখতেন। রমযানের প্রস্তুতির মাস হিসেবে তিনি এ মাসকে পালন করতেন। শবে বরাতের বরকত, ফযীলত ও মর্যাদা নিয়ে বেশকিছু হাদীসের বর্ণনা প্রচলিত আছে। একটি সহীহ হাদীসে বলা হয়েছে, “আল্লাহ তায়ালা মধ্য শাবানের রাতে তাঁর সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টিপাত করেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সকলকে ক্ষমা করে দেন। আটজন সাহাবীর সূত্রে বিভিন্ন সনদে এই হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে।
এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, শবে বরাত ফযীলতময় এবং এ রাতে আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে ক্ষমা করে থাকেন। তবে ক্ষমা পাওয়ার শর্ত হলো শিরক ও বিদ্বেষ থেকে মুক্ত থাকা। এ দু’টি বিষয় থেকে যারা মুক্ত থাকবেন তারা কোন অতিরিক্ত আমল ছাড়াই এ রাতের বরকত ও ক্ষমা লাভ করবেন। কিন্তু শিরক ও বিদ্বেষ থেকে মুক্ত হতে না পারলে অন্য আমল দিয়ে ঐ রাতের বরকত ও ক্ষমা লাভ করা যাবে না। দু:খের বিষয় হলো, শবেবরাতে আমরা অনেক নফল আমল করলেও ঐ দু’টি শর্ত পূরণের চেষ্টা খুব কম মানুষই করে থাকি।
বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ বিভিন্ন বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিও এ উপলক্ষে ধর্মীয় নানা অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছে। এদিকে দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে জাতীয় দৈনিকগুলোতে বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। পবিত্র শবেবরাত উপলক্ষে শনিবার সরকারি ছুটি।
পবিত্র লাইলাতুল বরাত (শবেবরাত) উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন ইবাদত বন্দেগীসহ ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। শুক্রবার বাদ মাগরিব থেকে বাদ ফজর পর্যন্ত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে তেলওয়াতে কালাম পাক, আলোচনা ও ওয়াজ মাহফিল এবং বিশেষ মোনাজাত। পবিত্র শবেবরাত উপলক্ষে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে শুক্রবার মাগরিবের নামাজের পর থেকে তেলওয়াতে কালাম পাক করেন ক্বারী মোহামামদ হারুন। শবেবরাতের ফজিলত বিষয়ে ওয়াজ করেন মাওলানা আবু জাফর মো. হেলাল উদ্দিন। ফজরের নামাজের পর ভোর ৫টায় আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন হাফেজ মাওলানা মিজানুর রহমান।